জকিগঞ্জে মসজিদের হুজরায় ইমাম কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগ

    0
    287

    “ধর্ষণের ফাঁকে  ফাঁকে নামাজ আদায়, মেয়েটিকে দ্রুত পাওয়ার জন্য মোনাজাতও করেছেন ধর্ষক ইমামশুধু তাই নয় মাইকে মেয়েটি হারানোর ঘোষণা ও দিয়েছেন ওই কথিত ইমাম”

    সিলেটঃ সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার হাজারিচক গ্রামে ১৩ বছরের কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় একটি পাঞ্জেগানা মসজিদের ইমামকে গ্রেফতার করেছে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ। রোববার রাত ৯ টার দিকে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় মসজিদের হুজরা থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
    গ্রেফতারকৃত ইমাম হাফিজ হাসান আহমদ উরুফে আলী হোসেন (২৫) উপজেলার হাজারীচক পশ্চিম জামে মসজিদে ইমামতি করতেন। তিনি একই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের কুতুব উদ্দিনের বড় ছেলে ও বিয়ানীবাজারের একটি মাদ্রাসার ছাত্র।
    ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবা হাজারীচক গ্রামের জুবের আহমদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তার মেয়ে স্থানীয় কলাকুটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। প্রতিদিনের ন্যায় রোববার মেয়েটি স্কুলে যায়। ছুটির পর সকল ছাত্র-ছাত্রী বাড়িতে ফিরলেও তার মেয়ে বাড়িতে ফিরেনি। এরপর আত্মীয় স্বজনসহ তিনি এলাকায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। খোজাখুজির এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে তারা হাজারীচক পশ্চিম জামে মসজিদে আশ্রয় নেন।

    এ সময় মসজিদের ইমামকে ডাক দিয়ে তার কক্ষে প্রবেশ করলে ইমাম লাইটের আলো লোকানোর চেষ্ঠা করলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তখন তারা টর্চ লাইট জ্বালালে নিখোঁজ শিশুর জুতা ও স্কুল ব্যাগ ইমামের কক্ষে দেখতে পান। এতে তাদের সন্দেহ বাড়তে থাকলে মসজিদের হুজরা তল্লাশী শুরু করেন।এক পর্যায়ে ইমামের খাটের নীচে শিশুটিকে পাওয়া যায়।

    খবর পেয়ে এলাকার লোকজন ইমামকে আটক করলে তিনি অকপটে সবার নিকট ওই শিশুটিকে প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে ধর্ষণের কথা শিকার করেন। এ সময় শিশুটির কাপড়ে ধর্ষণের বেশ কিছু আলামত পাওয়া যায়। পরে এলাকাবাসী তাকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে স্থানীয় মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসলে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ সেখান থেকে তাকে আটক করে নিয়ে আসেন।
    বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে আটক ইমাম আলী হোসেন সাংবাদিকদের জানান, রোববার বিকাল ৪টার দিকে শিশুটি স্কুল থেকে আসার পথে তিনি ডাক দিয়ে হুজরায় নিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে পানিতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ান।

    ইমাম স্বীকার করে বলেন, তাকে ধর্ষণ করে হুজরায় থাকা খাটের নীচে রেখে গোসল করে নিজ কক্ষ তালাবদ্ধ করে আসরের নামাজ পড়ান। আসর থেকে মাগরীব পর্যন্ত মসজিদের বাহিরে লোকজন থাকায় বের করে দিতে পারেননি।

    স্থানিয়দের থেকে জানা যায়, মাগরীবের নামাজের পর ওই মেয়েটিকে তাড়াতাড়ি পাওয়ার জন্য দোয়াও করেন তিনি। মসজিদের মাইকেও মেয়েটিকে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে তখন ঘোষণা করা হয়।

    এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়,নিখোঁজ ছাত্রীর পরিবারে লোকজন এ ঘটনায় এলাকায় মাইকিং করেন ও আশপাশ এলাকার ডোবা, পুকুর ও সম্ভাব্য সব স্থানে তাকে খোজেছেন।

    রাত ৮টার দিকে স্কুল ছাত্রীকে ইমামের খাটের নিচে হাত পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।

    এলাকাবাসী আরও জানান, ইমাম স্কুল ছাত্রীটিকে তার কক্ষে আটক রেখে ধর্ষনের ফাকে ফাকে জামাতে নামাজ ও পড়িয়েছেন আসর ও মাগরিবের ।

    এ ব্যাপারে মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব আহমদ চৌধুরী জানান, স্থানীয়দের ধারণা কক্ষবদ্ধ করে ইমাম ছাত্রীটিকে নির্যাতন করেছে।

    জকিগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সৈয়দ ইমরোজ তারেক জানান, আটক ইমাম একজন লম্পট প্রকৃতির লোক। তার বিরুদ্ধে এ ধরণের আরোও অনেক অভিযোগ এলাকায় রয়েছে। এলাকার লোকজন তাকে ধর্ষণের ন্যায় জঘন্যতম একটি অপরাধে পেয়ে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।
    এ প্রসঙ্গে জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, আটক ইমামের বিরুদ্ধে ধর্ষেণের শিকার শিশুটির বাবা জুবের আহমদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

    তিনি বলেন,জিজ্ঞাসাবাদে আটক ইমাম আলী হোসেন পুলিশের নিকট ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।অভিযুক্ত ইমাম হাসানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামালা করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি আরও বলেন মেয়েটিকে রাস্তা থেকে ডেকে মসজিদের কক্ষে নিয়ে ঘুমের ঔষধ খাওয়ায় ওই ইমাম। পরে মেয়েটিকে হাত, পা ও মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে।ইমামের এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।