চা-শ্রমিকরা আজও বৈষ্যম্যের শিকার !

    0
    227

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০১মে,হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ১লা মে মহান মে দিবস আজ। প্রতি বছর সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে নানা শ্রমিক সংগঠন দিবসটি পালন করেন।
    হবিগঞ্জ,সিলেট,মৌলভীবাজারসহ চুনারুঘাটের চা শ্রমিকরাও এর বাইরে নয়। প্রতি বছর তারা দিবসটি পালন করে তাদের দাবী দাওয়া তুলে ধরে।
    কিন্তু বাস্তবে এসব দাবী ধাওয়া মালিকপক্ষ কতটুকু পালন করেন, দৈনিক ৮৫টাকা হাজিরাই তা প্রমাণ করে। ফলে বাধ্য হয়েই চা শ্রমিকরা কাজের জন্য বাগানের বাইরে ঝুঁকছে।
    চা বাগানের মজুরী দৈনিক ৮৫ টাকা হলেও বাগানের বাইরে তারা কাজ করে পান ২’শ থেকে ৪’শ টাকা। একই শ্রমিকের মজুরী দু’জায়গায় দুরকম হওয়ায় প্রশ্ন জাগে শ্রমিকরা আর কতকাল এ বঞ্চনার শিকার হবেন?
    এ অবস্থা যুগ যুগ ধরেই চলে আসায় মালিকের শোষন থেকে মুক্ত হতে পারছেন না ভুমি অধিকার না থাকার কারণে। এহেন অবস্থায় চা শ্রমিকরা এখন ভুমি অধিকার নিয়ে স্চ্ছোার হচ্ছেন।
    উপজেলার ১৭টি চা বাগানের চা শ্রমিকরা চা বাগানের অভ্যান্তরে ও বাইরে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছে। চা বাগানে দৈনিক হাজিরা বর্তমানে ৮৫ টাকা আর বাগানের বাইরে কাজ করে তারা পাচ্ছে ২শ থেকে ৪শ টাকা।
    বাগানের গন্ডি থেকে বাইরে এসে শ্রমিকরা কাজ করলেও বিকেলে ফিরে যেতে হচ্ছে ঘরে। বাগান মালিকদের লীজকৃত জমিতেই তাদের বাসস্থান। বাসস্থান সুবিধার কারণেই নাকি তাদের মজুরী ৮৫ টাকা। এসব চা শ্রমিক আজীবন মজুরী বৃদ্ধির দাবী করে আসছে।
    প্রতি বছর মে দিবস আসলেই তারা প্রথম দাবী হয় মজুরী বৃদ্ধি করা। গত বছর থেকে তাদের দাবীতে যুক্ত হচ্ছে ভুমি অধিকার দেওয়া। নিজের নামে কোন ভুমি না থাকায় কারা চাকুরি থেকে শুরু করে নানা কাজে সমস্যার জালে আবদ্ধ হচ্ছে।
    তাই তারা নিজের নামে একখন্ড জমির জন্য সোচ্ছার হয়ে উঠছে। আজও উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীর চান্দপুর চা বাগানে মে দিবসের নানা আয়োজন রয়েছে।
    মে দিবস আসে, মে দিবস যায়, কিন্তু তাদের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয়না। এসব শ্রমিক চা শিল্পে অবদান রাখলেও তারা বরাবরই অধিকার থেকে বঞ্চিত।
    এসব চা শ্রমিক সারাদিন পরিশ্রম করে পাওয়া ৮৫ টাকায় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করেন। তারা আজীবণ পরজীবি বসবাস করছে। কিন্তু চা বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করে শিক্ষিত হচ্ছে, তারা এখন তাদের অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। তারা এখন মে দিবসে দাবী তুলেছে ভুমি অধিকার ও মজুরী বৃদ্ধির।
    উপজেলার ১৭টি চা বাগানে লক্ষাধিক চা শ্রমিক রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ চা শ্রমিক সরাসরি চা বাগানে উৎপাদন কাজ জড়িত। এরাই চা শিল্পের প্রাণ। বাকীরা শ্রমিকরা বাগানের বাইরে কাজ করেন। তারা কৃষিকাজ থেকে শুরু করে মাটি কাটা সব কাজই করতে পারে।
    ধান কাটা, ধান রোপন, মাড়াই, ইটভাটায় ইট তৈরী, পুড়ানোও শুকানো সবই এসব শ্রমিকরা করে থাকে। বিনিময়ে সারাদিনে পায় মাত্র ২৫০ থেকে ৪’শ টাকা। অথচ বাগানে একই পরিমান কাজ করে শ্রমিকরা পায মাত্র ৮৫ টাকা। ২০১৫ সালে শ্রমিকদের মজুরী ৬৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫ টাকা করা হয়। এ টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলেনা বলেই তারা বিভিন্ন সময়ে বাগানের বাইরে কাজ করে থাকে।
    চা শিল্পের উন্নয়নে তারা ভুমিকা রাখলেও তাদের ভাগ্য উন্নয়ন হয়নি কখনো। চান্দপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা ও আদিবাসী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা স্বপন সাওতাল বলেন, চা শ্রমিকরা চিরকালই নির্যাতিত ও নিপীরিত।
    বাগান মালিকরা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও আমাদের শ্রমিকরা ভাঙ্গা ঘরেই বাস করে। ৩ বেলা আহারও পায়না। চা শ্রমিক নেতা কাঞ্চন পাত্র বলেন, চা বাগান কর্তৃপক্ষ সব সময়ই আমাদের নির্যাতন করে আসছে।
    আমরা এবার ভুমি অধিকারের দাবী তুলেছি। দাবী আদায় করেই ঘরে ফিরবো। আমাদের ভুমির অধিকার না থাকার আামাদের ছেলে মেয়েরা এখন চাকুরি নিতে পারছে না। আমরা সরকারের কাছে ভুমির স্থায়ী বন্দোবস্ত চাই।