চা বাগানের পরিত্যক্ত জমিতে বছর জুড়ে সবজী চাষ

    0
    266

    কমলগঞ্জে শতাধিক কৃষকের মুখে ফসলের হাসি

    শাব্বির এলাহী,কমলগঞ্জঃ  মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ছোটবড় ১৪টি চা বাগান।এসব চা বাগানের অনেক জমি চা চাষের অনুপযোগী হওয়ায় অথবা ভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী দলই চা বাগান ও পাত্রখোলা চা বাগানে এ রকম কয়েকশো একর জমি বছরের পর বছর ধরে অনাবাদী রয়ে আছে।

    বাগান সংলগ্ন আদমপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন নিজেও বারো মাস কৃষি কাজ করেন।তিনি ২০১৪ইং সালে পাত্রখোলা চা বাগানে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন, স্থায়ী চা শ্রমিকদের কৃষিকাজের জন্য বরাদ্দকৃত এসব জমিতে কোনকালেই কোন চাষাবাদ হয়নি।তিনি বার্ষিক চুক্তি চা শ্রমিকেদরে কাছ থেকে লীজ নিয়ে প্রথম বছরে ৪০ একর জমিতে টমেটো চাষ শুরু করেন। বছর শেষে লাভের মুখ দেখে পরের বছর আরও জমি বাড়িয়ে সারা বছরচাষ করা যায় এমন প্রজাতির টমেটোর সাথে অন্যান্য সবজী-ফসলের আবাদ শুরু করেন। অনাবাদী জমিতে ফসল চাষে তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে পরের বছর থেকে প্রতি বছরই আশেপাশের গ্রাম থেকে আসা কৃষকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে এ বাগানের অনাবাদি বা পরিত্যক্ত ২০০ একর জমিতে আব্দুল মতিনসহ প্রায় দেড়শো কৃষক সারা বছর টমেটো,শসা, শিম,করলা,মরিচ, ফুলকপি,বাঁধাকপিসহ নানা জাতের সবজী চাষ করে থাকেন।

    গত বছর ১০ একর জমিতে চাষ করে আব্দুল মতিনের লাভ হয় ছয় লক্ষ টাকার উপরে। এ বছর তিনি নিজে ১৫ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজীর চাষ শুরু করেছেন।এছাড়া এখানে তার নার্সারীও রয়েছে। এ নার্সারী থেকে কমলগঞ্জ ও আশেপাশের উপজেলার শতশত সবজী চাষী চারা ক্রয় করে নেন। প্রতিদিন তার জমিতে ৪০জন বাঙালী ও বেকার নারী পুরুষ চা শ্রমিক কাজ করেন।পাত্রখোলা চা বাগানের পরিত্যক্ত এসব জমিতে প্রতিদিন নারী পুরুষ মিলিয়ে দেড়শতাধিক শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সিকন্দর আলী,সুহেল মিয়া,রেজাক মিয়া,জয়নাল মিয়া প্রমূখ চাষীরা জানান,করোনার ক্রান্তিকালে ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখে তারা কৃষিকাজে উৎসাহিত হয়ে চা বাগানের অনাবাদী জমিতে বছর জুড়ে চাষাবাদ শুরু করেন,যাতে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে বাংলাদেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতিকে আরও চাঙা করতে পারেন এ আশায়।তবে আব্দুল মতিন ও সাদেক হোসেন বলেন, শস্যভান্ডার খ্যাত কমলগঞ্জে একটি হিমাগার স্থাপন করা গেলে আমরা উৎপাদিত কৃষিপন্য সংরক্ষণ করে সারা বছর বিক্রি করতে পারতাম।

    এছাড়া গভীর নলকূপ না থাকায় আমরা সময়মতো পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা পাই না। তারা পাত্রখোলা চা বাগানের উক্ত জমিতে সরকারিভাবে কয়েকটি গভীর নলকূপ স্থাপনের দাবী জানান। সম্প্রতি , কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়রম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান,উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক,উপজেলা কৃষি অফিসার আশরাফুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান আব্দুল মতিনদের সবজী খেত পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি চাষীদের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা শুনে তাদের জন্য স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ, গভীর নলকূপ স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন।