চুনারুঘাটের ঐতিহাসিক পটভূমি

    2
    617

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৭জুন:হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার অতি প্রাচীনকালে তথা ব্রিটিশ আমলের ইতিকথা জড়িয়ে রয়েছে এই পটভূমিতে। বিপুল প্রাকৃতিক ও বৈচিত্র্য আর নৃতাত্তিক গোষ্ঠীর বসবাসের জনপদ। নদী-নালা, খাল-বিল ও পাহাড়ি ঘেরা এই চুনারুঘাট। চায়ের এলাকা হিসেবেও বেশ পরিচিত। চুনারুঘাট প্রাচীনকালে তথা ব্রিটিশ আমলে এই রাজ্যের নাম ছিল তরপ রাজ্য। তখনকার সময় সর্বশেষ রাজা ছিলেন আছক নারায়ন। বর্তমানে এর রাজধানী বাল্লা সীমান্তের টেকেরঘাট গ্রামে।

    হযরত শাহজালাল (রঃ) নির্দেশে সিপাহশালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন কর্তৃক তরফ রাজ্য বিজয়ের পর এই অ লে মুসলিম শাসন আরম্ভ হয়। তৎকালে অত্র এলাকার জনসাধারন মানুষ খোয়াই নদী ছাড়া যোগাযোগের অন্য কোন বিকল্প পথ ছিল না। সে সময় খোয়াই নদীর পশ্চিম তীরে বড়াইল মৌজায় একটি নদীর ঘাট ছিল। এই ঘাট দিয়ে নদীপথে অন্যান্য এলাকার জনসাধারন যাতায়াত ও মালামাল আদান প্রদান করতো। বিশেষ করে চা বাগান সমৃদ্ধ এ এলাকায় উৎপাদিত চা ও অন্যান্য মালামাল রপ্তানির কাজেও একমাত্র ঘাট হিসেবে পরিচিত ছিল।

    জনশ্রুতি আছে, এঘাটের পার্শ্বে একজন বিখ্যাত চুন ব্যবসায়ী ছিলেন তখনকার সময় যার চুনের ব্যবসায় তৎকালে সমগ্র তরপ রাজ্যে বিস্তৃত ছিল। তখন এই এলাকায় চুন ব্যবসায়ী ঘাট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং পর্যায়ক্রমে এলাকাটি চুনারুঘাট নাম হিসেবে পরিচিতি অর্জন করে। ব্রিটিশ আমলে তৎকালীন আসাম সরকারের ১০/০৮/১৯১৪ ইং তারিখের ৪৭নং জি স্মারকে সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমাধীন মুছিকান্দি থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা বর্তমান থানা সদর হতে প্রায় ৬ কিঃ মিঃ পূর্ব দক্ষিণে খোয়াই নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। কিন্তু মুছিকান্দি যাতায়াতের অসুবিধার কারণে পরবর্তী সময়ে ১৯২২ইং সনে বর্তমান স্থানে থানা সদর হস্তান্তর করা হয়। আসাম প্রাদেশিক সরকারের জারীকৃত স্মারক নং- ৩১২৬/জি,জে এবং স্মারক নং- ৪৭, তারিখ- ০৩/০৫/১৯১৮ ইং মূলে বর্তমান চুনারুঘাট থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯২২ইং সনে ১৯৮৩ ইং সনে চুনারুঘাট থানাকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

    চুনারুঘাটে দর্শনীয় স্থান হিসেবে (১) মুড়ারবন্দ মাজার হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অন্যতম সহচর সিপাহ সালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) অনুমান ১৩১৮ খ্রিঃ সনে তরপ রাজ্য জয় করে এখানে অবস্থান করেন। মুড়ারবন্দের তার মাজার শরীফ আছে এখানে। মুড়ারবন্দে সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ) এর ৬ষ্ঠ অধস্তন পুরুষ ছিলেন, (২) সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, (৩) রেমা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য। এ উপজেলায় প্রধান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিরা হচ্ছেন মনিপুরী, ত্রিপুরা ও সাওতাল ও নৃ-গোষ্ঠি চা শ্রমিকরা। চুনারুঘাট উপজেলার আয়তন ৪২৭ বর্গ কিঃ মিঃ। ভৌগলিক অবস্থানে দক্ষিনে ভারত, দক্ষিন ও পশ্চিমে মাধবপুর উপজেলা , উত্তরে হবিগঞ্জ সদর ও বাহুবল, পূর্বে ভারত ও মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা। এ এলাকায় ৩,০২,১১০ জন জনসংখ্যা রয়েছে, তার মধ্যে পুরুষ ১,৪৭,১০৮ জন ও মহিলা ১,৫৫,০০২ জন।

    এ উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে এর মধ্যে (১) গাজীপুর, (২) আহম্মদাবাদ, (৩) দেওরগাছ, (৪) পাইকপাড়া, (৫) শানখলা (৬) চুনারুঘাট সদর, (৭) উবাহাটা (৮) সাটিয়াজুরী (৯) রানীগাঁও (১০) মিরাশী। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সংখ্যা রয়েছে ৪টি তার মধ্যে (১) চুনারুঘাট সদর (২) মিরাশী (৩) শিরিকান্দি (৪) বিশগাঁও। মৌজার সংখ্যা রয়েছে ১৬৫টি। গ্রাম রয়েছে ৩৮৫টি। এ উপজেলায় পোস্ট অফিস রয়েছে (১) উপজেলা পোস্ট অফিস-০১টি, (২) সাব পোস্ট অফিস ২টি, (৩) শাখা অফিস ১০টি। খাস জমি রয়েছে অকৃষি জমির পরিমাণ হচ্ছে ৬৫১১.৯৮ একর ও মোট কৃষি জমি হচ্ছে ৬৫০.৫৬ একর।

    এ উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো হচ্ছে- কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১টি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ এলাকা উন্নয়নের তহবিল হতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির জন্য পরিচালত হয়েছে), প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৬৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৮টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২টি, মাদ্রাসা রয়েছে ১৭টি, হাই স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে ৪টি এবং সরকারি কলেজ ১টি। কাঁচা রাস্তা রয়েছে ৮২১.১৮ কিঃ মিঃ, আধা পাকা  রাস্তা রয়েছে ৪০৮২ কিঃ মিঃ ও পাকা রাস্তা রয়েছে ৮২১.১৮ কিঃ মিঃ। শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা ৩৩ কিঃ মিঃ রেল ষ্টেশন বাল্লা রেল ষ্টেশন পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ছিল। বর্তমানে বড়কোটা, শাকিরমোহাম্মদ, সতং, চুনারুঘাট, আমুরোড, আসামপাড়া, বাল্লা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। লেখকঃশংকর শীল