গান গেয়ে সংসার চালায় শার্শার পল্লীর জামাত আলী

    0
    258

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬মার্চ,এম ওসমানঃ “দরদী গো…. কি চেয়েছি আর কি যে পেলাম, সাধের প্রদীপ জ্বালতে গিয়ে নিজেই আমি পুড়ে গেলাম” চৈত্রে কাঠ ফাটা দুপুরে ভাফসা গরম বাতাসে ভেসে আসছিল এক সুকণ্ঠ করুণ সুর। সুরটি যেন হৃদয় ছুয়ে গেল। দাঁড়িয়ে পড়লাম। জরুরী কাজ থাকা সত্বেও ছুটে গেলাম ভেসে আসা সুরের দিকে।

    বাগআঁচড়া বাজারের বাগুড়ী ফুলতলার এক চায়ের দোকান। সেখানে গিয়ে দেখি ৪৮/৫০ বছরের এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মধ্যবয়সি ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছে বিভিন্ন পেশার প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ। সবাই দৃষ্টিতে চেয়ে আছে লোকটির দিকে। খোছা খোছা দাড়ি, ময়লা একটি শার্ট গায়ে, উপরোক্ত গানটি গেয়ে চলেছে। আগত শ্রোতাদের সাথে দাড়িয়ে তার গানটি শুনতে লাগলাম। নিস্তব্দ পরিবেশ। একের পর এক গান গেয়ে চলেছে। একই সাথে শ্রোতার সংখ্যাও বাড়ছে।

    কতদিন পরে এলে একটু বসো / এইতো সেদিন তুমি আমারে বোঝালে/ কত দিন দেখিনি তো, তবু মনে পড়ে তব মুখ খানি / আবার হবেতো দেখা, এ দেখায় শেষ দেখা নয় তো/ দ্বীপ ছিল শিখা ছিল শুধু তুমি ছিলেনা বলে আলো জ্বললো না— । একে একে গোটা ৩০টি গান শেষ করলো জন্মান্ধ জামাত আলী।

    প্রায় ঘন্টাখানেক পর গান গাওয়া শেষ হলে কথা হয় ঐ জন্মান্ধ জামাত আলী সঙ্গে। শার্শার কায়বা ইউনিয়নের পাচ কায়বা গ্রামের ভূমিহীন দিনমজুর আমজাদ আলী মোড়লের বড় ছেলে। জন্ম দুটি সুন্দর চোখের আলো থেকে বঞ্চিত সে। আলোয় ঝলমল এই পৃথিবী দেখা থেকে চিরকালের জন্য বঞ্চিত জামাত আলী।

    ইতি মধ্যে বিয়ে করে সংসার বেধেছে সে।

    ২ মেয়ে ১ ছেলে মিলে ওদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দিনমুজুর বাবা সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যায়। প্রতিদিনের দুই মুঠো খাবারের সন্ধানে জামাত বেছে নেয় এই গান গাওয়াকে। পথে পথে কিংবা চায়ের দোকানে গান গেয়ে দর্শকদের খুশি করে যে অর্থ পায় তাই দিয়ে চলে ওদের পুরো সংসার।

    জামাত আবেগ জড়িত কণ্ঠে জানায়, ‘আমি শুনেছি সরকার প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করে। আমাকে একটু সহযোগিতা করলে আমার অনেক উপকার হবে।’ জামাত আরো জানায়, তার ভীষণ ইচ্ছা কোন মিডিয়াতে গান করার।

    ফিরে আসার সময় কানে ভেসে আসল জামাতের করুন সুরের কণ্ঠ- চার দেয়ালের মাঝে নানান দৃশ্যকে সাজিয়ে নিয়ে দেখি বাহির বিশ্বকে। আকাশ করে ছাদটাকে মুঠোয় ভরি দিনের সুর্য তারার রাতটাকে। বিশ্ব রুপে দৃঃশ্ব দেখায় চোখের অবিশ্বাষশ্বকে।

    এলাকাবাসী জানান, বিটিভি’র “ইদ্যাদি” অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হানিফ সংকেত গত ২০১৩ সালে ডিসেম্বর মাসে এসেছিল জামাত আলীর বাড়িতে এসেছিল। তাকে ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাসে ঢাকায় নিয়ে যাবার কথা থাকলেও দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে তার আর যাওয়া হয়নি।