জৈন্তাপুরে ওয়াজ মাহফিল নিয়ে সংঘর্ষে নিহত-৩,আহত শতাধিক

    0
    170

    “ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ীসহ শতাধিক ঘরবাড়ী পুড়ে ছাই,পুলিশ মোতায়েন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন৷৩সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৭ফেব্রুয়ারি,রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধিঃ   জৈন্তাপুর উপজেলার আমবাড়ী এলাকায় ওয়াজ মহফিলকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে ৩জন নিহত, প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে। ২৬ ফেব্রয়ারী সোমবার দিবাগত রাত ১০টায় এই সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর একটি পক্ষের কয়েক হাজার লোক দেশিয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে আমবাড়ী গ্রামের শতাধিক ঘর বাড়ীসহ কেন্দ্রি গ্রামে অবস্থিত জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমানের বাড়ী পুড়িয়ে দেয়।

    ঘটনায় নিহতরা হলেন- হরিপুর মাদ্রাসার দাওরা হাদিস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ী মুজ্জাম্মিল হোসেন (২৮), আমবাড়ী গ্রামের সাইদুর রহমানের শিশু কন্যা সাদিয়া আক্তার (৩মাস)। অপরদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হরিপুর মাদ্রাসার ছাত্র সিলেট এম.এ.জি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গোয়াইনঘাট উপজেলার সিটিংবাড়ী গ্রামের আব্দুল কাদির (২২) মৃত্যু হয়।

    ২৭ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, এডিসি জেনারেল শহিদুল ইসলাম, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিম, সহকারি কমিশনার(ভূমি) মুনতাসির হাসান পলাশ, জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ খাঁন মোঃ মঈনুল জাকির, অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আনোয়ার জাহিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘর পুড়ানো এবং মারামারির ঘটনায় এডিসি জেনারেল (সার্বিক) কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন।
    সরেজমিন পরিদর্শনে এলাকার জনপ্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও প্রতক্ষ্যদর্শীর সাথে আলাপকালে জানা যায়- স্থানীয় আমবাড়ী জামে মসজিদে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী সোমবার ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ওয়াজ চলাকালে রাত ১০টায় প্রধান অতিথির বক্তব্য কালে হরিপুর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আব্দুস ছালাম এর সাথে আয়োজকদের কথা কাটাকাটি হয়।

    এক পর্যায়ে পূর্ব থেকে অবস্থানে থাকা হরিপুর মাদ্রাসার ৫২ জন ছাত্র ও শিক্ষক ওয়াজ বন্দের চেষ্টা চালালে উভয় পক্ষ সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলে নিহত হন মুজ্জাম্মিল হোসেন অপরদিকে ঘটনার সংবাদ পেয়ে হরিপুর এলাকায় বিভিন্ন মসজিদে মাইকযোগে ওয়াজে হরিপুর মাদ্রাসার শিক্ষকসহ ছাত্র নিহত হওয়ার সংবাদ প্রচার করে সবাইকে সহযোগীতার করার আহবান জানানো হয়।

    তৎক্ষনিক ভাবে গোটা উপজেলা জুড়ে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন কৌওমী মাদ্রাসাপন্থি মুসল্লিরা গাড়ী যোগে দেশিয় অস্ত্র সস্ত্রে সজিত হয়ে আমবাড়ী এলাকার নিরিহ জনসাধারনের বসতবাড়ীতে হামলা করে অগ্নি সংযোগ করে। এতে আমবাড়ী গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ী নিমিষেই আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

    এসময় জীবন বাঁচাতে দৌড়ঝাপ করতে গিয়ে আমবাড়ী গ্রামের সাইদুর রহমানের ৩মাসের শিশু কন্যা সাদিয়া আক্তারের মৃত্যু হয়। এছাড়া আহত হন ছবিলা খাতুন (৬৫), কুলছুমা বেগম (২৬), ফিরোজা রেগম (৩৫), নাছিমা বেগম (৩৫), হুসনা বেগম (৪০), মোহাম্মদ আলী (৮০), মিনারা বেগম (৬০), শফিকুর রহমান (৪০), সাথী বেগম (১৮), মোঃ আব্দুর রহিম (২৮), সানা উল্লাহ (৫৮), জেসনা বেগম (৪০), জাবেদা বেগম (১৫), আনোয়ারা বেগম (৪০), নাছিমা বেগম (৪০), হাসিনা বেগম (৪০), রজির আহমদ (৪০), রেকিয়া বেগম (৫০)।

