ছেলে হারা মায়ের বিলাপ-আমার লক্ষিন্দর বাড়ি আইলে…

    0
    261

    ছেলে হারা মায়ের বিলাপ… আমার লক্ষিন্দর বাড়ি আইলে আমার লাইগ্যা নয়া কাপড় আনবো, আজকা সে ওই নয়া কাপড় পইরা বাড়ি আইবো

    সানিউর রহমান তালুকদার, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ):: নিখোঁজ হওয়া মাদ্রাসা ছাত্র নজরুল ইসলাম দীর্ঘ দুই মাস পরে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এঘটনায় ওই এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী উঠেছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় যাত্রীবাহী দুই ট্রেনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৬ জনের মধ্যে মাদ্রাসা ছাত্র ভবঘুরে নজরুলের লাশ ও পরিচয় পাওয়া গেছে।

    গতকাল দুপুরে পুলিশ তার মা বাবাকে মোবাইলে নজরুলের নিহত হবার কথা জানান। ওই দিন দুপুরে নিহতের পরিবারের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। এর আগে সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলস্টেশনের ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের মধ্যে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

    নিহত মাদ্রাসা ছাত্র হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইসলাম পুর গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম (২০) কিভাবে সেখানে গিয়েছে তার মা-বাবা জানেন না। তারা জানান নজরুল ছিলো ভবঘুরে প্রকৃতির লোক। সে শ্রীমঙ্গলের একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই টমটম চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। দুই-তিন মাস পরপর সে বাড়ি আসতো। সঠিক ঠিকানা কাউকে বলতো না, সে কোথায় থাকে।

    নজরুলের মা জোসনা বেগম জানান, “আমার লক্ষিন্দর (ছেলে) দুই মাস আগে আইলো, আবার আইলে আমার লাইগ্যা নয়া কাপড় আনবো, ‘আজকা আমার লক্ষিন্দর নয়া কাপড় পইরা বাড়ি আইবো” বলে তিনি বারবার মুর্চা যাচ্ছিলেন।

    তিনি বলেন, সে টমটম চালালো কখনও নিজের পরিচয় লোকাতো না। সে বলতো আমি গরিবের পুয়া (ছেলে) রিক্সা চালালে শরম নাই। নিহত নজরুলের মা আরো জানান, গতকাল দুপুরে পুলিশ ফোন করে জানাইছে আমরা লাশ আনার লাগি, এখন তার বাপ চাচারা লাশ আনার লাগি যাইবা। নজরুলের বাবা হারুন মিয়া জানান, চার ভাই এক বোনের মধ্যে নজরুল সবার বড় ছিল। গত দুই মাস যাবৎ নজরুলের কোনা খোঁজ-খবর ছিল না। দুই-তিন মাস পরপর বাড়ি আসতো তাই আমরা খোঁজ নেই নাই। “আজকে যে আমার যাদু লাশ হয়ে আসবে সেটা কে জানতো”।

    মঙ্গলবার সকালে নিহতের মা জোসনা বেগমের মোবাইলে শ্রীমঙ্গল থেকে এক লোক মোবাইল ফোনে এ খবর জানিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানার এক পুলিশ অফিসারের মোবাইল নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। সাথে সাথে জোসনা বেগম শায়েস্তাগঞ্জ থানায় ওই পুলিশ অফিসারের মোবাইলে যোগাযোগ করলে পুলিশ ঘটনা নিশ্চিত করে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের মরদেহ শনাক্তের জন্য অনুরোধ করেন।

    সাথে সাথে নিহত যুবকের পিতা হারুন মিয়া ও মাতা জোসনা বেগম শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্ট্রেশনে পৌঁছে তাদের ছেলে নজরুল ইসলাম বলে নিশ্চিত করেছেন।