ছবি দেখে শেখ রেহানাসহ আমরা দুই বোন কেঁদেছিঃপ্রধানমন্ত্রী

    0
    327

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৭অক্টোবর,ডেস্ক নিউজঃ  আমেরিকায় বসে পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর খবর জানতে পেরে, ঢাকা থেকে পাঠানো ছবি দেখে বোন শেখ রেহানাসহ আমরা দুই বোন কেঁদেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশগ্রহণ এবং যুক্তরাজ্য সফর শেষে ফিরে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেওয়া গণসংবর্ধনায় বক্তব্যদানকালে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হওয়া অনেক অপমানেরও জবাব। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূমিতার কারণেই রোহিঙ্গা ইস্যু আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।

    ৫ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার নির্দশন প্রদর্শন করার পাশাপাশি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতায় এই সঙ্কটের প্রতি বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করায় শেখ হাসিনাকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের পদক্ষেপের কারণেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট এখন বিশ্বাবাসীর মনোযোগের কেন্দ্র।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রী এরপর আওয়ামী লীগের গণসংবর্ধনা মঞ্চে যান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। সেখানে বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ অভিহিত করেন।

    প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের পর তিন সপ্তাহের সফর শেষে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকাল ৯.২৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। বিমানবন্দরে এসময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।

    পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত বাধার মুখে আমি বলেছিলাম, নিজেরাই করবো। তাতে দেশে-বিদেশে বাঙালিরা সবাই বলেছেন, আপা আপনি করেন যা যা লাগে তাই দিয়ে পাশে আছি আমরা। এই যে মানুষের ভালোবাসা, মানুষের আস্থা অর্জন এটাই একজন রাজনীতিবিদের জন্য অর্জন। ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করি না, অপবাদ মাথায় নেবো কেন! কাজ করে দেখাচ্ছি।

    গত শনিবার (সকালে শরিয়তপুর জাজিরা নাউডোবা অংশে ৩১ ও ৩২ নম্বর পিলারে স্প্যান বসানো হয়। স্প্যানের কাজ শেষ করেই ওবায়দুল কাদের ম্যাসেজ দেন এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। স্থানীয় সময় রাত ৩টায় ম্যাসেজ এলো। জানলাম স্প্যান বসানো হয়েছে। জেগেই রয়েছি; বললাম ছবি পাঠাও। ওবায়দুল কাদের ছবি ও ভিডিও দুটিই পাঠালেন। সেগুলো দেখে দুই বোন সেখানে কেঁদেছি। অনেক অপমানের জবাব আমরা দিতে পারলাম, এটাই সব থেকে বড় অর্জন।

    এছাড়া অনেক উন্নত দেশ যা পারেনি, বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে বলেও মত দেন তিনি। বলেন, পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণ সহজ কথা নয়। অনেক স্রোত নিয়ন্ত্রণে রেখে কাজ করতে হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ, সেই দুর্যোগ মাথায় নিয়েও এগোচ্ছি।

    সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। মানুষ মানবতার জন্য। তাই মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যার মুখে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, অনেক দেশই শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে চায়নি। কিন্তু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছিলো তখন আমরা কিছু না ভেবেই তাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম।

    বোন শেখ রেহানার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সে বলেছিল ১৬ কোটি লোককে ভাত খাওয়াচ্ছ, আর সাত-আট লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারবা না! এই কথাটা আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। এছাড়া নেতাকর্মীরাও মানবিক দিক বিবেচনায় পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। সব মিলিয়ে আমরা পেরেছি।

    ১৯৭১ সালের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে সাড়ে তিন কোটি মানুষকে হত্যা করেছিলো পাকহানাদার বাহিনী। ১ কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো। ফলে আমরাও ভুক্তভূগী। সেই কথা স্মরণ করেই আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় দেশবাসীর সমর্থন পেয়ে সকলকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

    ‘আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বসভায় তুলে আনা আমার লক্ষ ছিল। এটুকু বলবো, যা কিছু দেশের জন্য করতে পেরেছি, যা কিছু অর্জন, সবই এদেশের মনুষের সমর্থনে, এ দেশের মানুষের দোয়ায়।’ বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে মানবিকতার বৃহত্তর স্বার্থে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘জাতির পিতা আমাদেরকে মানুষকে সহায়তা করাই শিখিয়েছেন। যখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেই, অনেক সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তার চেয়েও বড় বিষয়, সে সিদ্ধান্ত সঠিক হতে হয়, যেন সফলতা পায়। এসব সিদ্ধান্তে সবার সমর্থন পাই’।

