চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ‘নির্বাচন’ এবং উপেক্ষিত শ্রমিকস্বার্থ

    0
    284

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৩জুনঃঅনন্য আদিত্যঃ আগামী ২৪ জুন’১৮ বরিবার বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং বি-৭৭) এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেখানে নির্বাচন, গণতন্ত্র, বিরোধীমত বিষয়গুলো ক্ষমতাসীনদের দ্বারা অবদমিত হতে হতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় স্বৈরতন্ত্র তার ভীবৎস্য রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে সেখানে একটি ট্রেড ইউনিয়নের নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য এবং শ্রমিকদের আশাবাদী হয়ে উঠার কথা। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা না হয়ে সচেতন শ্রমিকদের মধ্যে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীমাত্রই জানেন যে নির্ধারিত মেয়াদান্তে ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচনের আর্থিক দায় থেকে সামগ্রিক দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ট্রেড ইউনিয়নের এবং সরকারের শ্রম দপ্তরের দায়িত্ব হচ্ছে শ্রমআইন ও ট্রেড ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করা। দেশের শত শত ট্রেড ইউনিয়নের নির্বাচন এই পদ্ধতিতেই হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য যে দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ট্রেড ইউনিয়ন সেক্টরের অনিয়ম এবং ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। কিন্তু চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে সরকার নিজে শ্রম আইন ও ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচনের সকল দায়দায়িত্ব নিজেদের উপর নিয়ে নিয়েছে, এমন কি এই নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য সরকারের রাজস্ব থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারের সাথে মালিকপক্ষ সমন্বিত হয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও ভোটার পরিচয়পত্র প্রদানসহ সামগ্রিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা নিচ্ছে।

    চা-শ্রমিকদের জীবনমান ও মজুরির প্রশ্নে সরকার ও মালিকপক্ষ উদাসীন হলেও এই নির্বাচনকে তাদের অগ্রাধিকার কাজ হিসেবে নিয়েছে। বর্তমান ঊর্দ্ধগতির দ্রব্যমূল্যের বাজারে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি সর্বোচ্চ মাত্র ৮৫ টাকা। শুধু তাই নয় বর্তমান এই মজুরি মেয়াদ ২০১৬ সালে উত্তীর্ণ হলেও মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকার কোন ভূমিকা নেয়নি। ২০১০ সালে চা-শিল্প সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য নি¤œতম মজুরি ঘোষিত হওয়ার ৮ বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও সরকার নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করেনি। অথচ প্রচলিত নিয়ম ও শ্রমআইন অনুযায়ী নি¤œতম মজুরি ঘোষিত হওয়ার ৫ বছর অতিক্রান্ত হলে সরকার নতুন মজুরি বোর্ড গঠন মজুরি বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাই স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে চা-শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় এই নির্বাচনের ভূমিকা কি? নাকি মালিকদের স্বার্থরক্ষার প্রয়োজনে সরকার, মালিকপক্ষ ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের দালালনেতারা(কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নির্বাচনে সকল প্রার্থী) সমন্বিত হয়ে এই তথাকথিত নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে? এর আগেও  ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে আরও দুইবার একই পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু চা-শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে কতটুকু!

    ২০০৮ সালে জরুরী অবস্থায় সরকার হাজার হাজার শ্রমিক/সদস্যকে অগোচরে রেখে অগণতান্ত্রিক পন্থায় উভয়পক্ষের গুটি কয়েক দালাল নেতাদের সমন্বিত করে ০৮/০৯/২০০৮ ইং তারিখে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ৯(চ) ধারায় ‘গঠনতন্ত্র সংশোধনের পর গোপন ব্যালটে প্রথম নির্বাচন ইউনিয়নের সম্মতিতে সরকারি ব্যবস্থায় হইতে পারে’ যুক্ত করে শ্রমদপ্তরের শ্রম পরিচালক নিজে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করেন। নির্বাচনে মালিকের আর্শীবাদপুষ্ট ‘নির্বাচিত’ নেতৃত্বের প্রতিদান দিতেও কাল বিলম্ব হয়নি। চা শ্রমিকদের জন্য নি¤œতম মজুরি বোর্ড যোগালী সর্দার ও প্রাথমিক চিকিৎসা কর্মীকে মাসিক বেতনধারী, এক মাসের বেতনের সমপরিমান করে বছরে দুইটি উৎসব বোনাস, মাসে ২৬ কেজি চাল/আটা রেশন, ১ বিঘা পর্যন্ত ক্ষেতের জমির জন্য রেশন কর্তন বন্ধ, গ্র্যাচুয়েটি কার্যকর ও কোম্পানীর লভ্যাংশ ৫% শ্রমিকদের প্রদানসহ ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা কার্যকরের সুপারিশ করে ২০০৯ সালের ১৫ জুলাই খসড়া গেজেট প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ইউনিয়নের ‘নবনির্বাচিত’ নেতৃত্ব খসড়া গেজেটের মজুরি দৈনিক ৪৮ টাকা ঠিক রেখে অন্যান্য সুপারিশকে বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে ২০০৯ সালের আগষ্ট মাসে অতীতের ন্যায় দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিতে উল্লেখিত সুযোগ ও সুবিধাকে বাতিল করে অতীতের ধারা অক্ষুন্ন রেখে মালিকের স্বার্থ রক্ষা করেছে।

    ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নানা ঘটনা প্রবাহে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও কখনও শ্রমিক স্বার্থ বা শ্রমিকের অধিকারের বিষয়ে কোন পক্ষের কার্যকর ভূমিকা ছিল না। ২০১৪ সালে পূর্বের ধারায় সরকার চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বিবদমান দুই পক্ষকে নিয়ে বেআইনীভাবে ১২/০৫/২০১৪ তারিখে ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ৯(জ) ধারায় ‘২০১৪ সনের গঠনতন্ত্র সংশোধনের পর প্রথম নির্বাচন ইউনিয়নের অনুরোধে সরকার/শ্রম পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে হইতে হইবে’ যুক্ত করা হয়। এমন কি উক্ত সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ৯(খ) ধারায় পরাজিত সভাপতি ও সম্পাদকের প্যানেল থেকে মোট ৫ জনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করার মত অবাস্তব, অগণতান্ত্রিক, বেআইনী বিষয়ও যুক্ত করা হয়। দালাল নেতাদের স্বার্থসংরক্ষণে সরকার সংশোধিত গঠনতন্ত্রে সদস্যদের মাসিক চাঁদা বৃদ্ধি করে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। চাঁদা উত্তোলনের বিষয় নিয়ে অবশ্য নেতাদের ভাবতে হয় না কারণ তাদের হয়ে বাগানের ম্যানেজাররা চেক অফ পদ্ধতিতে চাঁদা তুলে নেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। এই নির্বাচনেও মালিকপক্ষের আশীর্বাদপুষ্ট মাখনলাল-রামভজন ‘নির্বাচিত’ হয়। মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে তারা এতই অনুগত যে অনেক টালবাহনার পর ২০১৬ সালে চুক্তি করলেও সেই চুক্তির গ্রাচুইটি ও গ্রুপবীমার বিষয়গুলো কার্যকরে তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মালিকদের আশীর্বাদে লেবার হাউজের ক্ষমতা নিশ্চিত জেনে তারা এবার আগ বাড়িয়ে সরকারকে চিঠি দিয়ে নির্বাচনে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায়। এ প্রেক্ষিতে সরকারি উদ্যোগে গত বছরের ৫ নভেম্বর শ্রীমঙ্গলস্থ আ লিক শ্রম দপ্তরে মাখনলাল-রামভজন গ্রুপ, বিজয় বুনার্জি গ্রুপ এবং গীতা কানুকে নিয়ে এক বৈঠক হয়। গীতা কানু চা-শ্রমিক নন, এমন কি চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য না হওয়ার পর কেন তাকে চা-শ্রমিক ইঊনিয়নের নির্বাচন সংক্রান্ত সভায় আহবান করা হলো এবং তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হলো তা সেই সময় পরিস্কার না হলেও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে তা পরিস্কার হয়ে যায়।

    কারণ কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা চা-বাগানের অধিবাসী গীতা কানু পরবর্তীতে নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে মালিকপক্ষের আর্শীবাদে শ্রীমঙ্গল উপজেলা জুলেখানগর চা-বাগান হতে পিএফ নম্বরসহ স্থায়ী শ্রমিকের নাম নিয়ে নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদকের প্যানেল দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবারও শ্রমআইন লঙ্ঘন করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে ১৪/০২/২০১৮ তারিখে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়। গঠনতন্ত্রের ৯(জ) ধারার সংশোধনী মোতাবেক গঠনতন্ত্র সংশোধনী অনুমোদনের ২১ দিনের মধ্যে ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কাযকরী পরিষদ সাধারণ সভা আহবান করে ৭ সদস্য( ৬ জন ইউনিয়নের সদস্য এবং ১ জন সরকারি কর্মকর্তা) বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করবেন।  উক্ত সংশোধনীতে আরও যুক্ত করা হয় ইউনিয়নের অনুরোধে ২০১৮ সনের নির্বাচন সরকার/শ্রম অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে হইবে। অবাক হওয়ার মত বিষয় শ্রম অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক শিবনাথ রায় ও পরিচালক শামীমা সুলতানা বারীর স্বাক্ষরে গঠনতন্ত্রের উপরে উল্লেখিত যে সংশোধনী অনুমোদন লাভ করলো সেই সংশোধনীকে লঙ্ঘন করে ১৯/০৩/২০১৮ তারিখে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে শ্রম অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক শিবনাথ রায়কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পরিচালক শামীমা সুলতানা বারী সদস্য সচিব করে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন/২০১৮ এর ৯ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কমিটির অপর ৭ জন সদস্যও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। নির্বাচনী ব্যয় পরচিালনার জন্য সরকারি তহবিল থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হলেও নতুন করে সদস্যভূক্তির নামে অনেক শ্রমিক নিকট হতে ৪৫ টাকা আদায় করা হয়েছে। যদি সদ্য সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ১০(ঘ) ধারায় উল্লেখ আছে কমপক্ষে ৩০ টাকা চাঁদা পরিশোধ করলেই যে কোন সদস্য ভোট দান করতে পারবেন।

    শ্রম দপ্তরের সহকারি পরিচালক, উপ-পরিচালক, পরিচালক এবং মহা-পরিচালকের পর্যাক্রমিক পরীক্ষা-নিবীক্ষায় অনুমোদিত গঠনতন্ত্রের ৫ ধারা সদস্য পদ লাভের জন্য “ডি-ফরম” পুরণের উল্লেখ আছে। অথচ বর্তমান শ্রম আইনে ‘ডি-ফরম’ বলে কিছু নাই, সদস্য পদ লাভের জন্য “ফরম-৫৫(ক)” পুরণের বিধান আছে। এ থেকেই বুঝা যায় শ্রম-দপ্তরের রথী-মহারথীদের কাছে যেন তেন প্রকারে একটি ‘নির্বাচন’ দেখিয়ে মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের দালাল নেতৃত্বকে পুণর্বাসিত করা। শ্রীমঙ্গলের আ লিক শ্রমদপ্তরে গত ২৭ মে’২০১৮ তারিখে নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার শ্রম অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক শিবনাথ রায়কে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রক্রিয়া এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন করার বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন। উত্তরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান এবারই শেষবারের মতো সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন হচ্ছে, এত বিপুল সংখ্যক সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভা আয়োজনের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।

    প্রশ্ন হলো তাহলে কেন চা-সেক্টরে একাধিক ইউনিয়নের সুযোগ আইন করে রহিত করা হলো? যেকোন সেক্টরে একাধিক ইউনিয়ন, জেলা/উপজেলা ভিত্তিক ইউনিয়ন করার বিধান থাকলেও একমাত্র চা-সেক্টরের জন্য জাতীয় ভিত্তিক একটি ইউনিয়নের বিধান করা হয়েছে। মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী ইউনিয়নের বিপরীতে যাতে প্রকৃত শ্রমিকস্বার্থে কোন ইউনিয়ন গড়ে উঠতে না পারে সেই কারণেই সরকার এমন ব্যবস্থা করেছে। ইউনিয়নের নেতারা মালিকদের কতটা পেয়ারের তার প্রমাণ পাওয়া যায় ইউপি চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালাকে বালিশিরা ভ্যাীলতে সভাপতি প্রার্থী করতে নির্বাচনের প্রাক্কালে গীতা কানুর মতো অন্য বাগান থেকে স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায়। ক্লোনেল চা-বাগানের অধিবাসী না হলেও প্রানেশ গোয়ালাকে স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে তালিকাভূক্ত করলে শ্রমিকদের বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে প্রানেশ গোয়ালার প্রতিপক্ষ বাগানে ধর্মঘট করায়। শ্রমিকদের অভিযোগ বছরের পর বছর কাজ করলেও তাদের স্থায়ী করা হয় না, উপরন্তু তাদের বাগানে বেকার শ্রমিক থাকলেও বহিরাগত একজনকে কেন স্থায়ী শ্রমিক করা হবে। ধর্মঘটের মুখে কেøানেল চা-বাগানের অসহায় ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক রনি ভৌমিক জানান প্রানেশ গোয়ালাকে তিনি নিয়োগ করেননি, মালিকপক্ষ সরাসরি তাকে নিয়োগ করেছেন।

    তফশীল ঘোষিত হওয়ার পরদিন ২৮ মে’১৮ মালিকপক্ষ বর্তমান নেতৃত্বের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করে দিতে দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা নির্ধারণ করে দিতে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি করতে বসেছিল, যদিও নানা মহলের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত চুক্তি সম্পাদন হয়নি। নির্বাচনের প্রেক্ষিতে মালিকপক্ষের কৌশল হচ্ছে সকল পক্ষকে বশীভূত রাখা। বস্তুতঃ মালিকপক্ষের আশীর্বাদ ছাড়া নির্বাচনে(কেন্দ্রীয় পর্যায়ে) প্রার্থী হওয়াই সম্ভব না। তাই সরকার, মালিকপক্ষ ও দালাল নেতৃত্বের সমন্বিত পাতানো এই নির্বাচনে যে শ্রমিকস্বার্থ রক্ষিত হবে না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

    বাংলাদেশের চা-শ্রমিকরা দৈনিক মাত্র ৮৫ টাকা মজুরিতে কাজ করলেও পার্শ্ববর্তী ভারত, শ্রীলঙ্কার চা শ্রমিকরা এর থেকে অনেক বেশি মজুরি পাচ্ছেন। রেশন, চিকিৎসা, উৎসব বোনাসসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও আমাদের চেয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের চা শ্রমিকরা অনেক বেশি পেয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় মালনীছড়া চা বাগানের রাবার শ্রমিকরা চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আন্দোলন-সংগ্রাম ও ধর্মঘটের প্রক্রিয়ায় দৈনিক ১৫৫ টাকা মজুরি, ১ টাকা কেজি দরে সাপ্তাহিক ৫ কেজি রেশন, ৩ রূমের পাকা ঘর, মাসিক শিক্ষা ভাতা ২০০ টাকা ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন।

    একইভাবে রাবার শ্রমিকদের আন্দোলনের ধারার সাথে সম্পর্কিত হয়ে মালনীছড়া বাগানের চা-শ্রমিকরা ২০ কেজি নিরিখের বাড়তি প্রতি কেজি চা পাতাতে ৬ টাকা, নগদা প্রতিকেজি ৬ টাকা, আলাদা পাকঘরসহ ৩ রূমের পাকা ঘর, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, প্রতি ১০ পরিবারে ১ টিউবওয়েল, মহিলা শ্রমিকদের পাতা তোলার জন্য বছরে ৩ টি গমছা, পাতা ওজনে চুরি/ফাঁকি না দেওয়ার জন্য আলাদা লোক নিয়োগ, কীটনাশক স্প্রে করার শ্রমিকদের কাজের পোষাক, জুতা, সাবান প্রদান, সকল চা-শ্রমিকদের বছরে ২ কেজি চা-পাতা রেশন প্রদান, সিজনে মহিলা শ্রমিকদের সন্তানদের রাখার জন্য সেকশনে শিশুসদনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি আদায় করতে পেরেছে।

    তাই চা শ্রমিকদের নিজেদের মুক্তির প্রশ্নে শ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত আপোসহীন, সৎ, সংগ্রামী, শ্রেণী সচেতন নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগঠন-সংগ্রাম গড়ে তুলে অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে। লেখকঃ রাজনৈতিক কর্মী।