গার্মেন্টস খাতে শ্রমিক ছাঁটাই চলছেঃখরচ কমানর উদ্যোগ

    0
    315

    আমারসিলেট24ডটকম,২৮ডিসেম্বরঃ গার্মেন্টস মালিকরা আসন্ন বছরের শুরুতেই বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করার চিন্তা করছেন। বাড়তি খরচ কমাতেই তৈরি পোশাক খাতের মালিকপক্ষ এ উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা যায়। কারণ চলতি ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকেই মজুরি বোর্ড ঘোষিত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কার্যকর করার নির্দেশনা রয়েছে। ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩শ’ টাকা হওয়ায় মালিকপক্ষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আর সেই বাড়তি খরচ কমাতেই শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে মালিকপক্ষ। সেক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ (হেলপার) শ্রমিকই বেশি ছাঁটাই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
    এদিকে নানা নাটকীয়তার পর মজুরি বোর্ড চলতি বছরের ২১ নভেম্বর গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে ৫ হাজার ৩শ’ টাকা। যা ছিল ৩ হাজার টাকা। মজুরি বোর্ডের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর এখন একজন হেলপারের ন্যূনতম বেতন ৫ হাজার ৩শ টাকা। আর একজন  জুনিয়র অপারেটরের বেতন ৫ হাজার ৮শ টাকা। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস মালিকরা হেলপার নিয়োগ তো দূরের কথা, বরং কারখানাগুলোতে কর্মরত হেলপারদের ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একই সাথে জুনিয়র অপারেটরদের প্রতিদিনকার উৎপাদন টার্গেট বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
    অন্যদিকে গার্মেন্টস শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর থেকে পোশাক কারখানা থেকে হেলপারদের প্রায় গণহারে ছাঁটাই করা হচ্ছে। ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো থেকে  প্রায় ২০ হাজার হেলপার ছাঁটাই করা হয়েছে। আর তাদের কাজ করিয়ে নেয়া হচ্ছে জুনিয়ার হেলপার দিয়ে। পাশাপাশি জুনিয়র অপারেটরদের প্রডাকশন টার্গেটও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে গড়ে ২০ শতাংশ।
    সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার পর আশুলিয়ার আইরিশ গার্মেন্টস থেকে ১২৬ জন শ্রমিক, জিরাবো এলাকার জাসকো বাংলা গার্মেন্ট থেকে ৩৫ জন হেলপার ছাঁটাই করা হয়েছে। আইরিশ ও জাসকো বাংলার মতো প্রায় প্রতিটি তৈরি পোশাক কারখানা থেকেই হেলপার ছাঁটাই অব্যাহত রয়েছে। খরচ কমাতে মালিকপক্ষ যে হারে হেলপার ছাঁটাই করছে তাতে দেশের পোশাক শিল্পে ভবিষ্যতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
    সূত্র আরো জানায়, প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারখানা থেকে হেলপার ছাঁটাইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। যদিও এখনো এদেশের তৈরি পোশাক খাতে দক্ষ শ্রমিকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এর মধ্যে এভাবে গণছাঁটাই চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এ খাতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। মালিকপক্ষ যদি হেলপার নিয়োগ না দেন বা ছাঁটাই করে দেন তাহলে শ্রমিকরা কাজ শিখবে কি করে। কারণ কাজ শেখার প্রথম ধাপই হচ্ছে হেলপার। এরপর তারা জুনিয়র অপারেটর হয়ে ধারাবাহিকভাবে সিনিয়র অপারেটর হয় একেকজন শ্রমিক। এ পরিস্থিতিতে হেলপার নিয়োগ না দিলে ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক পাওয়া মুশকিল হবে।পোশাক কারখানা থেকে হেলপার ছাঁটাইয়ের কথা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম। তিনি বলেন, শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো বাড়ানোর পর মালিকদের খরচ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। আর ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনাকালে ক্রেতারা পণ্যের মূল্য বাড়ানোর আশ্বাস দিলেও তারা তা রাখেনি। বরং তারা দিন দিন মূল্য কমাতেই আগ্রহী। খরচ বাড়ার সাথে মালিকদের আয় না বেড়ে বরং কমছে। বাড়তি বেতন তারা কিভাবে দেবেন? এ কারণেই বাধ্য হয়ে মালিকরা হেলপার ছাঁটাই করছে। কারণ মালিকরা নিরূপায়।
    উল্লেখ্য, চলতি বছরে সাভারে রানা প্লাজা ধসে বিপুলসংখ্যক শ্রমিকদের মৃত্যুর পর ন্যূনতম মজুর বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে শ্রমিকরা দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে আসে। এর ফলে গত ৫ জুন ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠিত হয়। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে এবং বিদেশীদের চাপে ন্যুনতম মজুরি ৫ হাজার ৩শ টাকা মেনে নিতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ।তবে হেলপার ছাঁটাই মালিকপক্ষের জন্যই আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে অনেকের ধারনা।