    ‘দেশের মানুষের আস্থা ছিল, বিশ্বাস ছিল, সমর্থন ছিল বলেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয়। এ কারণে বাংলাদেশ যে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হচ্ছে, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে, যা কিছু অর্জন হচ্ছে- তার সবই তাই এদেশের মানুষের কল্যাণে, তাদের সমর্থনে ও দোয়ায়।

    নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বাসস্থান গড়ে পুনর্বাসন করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘আশ্রয় যখন দিয়েছি, তখন তাদেরকে ভালোভাবে রেখে সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেবো’- বলেন তিনি।

    শেখ হাসিনা গণসংবর্ধনা মঞ্চে বলেন, ‘যারা স্বাধীনতা চায়নি তারা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিতে চায়। তারা বাংলাদেশের জন্য কাজ করেনি, আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিল। তবে এখন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য ফিরতে শুরু করেছে। বিশ্বমন্দা থাকার পরও দেশকে এগিয়ে নিতে পারছি।’

    রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য। বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যেকোনও মানুষের মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব। মানবেতর জীবনযাপন করছিল তারা (রোহিঙ্গারা), তাদের ওপর অত্যাচার চলছিল। প্রথমে যখন তারা আসছিল তখনও আমরা জানি না আসলে কী অবস্থা। যেভাবে গণহত্যা ঘটছে তা জেনে তখন খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের আশ্রয় দিতে হলো।’

    ‘যদি প্রয়োজন হয় একবেলা খাবো, আরেকবেলার খাবার ওদের ভাগ করে দেবো। বাংলাদেশ যদি এ অবস্থান না নিত তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এত দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত না।’বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    রোহিঙ্গা ইস্যুতে উত্তেজনা তৈরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একেবারে প্রতিবেশী দেশ এমন ভাব দেখালো, যেন আমাদের সঙ্গে যুদ্ধই বেধে যাবে। আমি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশকে সতর্ক করলাম। কোনও বিভ্রান্তি যেন না হয়। যতক্ষণ আমি নির্দেশ না দেবো কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। আমরা সতর্ক ছিলাম। এজন্য ধন্যবাদ জানাই পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিকে।’

    পদ্মা সেতুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুসের বিশ্বাস, আস্থা অর্জনের চেয়ে রাজনীতিকের জীবনে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হয় না। অনেকেই সন্দিহান ছিল, এরকম খরস্রোতা নদীতে (পদ্মায়) সুপারস্ট্রাকচার করা বিরাট চ্যালেঞ্জ। আল্লাহর রহমতে আমরা করেছি। ওবায়দুল কাদের স্প্যান বসানোর উদ্বোধনে দেরি করতে চেয়েছিল। আমি বলেছি- না। এটা নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। অনেক মানুষকে অপমানিত হতে হয়েছিল। এক সেকেন্ডও দেরি করবো না। আমেরিকান সময় ৩টার সময় ম্যাসেজ পেলাম সুপারস্ট্রাকচার বসেছে। আমি ছবি চাইলাম। ওই ছবি দেখে আমরা দুইবোন কেঁদেছি। অনেক অপমানের জবাব দিতে পারলাম। বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে মর্যাদা নিয়ে থাকুক।’

    শরীরে অস্ত্রোপচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গলব্লাডারে অপারেশন হয়েছে। আমার বয়স ৭১ বছর। চিকিৎসক কয়েক সপ্তাহের জন্য সাবধান থাকতে বলেছেন। চলাফেরার ক্ষেত্রেও ছয় মাস সাবধানে থাকতে বলেছেন।

    সুস্থ হয়ে পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো এবং ১৪ দলের নেতারাসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা জানান। নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া, জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশ নিয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক ভূমিকা রাখায় আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হওয়া এবং বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়‍ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়।

    এরপর সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সরাসরি গণভবনের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় রাস্তার দু’পাশে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মী ফুল ছিটিয়ে ও স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।

    প্রধানমন্ত্রী পৌঁছার কয়েক ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দর সড়কে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সকাল থেকেই বিমানবন্দর সড়কে আনন্দ মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিজয় স্মরণী পর্যন্ত গোটা রাস্তা জুড়ে নেতাকর্মীরা তাকে অভিনন্দন জানাতে উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে বিজয় স্মরণী পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন পাশ্ব সড়কগুলো এ সময় বন্ধ থাকে।আমাদের সময়।