ছাতকে বিদ্যুৎ লাইনে খাম্বার বদলে জীবন্ত গাছই খুঁটি

    0
    295

    “বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুত” নামের এই মহান উদ্যোগটি অনেক স্থানেই প্রশ্নের সম্মুখীন”

    ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: ছাতকে ১৩টি ইউনিয়ন ও এক‌টি পৌর সভাসহ ১৪টি ইউ‌নিয়‌নে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। খুঁটির দূরত্ব বেশী হওয়ায় সঞ্চালন লাইন ঝুলে আছে বিপদজনকভাবে নীচু অবস্থায়। অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপদ খাম্বার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের খুটি, সুপা‌রি ও কদম গা‌ছে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন ১৩টি ইউনিয়নের ২০ হাজার গ্রাহক। ‌এসব বিদ্যুৎ লাই‌নে দীর্ঘ‌দি‌নে পুরাতন লাইন ঝড় বৃ‌ষ্টি‌তে প‌ড়ে শিক্ষক ,‌শিশু,যুবক,কৃষক, মা‌ঝি সহ ১২ ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হ‌য়ে মৃত বরন ও তিন শতা‌ধিক ছাগল গরু ম‌হিষ বিদুৎ স্পৃষ্ট খু‌টিঁ থে‌কে কা‌রেন্ট মা‌টি‌তে নে‌মে যাবার ফ‌লে এসব ঘটনা ঘ‌টে। বিদুৎ লাই‌নের একা‌ধিক ঘটনা ঘট‌লে ও তা‌দের খোজ খবর কেউ নি‌চ্ছেন না । ৩০বছ‌রের পুরা‌নো ঝু‌কিঁপুন বিদুৎ লাই‌নের পুনসংস্কা‌রের দা‌বি ক‌রে আস‌ছে অর্ধশতা‌ধিক গ্রামবা‌সি ।

    ইসলামপুর, নোয়ারাই ও কালারুকা ইউনিয়‌নে আ‌বেদন নি‌বেদনের প‌রি‌প্র‌ে‌ক্ষি‌তে সংস্কা‌রের কাজ চল‌ছে । ও কো‌নো সুরাহা পা‌চ্ছেন না ২০হাজার বিদুৎ গ্রাহকরা । এসব প্র‌তি‌নিয়ত দুঘটনা থে‌কে রক্ষা চায় ছাতকবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাকা খুঁটির পাশাপাশি বাঁশের খুঁটি দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানা হচ্ছে। কোন-কোন গ্রামের গাছে পেছিয়ে বিদ্যুত লাইন এক স্থান থেকে অন্যস্থানে সঞ্চালন করা হয়। বাঁশের খুঁটি ও গাছ ব্যবহার করে বিদ্যুত লাইন টানার ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছেন মানুষ। পিডিবি মিটার রির্ডার পদে কিছু খন্ডকালীন লোক নিয়োগ দেয়ার পর সাময়িক বিলের কাগজে কিছুটা বৈধতা ফিরে আসলেও বর্তমানে কোন কিছু তোয়াক্কা না করে ডিজিটাল মিটারের অযুহাত দেখিয়ে ভালই দিন কালাতিপাত করছেন তারা । আর এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার সাধারণ গ্রাহকরা। লাভবান হচ্ছেন বিদ্যুৎ বিতরন বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

    জানা য়ায়,নিয়ম অনুযায়ী যে খুটিতে এলটি লাইন থাকে সেই খুটি থেকে ১০০ফিট পর্যন্ত আশেপাশের লোক জন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসতে পারে। বাঁশের খুটি ব্যবহারের কোন নিয়ম নেই। ১৩টি ইউ‌নিয়‌নের ১শ’২৭‌টি ওয়ার্ডে ২ হাজার বাঁশের খুঁটি রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। দুর্নীতির মাধ্যমে স্থানীয় একটি মহলের সহযোগিতায় বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন সরকারের বরাদ্ধকৃত টাকা ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে পাকা খুঁটির পরিবর্তে বাঁশ ও গাছের খুঁটিতে বিদ্যুৎ লাইন দিয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ ক‌রেন।

    ভৌগোলিক বিবেচনায় ইসলামপুর ইউনিয়ন একটি জটিল জনপদ হলেও শিক্ষা ও ব্যবসার ক্ষেত্রে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে এ ইউনিয়নের মানুষ। ছোট-বড় টিলা বেষ্টিত সীমান্ত অঞ্চল হওয়ায় ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চল‌ছে। ভৌগোলিক জটিলতার কারণেই এ ইউনিয়ন যোগযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠে নৌকা। বর্ষায় ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তার হয়ে উঠে এ ইউনিয়নের মানুষের জন্য দুর্ঘটনার কারণ।

    ফলে বিগত দিনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে ১২জ‌নের বেশী লোক। রাতের আঁধারে নৌকা চলাচলের সময় বেশীর ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বিদ্যুৎজনিত কারণে। কোন-কোন স্থানে পানির উচ্চতা থেকে ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক তারের উচ্চতা ৫-৭ ফুটের মধ্যে এসে পড়ে। নৌকার লগিতে লেগে প্রতিবছরই এখানে বিদ্যুতের তার ছেঁড়ার ঘটনা ঘটে থাকে অবা‌ধে।

