‘গ্রীসে খুন নবীগঞ্জের দুই প্রবাসীর পরিবারে শোকের মাতম

    0
    235
    সানিউর রহমান তালুকদার,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে:  আব্দুল মমিন (৪০)। প্রায় চৌদ্দ বছর পূর্বে প্রবাসে পাড়ি জমান। প্রথমে ইরান এরপর তুরস্ক হয়ে ইরোপের দেশ গ্রীসে যান। সেখানে দশ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন। কাজ করতেন গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের আসপোগিরগো এলাকায়। তার বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বড় ভাকৈর ইউনিয়নের কামড়াখাই গ্রামে। তার পিতা আব্দুর রাজ্জাক। একই গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে শাহীন মিয়াও পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে সাত বছর আগে ওইভাবে পাড়ি দেন প্রবাস জীবনে। সবে দুই বছর হয়েছে ইরোপের দেশ গ্রীসে যান। সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেন আব্দুল মমিন’র কাছে। দুইজন কাজও করতেন একই কোম্পানিতে।
    কিন্তু গত মঙ্গলবার ভোর রাতে কোনো এক সময় ইউরোপের দেশ গ্রীসে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন তারা দুইজনই। ঘটনাটি ঘটে গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের আসপোগিরগো এলাকায়। ওইদিন স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ মরদেহগুলো উদ্ধার করে গ্রীসের পুলিশ। এ হত্যাকান্ডের খবরে নিহতের বাড়িতে চলছে স্বজনদের শোকের মাতম। ছেলের শোকে নিহতের পিতা মাতা অচেতনপ্রায়। অশ্রুসিক্ত নয়নে অপেক্ষায় আছেন কখন ছেলের লাশ বাড়ি ফিরবে।
    জানা যায়, ওই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল মমিন (৪০) ও একই গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে শাহীন মিয়া (২৫) পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে গ্রীসের আসপোগিরগো এলাকায় একটি কন্টেইনার কোম্পানিতে পাহাড়াদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আব্দুল মমিন প্রায় ১৪ বছর ধরে প্রবাসে বসবাস করছেন। ইরান, তরস্ক হয়ে প্রায় দুই বছর পূর্বে গ্রীসে যান শাহীনও। মমিনের সেখানে কাজে তিনিও যোগ দেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় একদল সন্ত্রাসীরা একজনের মাথায় এবং অন্যজনের গলায় গুলি করে হত্যা করে। পরদিন সকালে স্থানীয়রা দুই মরদেহ দেখতে পেয়ে সেখানের পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে তাদের জিম্মায় নিয়ে যায়।
    সেখানের বসবাসরত প্রবাসীরা জানান, দু’টি কন্টেইনারে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয় সন্ত্রাসীরা। এসময় মমিন ও শাহীন বাঁধা দিলে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এনিয়ে পুলিশ তদন্তে নেমেছে এবং মরদেহগুলো বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
    নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তারা বাড়িতে টাকা পাঠানোর জন্য টাকা জমা করেছিল। তাদেরকে খুন করে তাদের টাকা পয়সা লুট করেছে সন্ত্রাসীদল। নিহত আব্দুল মমিনের ২ ছেলে ১ মেয়ে। বাবা হত্যার বিচার দাবী করে দেশে লাশ আনার ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে তারা।
    নিহত আব্দুল মমিনের মা গুলেছা বিবি কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আমার ছেলেকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে আমি এর বিচার চাই এবং সরকারের কাছে আমার একটাই দাবী ‘আমার ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে চাই’। অপরদিকে নিহত শাহীনের পিতা নুর হোসেন জানান, ‘আমার অবিবাহিত শাহীন পরিবারের কথা চিন্তা করে বিগত সাত বছর পূর্বে প্রবাসে যায়, সেখানে ইরান, তুরস্ক হয়ে দুই বছর ধরে গ্রীস বসবাস করে আসছে, তার এ দুর্ঘটনার আগে আমাদের সাথে কথাও হয়েছে শাহীনের, এমন ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই, এবং আমার ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে চাই।
    এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহিউদ্দিন জানান, খবরটি শুনে তিনিও শোকাহত। লাশ দেশে ফেরাতে সরকারীভাবে যা কিছু করতে হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি।