চা-বাগানের শিক্ষাখাতে বিশেষ বরাদ্দের দাবিতে স্মারকলিপি

    0
    230
    চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’র উদ্যোগে আজ অর্থমন্ত্রী বরাবরে  সিলেট ও হবিগঞ্জে জেলা প্রশাসক ও ফেঞ্চুগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। সিলেটে স্মারকলিপি পেশের পূর্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সংগঠক অধীর বাউরীর সভাপতিত্বে ও রানা বাউরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন,সঞ্জয় কান্ত দাস,নেপাল ছত্রী,রাম নিধি,আরমান হোসেন,সাগর,গোপন বাউরী প্রমুখ।
    হবিগঞ্জে একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসকের সাথে স্বাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি পেশ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের উপদেষ্টা শফিকুল ইসলাম,শ্রী প্রসাদ চৌহান। ফেঞ্চুগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে স্বাক্ষাৎ করে স্বারকলিপি পেশ করেন শিপু বাউরী, শুভন রায় দীপ্ত, রাজেন কুর্মি, যীশু আচার্য প্রমুখ।
    এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, “অর্থকরী ফসল চা। চা জনগোষ্ঠির অমানুষিক পরিশ্রমে শুধু নান্দনিক সৌন্দর্যের চা বাগানই গড়ে উঠছে না, সচল হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাকা। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বর্তমান করোনা সংক্রমণের মধ্যেও দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার কাজ করে যাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন,এমনকি মারাও গেছেন কয়েক জন। সংক্রমনের শুরুতেই করোনায় সবেতন ছুটি চেয়েও ছুটি মিলে নি, আবার এখনও পর্যন্ত চা শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম ঝুঁকিভাতার কোন ঘোষণা আসেনি। করোনায় গোটা দেশের ন্যায় চা শ্রমিকদের জীবনও থমকে আছে। মাত্র ১০২ টাকা দৈনিক মজুরি দিয়ে কোন ভাবেই একটি চা শ্রমিক পরিবার চলতে পারে না, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা বাগানের বাইরে যতটুকু সম্ভব কাজ করেও অন্তত কোন রকমে জীবন ধারনের চেষ্টা করেন। কিন্তু করোনকালীন সময়ে বাইরের সকল কাজ বন্ধ আছে।
    এদিকে বাগানে কাজ চালু আছে এ কারণে চা শ্রমিকরা বিশেষ কোন ত্রাণও পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে তারা এ সময়ে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যেই এনজিওগুলো কিস্তি আদায়ে তৎপর হয়ে উঠেছে, যা সামনে বাড়বে। আবার চা বাগানের শিক্ষার্থীরাও তার পড়াশোনসহ সমাগ্রিক ব্যয় নির্বাহ করেন কোন না কোন জায়গায় কাজের বিনিময়ে অর্জিত টাকা দিয়ে,এ সময় তাও সম্ভব হয়নি।
    এ অবস্থায় চা বাগানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন বিপন্ন প্রায়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই চলতি শিক্ষা বর্ষের বেতন ও অন্যন্য ফি, আসন্ন একাদশ শ্রেণীর ভর্তি ফি জোগাড় করতে না পারার কারনে বহু শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
    এদিকে দুঃখজনক হলেও সত্যি স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও শিক্ষাসহ সকল মৌল মানবিক অধিকার বঞ্চিত চা শ্রমিকরা। আজ সারা দেশের ১৬৬ টি বাগানের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মাত্র ১২/১৪টিতে, আর মাধ্যমিক স্কুল আছে ৩টিতে। অথচ সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যে এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন”।
    সংবিধানের এ ঘোষণা চা বাগানে আজও কার্যকর হয়নি, শুধু তাই নয় ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সরকারের ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা’ কর্মসূচিও চা বাগানে বাস্তবায়ন করা হয়নি। এরপরও যে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে চূড়ান্ত আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শিক্ষার উপকরণই তারা ক্রয় করতে পারে না। তাই বাগান কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শিক্ষা বৃত্তি চালু এবং বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণও সরবরাহ করা প্রয়োজন।
    এমনিতর পরিস্থিতিতে চা জনগোষ্টির সামগ্রিক জীবন মান উন্নয়নে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে চা বাগানের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে চা জনগোষ্টির শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং চা বাগানের শিক্ষার নিম্নোক্ত আশু সমস্যাগুলোর সমাধাণ করবেন।”
    দাবি সমূহ
    ১. চা বাগানের শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দাও।
    ২. চা বাগানের শিক্ষার্থীদের চলতি শিক্ষা বর্ষের বেতন ফি মওকুফ কর।
    ৩. চা বাগানের শিক্ষার্থীদের জন্য আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি ফি মওকুফ কর।
    ৪. চা বাগানের শিক্ষার্থীদের জন্য বাগান কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শিক্ষাবৃত্তি চালু এবং সকল প্রকার শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ কর।