চট্টগ্রামে বহুল প্রত্যাশিত ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের যাত্রা শুরু

    0
    294

    এখন থেকে চট্টগ্রামেই মিলবে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা

    চট্টগ্রামের বহুল প্রত্যাশার ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের যাত্রা শুরু হল  শনিবার সকাল ১০টা থেকে। এ হাসপাতাল উদ্বোধন করবেন বিশ্বের খ্যাতনামা কার্ডিয়াক সার্জন, ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ডা. দেবী শেঠী।এখন থেকে চট্টগ্রামেই মিলবে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা।
    নগরীর পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালের পাশে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল। এর হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসা থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রম ডা. দেবী শেঠীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। এই বিভাগের নাম দেয়া হয়েছে ইম্পেরিয়াল-নারায়ণা কার্ডিয়াক বিভাগ। ইতোমধ্যে ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ণা কার্ডিয়াক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের একটি টিম চট্টগ্রামে পৌঁছে গেছেন। ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক দেবী শেঠী ‘কর্ণাটক রত্ন’ পুরস্কারও পেয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা পুরস্কারে ভূষিত এই চিকিৎসক ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষের হৃদযন্ত্রে সার্জারি করেছেন। মাত্র নয়দিন বয়সী এক শিশুর হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচার করে তিনি আলোচিত হন। গরিব এবং দুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েও প্রখ্যাত এই চিকিৎসক ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন।
    চট্টগ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর হৃদরোগের চিকিৎসা করাতে দেবী শেঠীর হাসপাতালে যান। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কষ্ট লাঘবে চট্টগ্রামেই যাতে হৃদরোগের বিশ্বমানের চিকিৎসা হয় সেজন্য ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. দেবী শেঠীকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন। দেবী শেঠীর সাথে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। যাতে এই হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের যাবতীয় দায়দায়িত্ব ডা. দেবী শেঠীর ওপর অর্পণ করা হয়। তিনি ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ণা কার্ডিয়াক সেন্টারের প্রধান সার্জন ছাড়াও নার্স এবং আয়া থেকে শুরু করে পুরো টিমই চট্টগ্রামে পাঠান। জানা গেছে, এখানে কার্ডিয়াক বিভাগের যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষাও ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ণা কার্ডিয়াক সেন্টারের মতোই পরিচালিত হবে। হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যাঙ্গালুরুর চিকিৎসাই পাওয়া যাবে ইম্পেরিয়ালে।
    আজ সকালে বিশেষ একটি ফ্লাইটে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম আসবেন ডা. দেবী শেঠী। সাথে তাঁর বড় পুত্র বিরেন শেঠীসহ হাসপাতালের একটি টিমও থাকছে। দুপুরে ডা. দেবী শেঠী ব্যাঙ্গালুরু ফিরে গেলেও তাঁর টিম থেকে যাবে চট্টগ্রামে।
    চট্টগ্রামের মানুষ বহুদিন ধরে এ হাসপাতাল চালুর অপেক্ষা করছিলেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও লেখালেখি হয়েছে। অবশেষে হাসপাতালটি কার্যক্রম চালু করায় অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, চট্টগ্রামে বিশ্বমানের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার যেই আশা মানুষ বহুদিন ধরে করছিলেন আজ থেকে তা হাতের নাগালে পৌঁছে যাচ্ছে। এটি অনেক বড় একটি ব্যাপার।
    ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের বোর্ড চেয়ারম্যান ও চিটাগাং আই ইনফারমারি এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেঙ (সিইআইটিসি) এর ম্যানেজিং ট্রাস্ট্রি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেছেন, শুধু চট্টগ্রামেরই নয়, দেশের চিকিৎসা সেবায় ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল আগামী অন্তত ১৫ বছর এগিয়ে থাকবে। প্রায় ৯০০ কোটি টাকার এই হাসপাতালে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশ্বের সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের এই হাসপাতালে শুধু ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর চিকিৎসাই নয়, ইউরোপ এবং সিঙ্গাপুরের সমমানের স্বাস্থ্যসেবাও মিলবে। ট্রাস্ট পরিচালিত এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে দেশের মানুষের আর্থিক বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। দেশের শীর্ষ হাসপাতালগুলোর চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
    অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, আমাদের বহুদিনের চেষ্টা ছিল বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা। গত ১০ বছর ধরে চেষ্টার ফসল আজকের ইম্পেরিয়াল। তিনি বলেন, ব্যবসার জন্য নয়, চট্টগ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েই কিছু মহৎ হৃদয়ের মানুষ এই হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন। যারা লাভের চিন্তা না করেই এই হাসপাতালের জন্য টাকা দিয়েছেন।
    ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের বোর্ড মেম্বার ও সিইআইটিসি ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ মালেক বলেন, আমরা বহুদিন ধরে চট্টগ্রামে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবার অভাব বোধ করছিলাম। এখানে উন্নতমানের স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়ায় প্রতি বছরই হাজার হাজার মানুষ প্রতিবেশি দেশ ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে ছুটতেন। যেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষকে নানাভাবে হয়রানির শিকারও হতে হয়। আমরা মানুষের এই ভোগান্তির অবসান ঘটাতে চেয়েছি। আমরা চট্টগ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছি। এই হাসপাতালের মাধ্যমে আমরা চট্টগ্রামের অসুস্থ মানুষ এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য কাজ করবো।
    এম এ মালেক বলেন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল একেবারে নীরবে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবায় একটি বিপ্লব সাধন করেছে। এখানকার মানুষ আজ থেকে মানুষ সেই বিপ্লবেরই সুফল পাবেন।
    ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ডিরেক্টর (স্ট্র্যাটেজিক কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট) মোহাম্মদ রিয়াজ হোসেন বলেন, সাত একর জমির মধ্যে ৫টি ভবন নিয়ে মোট ৬ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গায় এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের নার্সেস এবং টেকনিশিয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এই হাসপাতালের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি বিখ্যাত স্থাপত্য সংস্থা এই হাসপাতালের মূল নকশা প্রণয়ন করে। একটি ইউরোপিয়ান কনস্যালটেন্ট গ্রুপ নকশা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়নে প্রকৌশল, তথ্য প্রযুক্তি এবং বায়োমেডিকেল বিষয়ে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করেছে।
    রিয়াজ হোসেন জানান, যে কোনো ধরনের ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ, রোগীদের নিরাপত্তা এবং কর্মীদের নিরাপত্তা-এই তিনটি জিনিসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে উন্নতমানের সার্বক্ষণিক ইমার্জেন্সি সেবা এবং কার্ডিয়াক, ট্রান্সপ্ল্যান্ট, নিউরো, অর্থোপেডিক ও গাইনি অবস্‌ ইত্যাদি সম্বলিত ১৪টি মডিউলার অপারেশান থিয়েটার; আছে ১৬টি নার্স স্টেশন ও ৬২টি কনস্যালটেন্ট রুম সম্বলিত বহির্বিভাগ এবং আধুনিক গুণগত মানসম্পন্ন ৬৪টি ক্রিটিকাল কেয়ার বেড; নবজাতকদের জন্য ৪৪ শয্যাবিশিষ্ট নিওনেটাল ইউনিট এবং ৮টি পেডিয়াট্রিক আই সি ইউ। রোগী ও তার সাথে আগত স্বজনদের জন্য হাসপাতাল পরিধির মাঝে থাকার সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ শয্যা সংরক্ষিত আছে। হাসপাতালে ৮৮টি সিঙ্গেল, ৭৬টি ডাবল কেবিন, ৮টি পেডিয়াট্রিক আই সি ইউ, রোগীর স্বজনদের থাকার জন্য ৪০টি রুম এবং ২৭১ জন থাকার ডরমেটরি রয়েছে বলে জানান রিয়াজ হোসেন।দৈনিক আজাদি