আমার সিলেট ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে সরকারের অনুমতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, যে শর্তে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা পরিবর্তন করা যেতে পারে। মুমূর্ষু পরিস্থিতি হলে মানবিক বিষয়ে আইন দরকার হয় না। অবশ্য সরকারপক্ষের মতে, আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বেশ কয়েকবার প্রত্যাখ্যানের পরও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে গত বৃহস্পতিবার তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার আবারও আবেদন করেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বিএনপিদলীয় নারী সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে খালেদা জিয়ার আবেদন নতুন করে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাকে আবার জেলে গিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ও দণ্ডাদেশ স্থগিত করে যে দুটি শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তা শিথিল করে এখন তাকে বিদেশে যেতে দেওয়ার ‘সুযোগ নেই’।
অবশ্য বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মতে, আইন দিয়ে সবকিছু বিবেচনা করা যায় না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার বয়স, অসুস্থতা
ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাদের দাবি, আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এটা করা হচ্ছে। সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা মওকুফ বা সাজা কমাতে পারে। একই সঙ্গে উদাহরণ টেনে তারা বলেন, এর আগে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব কারাগারে থাকাবস্থায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। এ ধরনের অসংখ্য দৃষ্টান্ত ও উদাহরণ আছে।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সমকালকে বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কীভাবে বিদেশে যাবেন। তিনি (খালেদা জিয়া) তো দেশেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে তার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার এবং হাসপাতালে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বা আইনেরও বিধান নেই। তার মতে, চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড যদি সরকারের কাছে সুপারিশ করে সেটা হয়তো পরিস্থিতি ও মানবিক কারণে বিবেচনা করতে পারে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক সমকালকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারায় বলা আছে, সরকার কোনো শর্ত ছাড়া অথবা শর্তসাপেক্ষে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা স্থগিত করতে পারে। এখানে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা করার- এই দুই শর্ত দিয়েছিল। দ্বিতীয় শর্তটি সরকার বারবার পরিবর্তন করেছে। অর্থাৎ, ছয় মাসের শর্তটি সরকার ইতোমধ্যে তিনবার পরিবর্তন করেছে। যাতে খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির মেয়াদটি পুনরায় ছয় মাস করে বৃদ্ধি করা হয়েছে। দ্বিতীয় শর্তটি যদি পরিবর্তন করা যায়, তাহলে প্রথম শর্ত কেন পরিবর্তন করা যাবে না। তার মতে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। তিনি আরও বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা নিয়ে আইনমন্ত্রী সংসদে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার সঙ্গে আমি একমত নই। কোনো শর্ত বদলানো বা পরিবর্তন করা যাবে না, এটা মোটেও সঠিক আইনি ব্যাখ্যা নয়। শর্ত পরিবর্তনের ক্ষমতা সরকারের আছে।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, পরিস্থিতি মুমূর্ষু হলে মানবিক বিষয়ে আইন দরকার হয় না। তবে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেন না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা সবাইকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো উচিত। এটা করা হলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার আরও উন্নতি সাধিত হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সমকালকে বলেন, দুদকের মামলায় সরকারের হস্তক্ষেপ করার আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই। খালেদা জিয়ার যে আবেদনই থাকুক না কেন, তাকে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যেতে হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আইন খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছেন। সেই সাজা মওকুফের এখতিয়ার একমাত্র রাষ্ট্রপতির। এখানে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে না। সাময়িক মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য যে সুযোগটা সরকার দিয়েছে তা অনেক বেশি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন সমকালকে বলেন, সরকার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। এটা প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, সরকার নির্বাহী আদেশে যে কোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা মওকুফ বা স্থগিত করতে পারে। এখানে আইনগত কোনো বাধা নেই।