জৈন্তাপুরের সারী নদীর জল বিষাক্তঃ জলজ প্রানী ধ্বংসের মুখে

    0
    303

    রেজওয়ান করিম সাব্বির,জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি: সিলেটের জৈন্তাপুরের সারী নদীতে বাঁধা নৌকা। পানিতে নেমে তলদেশ খুঁড়ে চলে বালু ও কয়লা উত্তোলন। এই কাজের ফলে নদীর নীল জল গোলা হচ্ছে। পুরো নদী জুড়ে চলে বালু ও কয়লা উত্তোলনের তৎপরতা। উৎস মুখের চিত্র আরও করুন। জেগে উঠা চরে কিংবা হাঁটু সমান পানিতে যত্রতত্র ভাবে গর্ত খুঁড়ে বের করা হচ্ছে কয়লা। বস্তাবন্দী করে নদী তীরেই চলে কেনা বেচা। বাংলাদেশের অন্যতম ‘নীলনদের নদী হিসাবে পরিচিত সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সারী নদী। নদীর একাংশ ও উৎস মুখের লালাখালের প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা। অনেকটা দখলের মতো করে চলছে কয়লা আর বালু উত্তোলনের অবৈধ কারবার। প্রতিদিন শ্রমিকেরা নদী খুঁড়ে কয়লা, বালু উত্তোলন করছে শ্রমিকরা। এ কারণে সারীর উৎসমুখ সহ পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় লালাখাল বিপন্ন হওয়ার মুখে পড়েছে। নদীর জলে থাকতে পারছেনা জলজপ্রানী সহ বিভিন্ন প্রজাতীর মৎস্য সম্পদ। যত্রতত্র খোঁড়া খুঁড়িতে নদী-প্রকৃতি সহ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে নেওয়া হচ্ছে না স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ।
    সরেজমিনে গিয়ে নদী তীরের বাসিন্দারা জানান- পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় কয়লা উত্তোলনের তৎপরতা।প্রায় দুই তিন মাস ধরে নদীর জেগে উঠা চর ও নদীর মধ্যে ভাগে খোঁড়া খুঁড়ি চলায় শ্রমিকরা। এসব খোঁড়া খুড়ির কারনে কোনো কোনো জায়গায় নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়ে পড়ে। বালু ও কয়লার কারবারিরা সংঘবদ্ধ হওয়ায় এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না বলে জানান স্থানীয় লোকজনেরা। কয়লা তোলার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা জানান, তাঁরা কয়লার কারবারিদের মাধ্যমে দৈনিক মুজুরি হিসেবে কাজ করে থাকেন। লালাখালের সঙ্গে সারীর সংযোগ পর্যন্ত কয়লা ও বালু উত্তোলন করতে জনপ্রতি দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে কারাবারিরা দিয়ে আসছে। অথবা উত্তোলিত কয়লা বস্তাবন্দী করার পর কারবারিরা প্রতি বস্তা কয়লা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মূল্য ক্রয় করে ট্রাাকযোগে নিয়ে যান তাদের নিদিষ্ট গন্তব্যে।
    নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়কে জন কারবারি জানান- তাঁদের ব্যবসা মৌসুম ভিত্তিক। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢলের সঙ্গে নদীতে নেমে আসে কয়লা-বালু। শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কমলেই বালুর সঙ্গে নদীর তলায় আটকে থাকা কয়লা উত্তোলন করেন শ্রমিকরা। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৩ মাস কয়লা উত্তোলন এবং ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবসা চলে। জৈন্তাপুরের হর্নি, কামরাঙ্গী, পাখিবিল, লালাখাল গ্রান্ট, থুবাং, কালীঞ্জবাড়ী, গৌরীশঙ্কর গ্রামের ১০ জন বালু-পাথর ব্যবসায়ী লালাখাল ও সারী নদীর বালু-কয়লা উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করেন। সারী হচ্ছে উত্তর পূর্ব সিলেটের অন্যতম সীমান্ত নদী। ভারতের মেঘালয় পাহাড় মাইন্থু ও লেসাকা নদী মিলিত হয়ে লোম নদী নামে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১৩০০ নম্বর আন্তজার্তিক পিলার অতিক্রম করে বাংলাদেশে সারী নদী নামে প্রবেশ করেছে।
    বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন- সারী নদীর উজানে ভারতীয় অংশে উন্মুক্ত কয়লা খনি থাকায় বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির সঙ্গে কায়লার গুঁড়া ভেসে আসে। ভাসমান কয়লার গুঁড়ার জন্য নদীর জল নীল হয়। কয়লার গুঁড়া সংগ্রহ করতে পুরো শুষ্ক মৌসুম চলে নদীর দুই তীর ও তলদেশ ক্ষতবিক্ষত করার তৎপরতা। একদিকে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, অন্য দিকে নীল নদ ঘিরে নদী কেন্দ্রিক পর্যটন সম্ভাবনাও বিপন্ন হচ্ছে।
    সারী নদী বাচাঁও আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদী জানান- ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় সারী নদীর একাধিক উৎসমুখ রয়েছে। শীতকালে শুধু লালাখালে পানি থাকে। এ সময় পর্যটকদের বেড়ানোর স্থানে হিসাবে অন্যন্য রূপ ধারন করে লালাখাল। স্বচ্ছ জলের ধারার জন্য শীতকালে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সারী ও লালাখালের আকর্ষণ অন্যতম। যত্রতত্র খোঁড়া খুঁড়িতে পর্যটকদের নদী দেখার আকর্ষণ বিনষ্ট হওয়ার আশংঙ্কার কথা বলেন। সাধারন মানুষের আক্ষেপ নদী ও পরিবেশের ক্ষতি হওয়ায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে- গত ২০১৫ সনের একটি নির্দেশনা জারি হয়। সেই সাথে সারীর উৎসমুখের লালাখাল থেকে ভাটির দিকে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত নদী সংরক্ষণ করতে উপজেলা প্রশাসনের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা জারি করে, পাশাপাশি পুরো এলাকাকে কেন “প্ররিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা” (ইসিএ) ঘোষন করা হবে না এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট ১৪টি দপ্তরের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
    উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে জৈন্তাাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌরীন করিম বলেন- শীতকালের শুরুতে এ তৎপরতা দেখা দেওয়ায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, কিন্তু এতে স্থায়ী প্রতিকার হচ্ছে না। ইসিএ এলাকা ঘোষনা করতে এখানে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে ২০লক্ষ টাকায় ১টি জল ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে।