গ্রামীণফোন দানবীয় আচরণ করেছেনঃটেলিযোগাযোগ মন্ত্রী

    0
    220
    ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন,সবচেয়ে বাজে সেবা, বাজে নেটওয়ার্ক নিয়েও মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন (জিপি) দানবীয় আচরণ করেছেন। তিনি বলেন, জিপির গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু গ্রাহকহারে সর্বনিম্ন স্পেকট্রাম দিয়ে সেবা দিচ্ছে। স্পেকট্রাম না থাকার কারণে গ্রাহকের সেবা দেয়ার মতো অবস্থাও নাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে যখনই অপারেটরটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় তারা আদালতের আশ্রয় নেয় এবং বছরের পর বছর ঝুলে থাকে।
    আবার বাংলাদেশকে হুমকী দিয়ে প্রেসিডেন্টকে উকিল নোটিশ পাঠায়, আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে দিন শেষে তারা বাংলাদেশেই ব্যবসা করবে এবং বাংলাদেশের আইন-আদালত, বিধি-বিধান তাদের মেনেই ব্যবসা করতে হবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে সচিবারয়ে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এর সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

    গ্রামীণফোনের ভয়ংকর সেবা: মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশের সাড়ে সাত কোটি গ্রাহক একটি মাত্র অপারেটরের (জিপি)। এসব গ্রাহককে সেবা দেয়ার জন্য যে পরিমাণ স্পেকট্রাম তাদের অপারেটরদের নেয়ার কথা তা নেয়নি। গ্রাহকহারে সর্বনিম্ন স্পেকট্রাম দিয়ে অপারেটরটির সেবা এখন ভয়ংকর। আমরা কোয়ালিটি অব সার্ভিসের গাইডলাইন তৈরি করে যখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি দুর্ভাগ্যজনকভাবে যেটা হচ্ছে- জিপির বড় প্রবণতা কাজ করে যখনই তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় তখনই তারা আদালতের আশ্রয় নেয়। আদালতে গেলে বছরের পর বছর চলে যায়। অন্যান্য বিষয়েও অপারেটরটি একই কাজ করে।

    গ্রামীণফোনের কলড্রপে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সংসদে, সংসদের বাইরে এমপি, মন্ত্রী এমন কেউ নাই যে প্রশ্ন তুলে নাই কেন আমি মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারি না। আমার নিজের অভিজ্ঞতা- ধানমন্ডি ২৮ নম্বর বাসা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আসতে কলড্রপ হয় কমপক্ষে ৮ বার। এর কোন প্রতিকার আমি গত তিন বছরে পাইনি। এটি চলতে দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে সরকার যদি উদ্যোগ গ্রহণ না করে তাহলে জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকারের যে ভূমিকা ছিল সেটি পালন করা হয় না।

    গ্রামীণফোনের পাওনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোনের কাছে যে পাওনা রয়েছে তা ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অপারেশন্স এর অডিট করে যে ত্রæটি পেয়েছি। প্রাপ্য টাকার সাথে যুক্ত হয়েছে ট্যাক্স, ভ্যাট, জরিমানা ও বিলম্ব সুদ। এই অর্থ পরিশোধের জন্য তাদেরকে পর্যাপ্ত সময় দিয়েছি। অডিটের আপত্তির পর হাইকোর্টের নির্দেশে দ্বিতীয়বার অডিট করা হয়েছে, তাদেরকে অবহিত করা হয়েছে এবং সবই জানে। এরপরও তাদেরকে বলা হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে সব সমাধান করা যাবে।

    সমাধানের জন্য অর্থমন্ত্রীসহ তাদেরকে নিয়ে বসে গ্রামীণফোনকে ২০০ কোটি এবং রবিকে ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলা হলো, প্রয়োজনে কিস্তিতে। এটা বোঝাতে যে তারা বকেয়া পরিশোধ করতে আন্তরিক। দুইজন মন্ত্রী বসে যেটা করলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা এক টাকাও পরিশোধ না করে আদালতে মামলা করেছে।

    এর মধ্যে জিপির বিষয়ে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছে এবং রবিরটি বিচারাধীন। এখন তো আদালতের নির্দেশের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নাই। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে চলবো। জিপির মামলার রায়ে বলা হয়েছে তিন মাসের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা দেয়ার জন্য। রবির মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

    তিনি বলেন, জিপির বিষয়ে আদালত রায় দিয়েছে। আদালত নির্দেশনা দেবে তা মেনে চলবো। রবি প্রস্তাব দিয়েছে মামলা তুলে নিতে চায়। আমরা বলেছি- মামলায় আমরা যায়নি, তারাই গিয়েছে। মামলা তুলে নেয়ার প্রেক্ষিতে আলোচনার টেবিলে বসতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু মামলা চলাকালে আমি কোন বিষয়ে কথা বলতে পারিনা সেটি আদালত অবমাননা হয়। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলা ঠিক না। তবে জিপির সাথে এখন বসতে পারবো না। তাদের বিষয়ে রায় আছে, দুই হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। এটা দেয়ার পর আদালত নির্ধারণ করবে পরবর্তী পদক্ষেপ কি?

    প্রেসিডেন্টকে উকিল নোটিশ: ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জানান, জিপি সিঙ্গাপুরের একটি আইন সংস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদকে উকিল নোটিশ দিয়েছে আর্বিট্রেশনের জন্য। আমি মনে করি এটা দুঃখজনক। বাংলাদেশে ব্যবসা করবে একটি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানটি প্রেসিডেন্টকে উকিল নোটিশ দিয়ে আর্বিট্রেশনের জন্য চাপ দিবে সেটা কোনভাবেই সহজে গ্রহণ করার মতো অবস্থা না। ব্যবসা যদি কেউ করে ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা ধরণের সমস্যা থাকবে। কিন্তু হুমকী-ধামকী দেয়া, আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা বলা কোনভাবেই মানা যায় না।

    তিনি জানান, উকিল নোটিশের বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সবাই জানে। আইনজীবীদের সাথে কথা বলেছি এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। কারণ যেটা তারা চাচ্ছে আর্বিট্রেশন যেন করা হয়। এর জন্য তো উন্মুক্ত আছি। আদালতে গিয়ে যদি কেউ যদি মামলা করে তাহলে আদালতের বাইরে গিয়ে আর্বিট্রেশন করার সুযোগ নেই। আদালত যদি আর্বিট্রেশন করতে বলে তাহলে করবো। মন্ত্রী বলেন, জিপি জানিয়েছে আর্বিট্রেশন না হলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে। বাংলাদেশের আদালতে হেরে গিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে কিছু হবে তা মনে হয় না। দিন শেষে তাদের বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হবে। বাংলাদেশের আইন মেনে ব্যবসা করতে না চাইলে আন্তর্জাতিক আদালত এসে বাংলাদেশে ব্যবসা করিয়ে দেবে না। বাংলাদেশেল আইন-কানুন, বিধি-বিধান মেনেই করতে হবে।

    জিপি-রবি উন্মাসিকতা কাজ করছে: গ্রামীণফোন ও রবির মধ্যে উন্মাসিকতা কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, রবি অথবা জিপি যতই বিদেশী কোম্পানি বলুক তারা বাংলাদেশে ব্যবসা করে। এদেশের আইন-বিধি বিধান মেনে করতে হবে। অডিটের সুরাহা করতে হবে। যদি কোন ভুল-ত্রæটি থাকে সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি। আদালতে গিয়ে ভুল ত্রæটি সমাধান হবে না। তবে আমরা চাই না পাওনা আদায়ের জন্য কোন প্রতিষ্ঠান ভোগান্তি পোহাক। কিন্তু রাষ্ট্রের অর্থ আদায় না করে বসে থাকতে পারবো না। অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

    তিনি বলেন, জিপি ও রবির মধ্যে এক ধরণের উন্মাসিকতা কাজ করে। এই উন্মাসিকতা হচ্ছে- তারা মনে করে যে কোন জিনিসে বাংলাদেশকে বাইপাস করে করা যাবে। বাংলাদেশকে হুমকী-ধামকী দিয়ে, আন্তর্জাতিক আদালতের কথা বলে টাকা না দিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবো। আমরা আন্তর্জাতিক আদালতকে সম্মান করি। কিন্তু প্রত্যেক দেশ তার আইন-আদালত দিয়ে চলে। আমি আমার পাওনা আদায় করতে পারবো না তা হতে পারে না। পাওনা দাবি করেছি। এমন না যে বাড়তি কর, ভ্যাট দাবি করেছি। ভুল করেছো, ভুল করে টাকা দাওনি সেটা চাইছি। মূলটা পরিশোধ করে বলতে পারতো সুদ বা জরিমানা মাফ করে দাও। তাহলেই সমস্যার সমাধান হতো। কিন্তু পুরোটা নিয়ে টান দিয়েছে তা হতে পারে না।

    টেলিটককে শক্তিশালী করা হচ্ছে: ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, সুন্দর সুন্দর বাক্য বিনিময় করলে টেলিকম সেবার মান উন্নয়ন হবে না। প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক ব্যবসা দাঁড় করাতে হবে। এজন্য ২০১৭ সাল পর্যন্ত টেলিটকে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছিল একই পরিমাণ ২০১৯ সালে করা হয়েছে। ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে আছে। সেটি বাস্তবায়ন করা গেলে অপারেটরটির নেটওয়ার্ক ৩০ শতাংশ থেকে ৮২ শতাংশে উন্নীত হবে। তখন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার সক্ষমতা আসবে।

    আইএসপিতে শৃঙ্খলা: মহল্লায় মহল্লায় অবৈধ ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, নির্ধারিত মূল্যে ও গতিতে সেবা প্রদান না করার বিষয়ে মন্ত্রী জানান, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে। পুরোটা হবে না কারণ রাজনৈতিক সম্পর্ক যুক্ত আছে। রাজনীতিবিদদের ভূমিকা আছে। বিটিআরসি থেকে যে পরিমাণ আইএসপি লাইসেন্স দিয়েছে তার চেয়ে বেশি অবৈধ আছে। ২০১৮ থেকে বার বার বলে আসছি অবৈধ লাইসেন্স বাতিল করতে এবং নতুন লাইসেন্সের জন্য যারা আবেদন করেছে তাদের যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স দেয়া। তিনি বলেন, আইএসপি লাইসেন্স সবগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তাদের আর্থিক সক্ষমতা, কারিগরি সক্ষমতা আছে কিনা শর্তের ভিতরে আছে কিনা। ২০২০ সালের মধ্যে পুরোপুরি ছকের মধ্যে আসবে। আইএসপি লাইসেন্স ও অপারেশন্স সব কিছুই শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে।

    এছাড়াও মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে ৬টি দেশ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। ইন্টারনেটের মূল্য নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটর ইচ্ছামত দাম নির্ধারণ করে। দাম ও প্যাকেজের ভ্যালিডিটি ইচ্ছামত করে। ব্রডব্যান্ডেও সমস্যা আছে। তবে সবকিছু সমাধানে তার মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও জানান তিনি। এসময় টিআরএনবির সভাপতি মুজিব মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার খান শিপুসহ সংগঠনটির সদস্যরা।ইনকিলাব