জুড়ীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে পানি বন্দী লক্ষাধিক মানুষ

0
353
জুড়ীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে পানি বন্দী লক্ষাধিক মানুষ
আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন, এমপি বন্যার্তদের মাঝে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করছেন।অপরদিকে জুড়ীতে বন্যার পানিতে রাস্তা পারাপারের চিত্র।

এম এম সামছুল ইসলাম, জুড়ী ,মৌলভীবাজারঃ কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণ ও জুড়ী নদীর উজানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা বন্যা রুপ নিয়েছে। এখন এ পরিস্থিতি আর অবনতি ঘটেছে। জুড়ী নদীর পার ভেঙ্গে হাওর এলাকায় প্রবল ভেগে পানি প্রবেশ করেছে। এ কারণে উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। রাতে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষজন গরু বাছুর, হাঁস, মুরগিসহ অন্যান্য প্রাণী নিয়ে দূর্ভোগে পড়েছে। অত্রাঞ্চলের বন্যার পানি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি এখন ভয়াবহতার রূপ ধারন করেছে।

বর্তমানে উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্ধি হয়ে অসহায় ও দূর্ভোগের সাথে যুদ্ধ করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন।

এ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু ত্রাণ সহায়তার দরকার তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বন্যার্তদের জন্য প্রসাশনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগীতার প্রয়োজন তা তাদের  পক্ষ থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলে অভিযোগ অত্রা লের পানিবন্ধি মানুষের। বন্যার পানি দিন দিন এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, অত্রা লের বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থান তলিয়ে গেছে। বন্যায় হাজার হাজার ফিশারীর মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আর খামারীসহ অন্যান্য মানুষের গরু-বাছুর নিয়ে থাকার ব্যবস্থা দূরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন বেশিরভাগ মানুষজন মাথা পেতে কোনো রকমে দূর্যোগের মধ্যে বেঁচে আছেন। এমতাবস্থায় তাদের দূর্ভোগের অন্ত নেই!

এছাড়াও ৫শতাধিক পোল্ট্রি খামারের ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় যাদের নৌকা কিংবা কলার ভেলা (বোর) আছে তারা কোনো রকমে অন্যত্র যাতায়াত করতে পারলেও, যাদের নেই তাদের কষ্টের অন্ত নেই! বন্যায় উপজেলার প্রায় সব সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরপরেও মানুষজন বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য অধিক টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সরজেমিনে গিয়ে উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, হাকালুকির উত্তাল ঢেউয়ে মানুষজন ঘর-বাড়িতে থাকতে পারছেনা। তারপরও মানুষজন জীবনকে বাজি রেখে মাচার উপর ঠাঁই নিয়েছে।

এছাড়াও যারা বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছেনা তারা তাদের গরু-বাছুর ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। বন্যা দূর্গতদের জন্য প্রসাশনিকভাবে যে সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র ও ত্রাণ সামগ্রী ব্যবস্থা করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া সুলতানা বলেন, হঠাৎ করে পানি বৃদ্বি পাওয়া মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় বন্যা দূর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ে স্থান দেয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ ও অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি বন্যার্তদের সার্বিক সহযোগিতার ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করিয়েছি।

বুধবার (২২জুন) বিকেলে মৌলভীবাজারের জুড়ী-বড়লেখায় পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রি আলহাজ মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি বন্যা র্দুগতদের সরেজমিন দেখতে আসেন। জুড়ীর নয়াগ্রাম মাদ্রাসা মাঠে বন্যার্তদের মাঝে ত্রান বিতরন করেন তিনি। এসময় তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন “বর্তমান সরকার অসহায় মানুষের পাশে সবসময় আছে। কেউ যেন বন্যার কারণে অসহায় ও অভূক্ত না তাকে সেজন্য দলের নেতাকর্মিদের হুসিয়ারী উচ্চারন করেন।“