জুড়ীতে গাছে গাছে যেন সুন্দরী কমলা নাচে

    0
    493

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০১নভেম্বর,এম এম সামছুল ইসলাম,জুড়ী থেকেঃ “আজি ভালো করিয়া বাজানতো দু’তরা সুন্দরী কমলা নাচে”। সত্যিই এই গানের তালে গাছে গাছে সুন্দরী কমলা নাচে।মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বাতাসে ছড়াচ্ছে কমলা লেবুর সুস্বাদু ঘ্রান। উপজেলার ছোট-বড় কমলা বাগান গুলো থেকে ঋতুরাণী শরতের বাতাসে সর্বত্র ছড়াচ্ছে এ ঘ্রান। বাগানে বাগানে দোল খাচ্ছে পাকা ও আদাপাকা কমলা লেবু।

    প্রকৃতির অপরুপ এ সৌন্দর্যে কৃষকের বুকে যেন অপার আনন্দ। কমলা একটি ছায়া পছন্দকারী বৃক্ষ। ফলদ বৃক্ষের ছায়ায় কমলা চাষাবাদ ভাল হয়। ২৫μ-৩০μ সেঃ মিঃ গড় তাপমাত্রা ও আংশিক ছায়াযুক্ত স্থান ওই চাষাবাদে সবচেয়ে বেশি উপযোগী। বসতবাড়ির উত্তর ও পূর্ব পাশে এর চাষাবাদ ভালো হয়–এমনটাই মনে করেন কৃষক ও উপজেলা কৃষি অফিস। উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়েনের লালছড়া, শুকনাছড়া, ডুমাবারই, লাঠিটিলা, লাঠিছড়া, হায়াছড়া, কচুরগুল।

    সাগরনাল ইউনিয়নের পুটিছড়া ও পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের কালাছড়া এবং জায়ফরনগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরসহ অন্যান্য গ্রামের টিলাবাড়িগুলোতে কমলা, বাতামি লেবু, আদালেবু, শাসনি ও জাড়া লেবুর বাগান রয়েছে। আর এ বাগানগুলোতে পেশা হিসেবে সর্বদা পরিচর্যা করা ওই গ্রামগুলোর মানুষের নেশায় রুপান্তরিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এক একটি বাগান থেকে প্রতি বছর ৩ থেকে ৬ লাখ টাকার ফলন পাওয়া যায়। কমলা চাষে যেমন খরচ কম, তেমন শ্রমও দিতে হয় না —এমনটাই জানিয়েছেন অত্র বাগানগুলোর কৃষকরা। ফলে কমলা চাষে অত্রা লের কৃষকরা আগ্রহী হওয়ার পাশাপাশি সাবলম্বিও হচ্ছেন।

    উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৯১ হেক্টর জমিতে ৮৪টি কমলা বাগান রয়েছে। তন্মধ্যে গোয়ালবাড়ি শতকরা ৮০ভাগ এবং বাকি ২০ ভাগ বাগান অন্যান্য ইউনিয়নে রয়েছে। অত্রা লের অধিকাংশ কমলা খাসী জাতের চাষাবাদ হচ্ছে। ওই বাগান গুলো থেকে চলতি মৌসুমে ৪৫০মেট্রিকটন কমলা লেবুর ফলন প্রাপ্তির প্রত্যাশা রয়েছে। শুকনাছড়া গ্রামের কমলা চাষি ইব্রাহিম আলী (৫৫), আব্দুর রহিম (৫২)সহ অনেকে বলেন, কমলা এক বছর ফলন বেশি হলে অন্য বছর কম হয়। প্রাকৃতির নিয়ম অনুযায়ী এবারে ফলন কম। আল্লাহর রহমতে যা হয়েছে তাতেই আমরা সন্তুষ্ট।

    তিনি আরও বলেন, এবারে কমলার বাজার মূল্য গত বছরের চেয়ে বেশি, আকারও বড় হয়েছে। তিনি এবারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার কমলা বিক্রি করার প্রত্যাশা জানান। সীমান্তবর্তি ডুমাবারই গ্রামের বয়:বৃদ্ধ আব্দুন নূর (৮১), বাবুল মিয়া (৬০) জানান, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ঘুর্নিঝড় ও খরায় কমলা লেবুর ফুল থেকে শুরু হয়ে ফল পাকা পর্যন্ত প্রতিবছরই নষ্ট হয়। আর এবারে বৃষ্টি তুলনামুলক বেশি হওয়ায় অন্যান্য বছরের চেয়ে ফলন কম হয়েছে।

    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার জনান, কমলা একটি ছায়া পছন্দকারী বৃক্ষ । শুধু একক বাগান হলে সান বার্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কৃষকরা যদি সঠিকভাবে সুষম সার ব্যবহার করে এবং পোকা-মাকড় ও রোগ বালাই দমনের জন্য নিয়মিত বালাই নাশক ¯েপ্র ব্যবহার করে তাহলে ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি আকারও বড় হবে। এছাড়াও অত্রা লের কৃষকরা মাল্টা, আদা, জাড়া ও বাতামি লেবু ফলনে আগ্রহ দেখাচ্ছে।