চুনারুঘাটে বানিজ্যিকভাবে ফল চাষের অপার সম্ভাবনা

    0
    472

    এম এস জিলানী আখনজী, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) থেকেঃ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় বানিজ্যিকভাবে ফল চাষের অপার সম্ভাবনা। এ এলাকায় ফল চাষ করে অনেকেই সাবলম্বি হচ্ছেন। মাল্টা চাষে ব্যাপক সাফল্যের পর চুনারুঘাটে এবার রংপুর হতে আমদানি করা ভাইরাসমুক্ত সুইট লেডি পেঁপের বাম্পার ফলন ফলিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়েছেন উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের আমু চা-বাগানস্থ ঘনশ্যামপুর গ্রামের ময়নাটুলি এলাকার কৃষক ফারুক মোল্লা। ব্যবসার পাশাপাশি কৃষিতেও তিনি সফল।

    তার বাগানের প্রতিটি গাছে গড়ে এক মণ পেঁপে ধরেছে। একেকটা পেঁপে দুই কেজি ওজনের। পেঁপে রোপনের ৪৫ দিন পর গোড়া থেকে ফল ধরেছে। এমন ফলন ফলিয়ে যে কেউ এক বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করে এক বছরেই হবেন লাখপতি। সুইট লেডি জাতের পেঁপে চাষ নিয়ে এমনই হৈ চৈ পড়েছে পুরো এলাকায়।

    উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তা নিয়ে ফারুক মোল্লা সুইট লেডি জাতের পেঁপে চাষ করে এলাকায় সবার দৃষ্টি কেড়েছেন। ৭২ শতাংশ জমিতে সুইট লেডি জাতের ৩ শত পেঁপের চারা রোপন করেন তিনি। বর্তমানে গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সবুজ দৃষ্টি নন্দন পেঁপে ধরেছে তার গাছে।

    উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ এলাকার কৃষকদেরকে কৃষিতে আগ্রহ করানোর জন্য নির্বাচিত চাষী ফারুক মোল্লাকে সুইট লেডি জাতের ৩ শত পেঁপের চারা রংপুর থেকে সংগ্রহ করে দেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। ঘনশ্যামপুর গ্রামের ফারুক মোল্লা এলাকায় গড়ে তোলেন এক বিশাল পেঁপের বাগান। ফারুক মোল্লা জানান, তার বহু দিনের শখ ছিল পেঁপে বাগান করার। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় তা পুরন হয়েছে।

    এ বাগান করতে তার চারা, রাসায়নিক সার, বালাইনাশক, রোপন, আগাছা পরিস্কার, বেড়া, সেচ, জমি তৈরী লেবার খরচসহ এক বছরে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে দ্বিতীয় বছর থেকে এই খরচ অনেকটাই কমে আসবে। রোপনের চার মাসের মধ্যেই প্রতিটি পেঁপে গাছে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি করে পেঁপে ধরেছে। যার ওজন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি। রোপনকৃত গাছ থেকে বছরে ৪ থেকে ৫ বার পেঁপে সংগ্রহ করা যাবে। এখানে কাঁচা পেঁপে পাইকারী মূল্যে কেজিতে ২০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে কাঁচা পেঁপের চেয়ে পাঁকা পেঁপে বিক্রি লাভজনক। প্রতিটি পাঁকা পেঁপে গড়ে ১’শ টাকা করে বিক্রি করা যাবে। এক বছরে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ১ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাগান স্থাপনার পর প্রথম ৫ মাসেই ১’শ মণ কাঁচা পেঁপে বিক্রি করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন তিনি।

    ঐ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সৌরভ কবির ও রনি দেব রায় জানান, কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষক ফারুক মোল্লা ৭২ শতাংশ জমিতে হাইব্রীড সুইট লেডি পেঁপে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। এ জাতটি ভাইরাস প্রতিরোধী। আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকের সাথে অবস্থান পূর্বক পরামর্শ ও সেবা দিয়ে আসছি।

    উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সরকার বলেন, চুনারুঘাট উপজেলার মাটি ফল চাষে বেশ উপযোগী। এখানে ধান চাষের চেয়ে ফল চাষে অনেক বেশী লাভজনক হয়। তাই এলাকার চাষীদের পেঁপে চাষে ব্যাপকভাবে আগ্রহী ও উৎসাহিত করার জন্য মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। তিনি বলেন, সুইট লেডি পেঁপেটি প্রথমে তিনি সিলেট বিভাগে প্রচলন করেছেন। পেঁপেটি ভাইরাসমুক্ত ও লাভজনক একটি ফসল এবং এ ধরনের ফসল চাষ করে যে কেউ লাভবান হতে পারবেন। তিনি জানান, এ উপজেলায় গত দুই বছরে প্রায় ১৬ হাজার পেঁপের চারা রংপুর হতে আমদানীপূর্বক কৃষকদের মাধ্যমে রোপন করা হয়েছে এবং এ উপজেলায় ফারুক মোল্লার বাগানের মত আরও অনেকগুলি সুইট লেডি পেঁেপর বাগান রয়েছে।

    হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, পেঁপে একটি উৎকৃষ্ট সু-স্বাধু ফল, এটি সারা বছরই উৎপাদিত হয়। কৃষকের জন্য খুবই উপযোগী ফসল, কারণ বার মাসই এ ফসলটি হয়ে থাকে। তিনি বলেন, পুষ্টিকর খাদ্য পেঁপেতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ও মিনারেলস্ থাকে। এ উপজেলায় যেভাবে পেঁপে চাষ হয়েছে, তা যদি আমরা পরিকল্পিতভাবে মাঠ পরিদর্শন বা মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের জমায়েত করে চুনারুঘাট উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে পেঁপে চাষে উজ্জল সম্ভবনা তৈরী হবে এবং কৃষি শিল্পে ব্যপকভাবে অবদান রাখবে।