    হামলাকারীরা বাড়ী ফেরার পথে রাত ৩টায় দিকে জৈন্তাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কেন্দ্রি গ্রামের বাসিন্ধা এখলাছুর রহমানের বাড়ীতে অগ্নি সংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত করে।
    ওয়াজ মাহফিলে সংঘর্ষের সময় হরিপুর মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক আহত হন। তারা হলেন- হেমু পাখিটিখি গ্রামের অব্র“ মিয়ার ছেলে আবুল কালাম (২৩), কানাইঘাট উপজেলার বড়বন্দ গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে এনাম (১৮), জৈন্তাপুর উপজেলার উপরশ্যামপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে মাছুম (২০), দরবস্ত গর্দনা গ্রামের মতসিন আলীর ছেলে রুহুল আমিন (২০), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কামাল বস্তি গ্রামের বদরুল আলমের ছেলে হোসেইন আহমদ  (১৮), গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াক্কুল গ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে আলীম উদ্দিন (২৪), সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রাধানগর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে আশরাফ আলী (১৮), জৈন্তাপুর উপজেলার সেনগ্রামের মুহিবুর রহমানের ছেলে দেলোয়ার (২২), গোয়াইনঘাট উপজেলার লহর গ্রামের আখলু মিয়ার ছেলে শিহাব উদ্দিন (২৩), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কামালবস্তি গ্রামের ডাক্তার শফিকুর রহমানের ছেলে নুরুজ্জামান (২২), জৈন্তাপুর উপজেলার উপরশ্যামপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে ফরিদ আহমদ (২৫), সিলেট সদর জালালাবাদ পাটিনুরা গ্রামের রশিদ আলীর ছেলে মাসুক আহমদ (২২), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মৃত সিকন্দর আলীর ছেলে আব্দুল বাছিত (২৫), জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর উৎলার পার গ্রামের আব্দুর রবের ছেলে মাসুক আহমদ (৪০), জৈন্তাপুর উপজেলার হেমু হাউদপাড়া গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে বিলাল আহমদ (৩৪), কানাইঘাট উপজেলার কাজির পাতন গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে আরিফ আহমদ(২১), জৈন্তাপুর উপজেলার খারুবিল গ্রামের মোঃ আব্দুল্লার ছেলে রেজওয়ান করিম (২০), জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ভিতর গ্রামের আজির উদ্দিনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন(২২), আইয়ুব আলীর ছেলে ফখরুল ইসলাম(২৩), দরবস্ত ডেমা গ্রামের মুনতাসির (২২), নুরুজ্জামানের ছেলে মোহাম্মদ আলী(২৫), জৈন্তাপুর উপজেলার খারুবিল গ্রামের ইস্রাক আলীর ছেলে মাওলানা আব্দুস সালাম (৫৫), গোয়াইনঘাট উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের নুর উদ্দিনের ছেলে নিজাম উদ্দিন (২২), জৈন্তাপুর গ্রামের মাওলানা আজির উদ্দির (৪০), জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত গর্দনা গ্রামের শামসুল হকের ছেলে আব্দুস সালাম (২০)।
    জৈন্তাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান বলেন- “বিগত বৎসর হতে এধরনের ওয়াজ মাহফিল নিয়ে স্থানীয় কৌওমী মাদ্রাসার বিভিন্ন মতালম্বীদের মধ্যে মতপার্থক্য চলে আসছে। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে একাধীকবার বৈঠক হলেও নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হওয়াতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট বিষয়টি হস্তান্তর করা হয়। গতকাল একটি অংশ ওয়াজের আয়োজন করলে অপর অংশের লোকজন ওয়াজ মাহফিলে আক্রমণ করে এ সংঘর্ষের সুত্রপাত ঘটে। কি কারনে তারা আমার বাড়ীতে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে তা আমার বোধগম্য নহে।”
    এবিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিম জানান- ঘটনার পর বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেওয়া হয়।

    ঘটনাস্থল আমবাড়ী গ্রামে তাৎক্ষনিক ভাবে মেডিকেল টিম প্রেরণ করা হয়, হতহতদের নগদ অর্থ সাহায্য এবং তাদের মধ্যে কম্বল ও খাদ্য সামগ্রী বিতরন করা হয়।
    এবিষয়ে জেলা প্রশাসক রাহত আনোয়ার সাংবাদিকদের জানান- এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা স্বার্থে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এলাকার পরিবেশ যাহাতে আর কোন বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হয় সে জন্য স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি সাথে আলাপ করে বিষয়টি মূল কারন উদঘাটনের জন্য ৩সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়েছে।

    এঘটনায় আমবাড়ী এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ী পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং জান মালের ব্যপক ক্ষতি সাধিত হওয়ার কারনে প্রাথমিক ভাবে একটি তালিকা প্রস্তুত করে প্রতিটি পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তা, কম্বল ও খাদ্য সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে। ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমরা সবাই ছুটে এসে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছি এছাড়া সরকারের পক্ষ হতে সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। ঘটনার সাথে যে কেউ জড়িত থাকুক না কেন থাকে আইনের আওতায় আনা হবে।