জুড়ীতে অবাধে কাটা হচ্ছে টিলা ঝুঁকিতে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি

    0
    215

    জুড়ী (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতাঃ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ৯টি গ্রামে অবাধে টিলা কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, অপরিকল্পিত ভাবে টিলা কাটার ফলে ওই ৯ গ্রামের ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ টিলার নিচে গড়ে ওঠা ২ শতাধিক বাড়িঘর ভারী বর্ষণ কিংবা ভূকম্পনে টিলা ধসে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

    সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলা সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের মোহাম্মদ নগর, মনতৈল, চম্পকলতা, কালীনগর গ্রামে খান বাহাদুর ওয়াক্ফ এস্টেট ও সরকারি খাস জমির অন্তর্ভুক্ত উঁচু টিলাগুলো, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাছিরপুর, আমতৈল, গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের কচুরগুল, লাঠিটিলা, সাগরনাল ইউনিয়নের হাফিজি দক্ষিণ বড়ডহর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে একটি ভূমিখেকো চক্র অবাধে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, বেশ কয়েকজন মাটি ব্যাবসায়ি অবাধে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করছেন। প্র

    তিদিন এসব এলাকার বিভিন্ন টিলা থেকে প্রতি ট্রাক মাটি ১হাজার ২শ থেকে ১হাজার ৫শ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ওই চক্রের লোকজন দীর্ঘ এক যুগ ধরে কালী নগর, হাফিজি দক্ষিন বড়ডহর গ্রামের বিভিন্ন টিলা কেটে গভীর গর্ত করে চুনামাটি সংগ্রহ করে পলিথিনের বস্তায় ভরে সিরামিক সামগ্রী তৈরির জন্য রাজধানী শহর ঢাকায় পাচার করে আসছে।

    বৃহস্পতিবার টিলার পাদদেশে ৩ শতাধিক বস্তা চুনামাটি স্তুপ অবস্থায় দেখে গেছে। ওই গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মাটি কাটার কারণে এসব ঝুঁকিপূর্ণ টিলার নিচে অপরিকল্পিত ভাবে ২ শতাধিক বাড়ি ঘর গড়ে উঠেছে এবং যে কোনো সময় ধসে পড়ে ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে।

    এসব বাড়ি ঘরে বসবাসকারী অনেকেই জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা ভূমিহীন খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে তাতে বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। তারা আরো বলেন, সামনে আসছে বর্ষা মৌসুম। ওই সময় যে কোনো মুহুর্তে টিলা ধসে দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তারা দুঃখের সাথে জানান, ১৯৯১ ও ৯২ সালে টিলা কাটার সময় কালিনগর গ্রামে মাটি চাপায় ২ শ্রমিক নিহত হন।

    তৎকালীন ও পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাঝে মধ্যে টিলা কাটা বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ওই ভূমিখেকো চক্রটি আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এবং অবাধে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে। জায়ফরনগর ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা রকিব আলী বলেন, খাঁন বাহাদুর ওয়াক্ফ এস্টেট ও সরাকরি খাস ভূমি অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন টিলায় অতীতে বিভিন্ন সময়ে ৩২ জন ভূমিহীনের মধ্যে ১০ শতক করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। অবৈধ টিলা কাটা বন্দে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

    সিলেট বিভাগ উন্নয়ণ সংস্থা (সিবিউস) ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হারিছ মোহাম্মদ বলেন, টিলাকাটার কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজনসহ সমাজের সচেতন ব্যক্তিরা এটি প্রতিরোধ গড়ে তুললে টিলাখেকোরা ভয়ে পালিয়ে যাবে। জুড়ী টি এন খানম সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ অরুন চন্দ্র দাস বলেন, অবাধে টিলা কাটার ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য এবং হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকল্পে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।

    উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুসরাত লায়লা নীরা বলেন, জুড়ীতে টিলা কাটার বিষয়টি আমাকে কেউ অবহিত করেনি। তবে, আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসিম চন্দ্র বণিক বলেন, টিলাকাটার ঘটনায় জড়িত কয়েকজনের নাম সংগ্রহ করেছি এবং ইতোমধ্যে ৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। আর বাকিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।