    ছাতক বিদ্যুৎ দপ্তরের আওতাধিন আলমপুর,মান‌জিহারা,‌মোহন পুর, তেরাপুর,বলারপীরপুর,‌নোয়াগাও ,তাজপুর,মামনপুর, গড়গাও, বেরাজপুর,‌গিলাছড়া, ত‌কিরাই, মৈশাপুর ,রাজার গাও, শৌলা,লম্বাহা‌টি, ভরাংপার, সু‌ফিনগর,নুরুল্লাপুর, শেখকা‌ন্দি,আলাপুর, মোল্লাআতা,কটালপুর, আইলকা‌ড়ি,‌সেওরপাড়া,‌বোকাভাঙ্গা ,জাতুয়া,‌চেচান,ধনপুর, বাউর, চৌকা ,খারগাও, চানপুর, খারাই ,ধনপুর, রাতগাও, বাউর,প‌রেশ পুর,আ‌গিজাল,রায়ত, আকুপুর,খরছকা‌লি,খাইরগাও,রাজাপুরসহ অর্ধশতা‌ধিক গ্রামে পাকা খুঁটির পাশাপাশি বাঁশের খুটি ও বিভিন্ন জা‌তের গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে এল‌টি লাইন ।

    এসব লাই‌নের গড়গাওঁ গ্রা‌মে একজন শিক্ষক তার ছিট‌কে প‌ড়ে হা‌ফিজ হা‌মিদুর রহমান না‌মে ব্য‌ক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট মারা যান ।‌ একই এলাকার বেরাজপুর গ্রা‌মে দুই শিশু তার লে‌গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট মারা গে‌ছে।
    বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দেশের প্রধান মন্ত্রী “শেখ হাসিনার উদ্যোগ” ঘরে ঘরে বিদ্যুত” নামের এই মহান উদ্যোগটি অনেক স্থানেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। ছাতক উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১০-১২ গ্রামের মানুষ বিদ্যুতজনিত দুর্ঘটনার আশংকায় রয়েছেন। এসব গ্রামে বিদ্যুৎ লাইন টানতে খাম্বার পাশাপাশি বাঁশের খুঁটি ও গাছ ব্যবহার করেছে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। প্রতিবছর এখানে বিদ্যুতজনিত দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা বাঁশের খুটি অপসারণ করে বিদ্যুৎ বিভাগের সরকারী খুঁটি স্থাপনের দাবি ক‌রেছেন উপ‌জেলা প‌রিষ‌দের চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল।
    দাহারগাওঁ গ্রা‌মে মোহাম্মদ আলী, খছরু মিয়া ও আলমপুর গ্রা‌মে বি‌শিষ্ট সাংবা‌দিক ছাতক প্রেসক্লা‌বের সাধারন সম্পাদক আ‌নোয়ার হো‌সেন র‌নি জানান, ৪ শতাধিক বাঁশের খুটিতে ঝুকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইন দেয়া হয়। এ বিষয়টি একাধিকবার জানালেও বাঁশের খুটি বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের নজরে পড়ছে না। দুর্নীতি আড়াল করতেই বিষয়টি তারা আমলে নেননি। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন।

    উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার ক‌রে ব‌লেন,সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিদ্যুৎ সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়ম সহ্য করা হবে না।১৩‌টি ইউ‌পির ম‌ধ্যে তিনটি ইউ‌পির পুরাতন লাইন সংস্কা‌রের কাজ চল‌ছেন। এসব গ্রা‌মের ঝু‌কিঁপুন গ্রা‌মে বাঁশের খুটি অপসারণ করে সরকারী খুঁটি দ্রুত প্রতিস্থাপন করা হউক, এটাই তার কাম্য। লাইন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে জরুরী ভিত্তিতে মালামাল বরাদ্ধের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে তি‌নি আবেদন করা হয়।

    এ উপ‌জেলায় বি‌ভিন্ন গ্রা‌মে অনেক জায়গায় বিদ্যুতজনিত ঝু‌কিঁপুন লাই‌নে বাঁশের খুঁটি ও কদমগা‌ছে বিদুৎত লাইন পরিবর্তন করেননি পিডিবি কর্মকর্তারা, আ‌মি সেই বাঁশের খুটির পরিবর্তে নিরাপদ বিদ্যুৎ লাইন চাই। সেটা যেন পিডিবি কর্মকর্তারা দ্রুত সমাধান করার ল‌ক্ষে গ্রামবা‌সি একা‌ধিক আ‌বেদন ক‌রে‌ছেন ব‌লে তি‌নি জা‌নি‌য়ে‌ছেন।

    এ ব্যাপারে ছাতক পিডিবি’র নিবার্হী প্রকৌশলী আব্দুল আল মামুন সরদার ও সহকা‌রি প্র‌কৌশলী আলা উ‌দ্দিনের সাথে আলাপকালে দীর্ঘ‌দি‌নের পুরাতন লাইন সংস্কা‌রে তিন‌টি ইউ‌নিয়‌নের কাজ চল‌ছে। বাশের খুটির ব্যাপারে চীপ ইঞ্জিনিয়র, মূখ্য সচিব ম‌হোদ‌য় ও সি‌লেট বিভা‌গের শ্রেষ্ট চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল স‌ঙ্গে আলাপ ও আ‌লোচনার মাধ্য‌মে সংস্কা‌রের ব্যাহত র‌য়ে‌ছেন। কিছুদিনের মধ্যেই বাশের খুটি পরিবর্তনের নানা উ‌দ্দ্যোগ গ্রহন করা হয়।