গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সমাবেশস্থলে কর্মীরা

    0
    212

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবরবৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের সমাবেশ শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির ঢাকা মহানগর সভাপতি ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। দুপুর দুইটা ১৫ মিনিটে পবিত্র কোরআর তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
    শুরুতেই বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি আব্দুল জব্বার। তবে সমাবেশ মঞ্চের সামনে বসা নিয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়েছে বিএনপির ডেমরা শাখা ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা। জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা শুক্রবার সকাল ৯টার দিকেই মিছিল নিয়ে সমাবেশমঞ্চের একেবারে সামনে এসে অবস্থান নেয়।বেলা সোয়া ১টার দিকে ডেমরা বিএনপির ব্যানার নিয়ে একদল নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে পৌঁছে মঞ্চের সামনে বসতে চাইলে ঘটে বিপত্তি।
    ঘটনাস্থল থেকে একজন প্রতক্ষদর্শী জানান, শিবিরের লোকজন অবস্থান ছাড়তে রাজি না হওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে বাক বিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতিতে গড়ায়।এ সময় শিবিরের এক কর্মীকে বিএনপির ব্যানার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করতেও দেখা যায়।এরপর শিবিরের সিনিয়র নেতারা এসে তাদের কর্মীদের সরিয়ে নিলে দুই পক্ষের মধ্যে মিটমাট হয়ে যায়। দুই পক্ষই মঞ্চের সামনে পাশাপাশি অবস্থান নেয় এরপর।এ সময় মঞ্চে উঠে এক বিএনপি এক নেতা মাইকে বলেন- আমাদের মধ্যে আজ কোনো বিরোধ নাই। আজকে আমরা ভাই ভাই। আমাদের লক্ষ্য একটাই। আমরা হাসিনা সরকারের পতন চাই। হাতাহাতির সময় সেখানে উপস্থিত ডেমরা শাখা ছাত্রদলের কর্মী ইমরান হোসেন বলেন, একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এটা কেটে গেছে। আমরা এখন শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে অংশগ্রহণ করব।
    গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ইতিমধ্যে সমাবেশস্থলে হাজির হয়েছেন নেতাকর্মীরা। আয়োজকদের পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে, সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধী দলীয় নেতা বিকেল চারটার দিকে সমাবেশ মঞ্চে আসবেন। সকাল থেকেই এই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। দেখা গেছে, রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা নানা ধরনের ব্যনার ফেস্টুনসহ মিছিলসহকারে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। এদিকে জামায়াত-শিবির যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটাতে পারে এ জন্য রাজধানীসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিভিন্ন গেটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।
    সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব পাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ঘেঁষে পশ্চিমমুখী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ১৮ দলের কর্মী সমর্থকরা সকাল থেকেই ব্যানার নিয়ে আসতে থাকেন সমাবেশস্থলে।মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসনের একটি, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ১৭টি ও শরিকদলের ১৭টিসহ মোট ৪০টি আসন রয়েছে।
    বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, আজ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জানা গেছে, নির্বাচনকালীন গ্রহণযোগ্য সরকারের দাবিতে তিনটি কর্মসূচি চূড়ান্ত করে রেখেছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে- লাগাতার হরতাল, সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথ অবরোধ ও ঢাকা ঘেরাও। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, কয়েকটি ধাপে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে আজ কী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে তারা বলেননি। জানা গেছে, ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন বহাল রাখায় এর পরেই লাগাতার কর্মসূচির দিকে যাবে বিএনপি। অন্যদিকে, ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ রাজধানীজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে র্যা ব, বিজিবি। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। গত বুধবার থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বৃহস্পতিবার থেকে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়। ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশকে ঘিরে বড় ধরনের নাশকতা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে এ ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
    ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেছেন, জনসাধারণের জানমাল, সরকারি সম্পত্তি রক্ষাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে ডিএমপি। যেকোনো ধরনের নাশকতা, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বর্তমান সরকার অবৈধ হলে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও অবৈধ। ২৫ অক্টোবর থেকে বর্তমান সরকার আর বৈধ নয়, খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের একথা বলেন। তিনি বলেন, আজ থেকে সরকার যদি অবৈধ হয় তাহলে তিনি এখনো বিরোধদলীয় নেতা আছেন কিভাবে। সরকার যদি অবৈধ হয় তাহলে বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাটাও অবৈধ। আজ শুক্রবার সকালে সাভারে ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আশুলিয়ায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের শেষ পর্যায়ের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব বলেন। এসময় তার সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন সড়ক বিভাগের ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহাবুদ্দিন খান, মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন প্রমুখ।
    মন্ত্রী বলেন, সরকারই যদি অবৈধ হয় অবৈধ সমাবেশ স্থল থেকে সরে এসে তারা কেন সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে যোগ দিতে সরকারের বৈধ অনুমতি নিলেন। তিনি বলেন, শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে বিরোধীদল যেভাবে পল্টন থেকে সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরিয়ে এনেছে তেমনি আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনেও তারা অংশ নেবে বলে আশা করি। তিনি আরো বলেন, পল্টনে সমাবেশ করার জেদ পরিহার করে বিরোধী দলের সমাবেশস্থল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত উৎকণ্ঠিত জনগণের মাঝে রাজনৈতিক খরার মধ্যে এক পশলা বৃষ্টির মতো স্বস্তি এনে দিয়েছে। সরকারও শুভ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে।
    ২৫ অক্টোবর নিয়ে জনগণের মাঝে যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিলো, তা কিছুটা কেটে যাচ্ছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগেই বলেছিলাম, ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশের ওপর আকাশ ভেঙে পড়বে না। বিরোধীদল যখন নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন, তখন সরকার ছিলো কঠোর অবস্থানে। আবার সরকার যখন সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে, বিরোধীদল তখন নমনীয় হয়ে নয়াপল্টন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করছে। তিনি আরো বলেন, আমরা কিন্তু এখন মাঠে নেই। সবাই ধারণা করেছিল সরকার ও বিরোধী দল পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করবে। আমরা কিন্তু করছি না। বিরোধীদল একাই মাঠে রয়েছে। তাই আজ কোনো সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায় বিরোধীদল এড়াতে পারবে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি।বাহিনীকে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।