ক্ষুধার জ্বালায় সামাজিক সম্মান রক্ষা,র‍্যাব কর্মকর্তার উদ্যোগ

    0
    276

    জহিরুল ইসলাম,স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকাতে রাতে অন্ধকারে মধ্যবিত্তদের দোয়ারে ত্রাণ রেখে আসছে র‌্যাব ৯ এর এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম।
    দেশের মানুষ যখন করোনা ভাইরাসের কারনে সরকারী নির্দেশ অমান্য না করে মধ্যবিত্ত ও দিন মজুর পরিবারের উর্পাজনকারী ব্যক্তিরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না ফলে তাদের অনেকের ঘরে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
    ঠিক তখনি ক্ষুধার জ্বালা ও সামাজিক সম্মান রক্ষায় র‍্যাব কর্মকর্তা এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম স্থানীয় সংবাদের ভিত্তিতে মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরের দোয়ারে রাতের অন্ধকারে ৭ দিনের ত্রাণ নিজ হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রতিবেশীদের আড়ালে গোপনে সঙ্গোপনে।
    আজ প্রায় ১০দিন ধরে তিনি দিন-মুজুর রিক্সা চালক,ভিক্ষুক,প্রতিবন্ধী,বিধবা,এতিমদের এই সংকটময় সময় ত্রাণ বিতরণ করছেন।তার পাশাপাশি দু’দিন ধরে মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে ও রাতের অন্ধকারে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন।
    স্থানীয়রা তার এমন কাজে প্রশংসা করছেন এবং বলছেন, র‌্যাবের এই কর্তার উদ্যোগ মানবতার জন্য র‍্যাব পুলিশের এক অনন্য উদাহরণ।
    যেখানে বাড়ির মালিক ঘুম থেকে ওঠে সকালে ঘরের সদর দরজা খুললে দেখবেন ত্রানের প্যাকেট। তিনি হয়তো ভাববেন এটি কে দিয়ে গেল।এমনি এক কাজ করে যাচ্ছে র‌্যাব-৯ এর এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম।এ কাজে রয়েছে তার ক্যাম্পের অন্য অফিসারদের সহযোগিতা।

    প্রতিদিনের মত গতকাল রাতেও শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন এলাকাতে তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেন রাত ৯ টা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত। দিনের বেলাতে ক্ষুদ্র দোকানদার ও মধ্যবিত্তদের তথ্য সংগ্রহ করে রাতে নেমে যান ত্রাণ বিতরণে।ওনার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।
    আনোয়ার হোসেন শামিমের এমন কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নানা জনের কাছে।
    নুরুজ্জামান সাংস্কৃতিককর্মী বলেন,আমার দেখা মতে এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া মুশকিল।এককথায় বলতে গেলে ওনি প্রকৃতপক্ষে মানবতার সুপার হিরো।মানুষের দু:সময়ে অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ পৌছে দিচ্ছেন রাতের আধাঁরে এটি অন্য অফিসাদেরকে ও উৎসাহ প্রদান করবে।

    Md. Anwar Hossan   তার ফেইজবুক পোষ্টে লিখেন,

    “হায় মধ্যবিত্ত…!

    ছেলেসন্তান নিয়ে আধাপেটা খেয়ে দিন গুজরান করলেও তারা কখনোই ত্রাণ নেওয়ার সিরিয়ালে দাড়াবেন না। বাসার দরজায় নক করে কেউ ত্রাণ দিতে চাইলে সেখানেও তাদের না। “স্যরি, আমাদের কোনরকম ত্রাণ-টান লাগবে না”। এরা মধ্যবিত্ত। ক্ষুধার জ্বালার চাইতেও সামাজিক সম্মান এবং মাথা উঁচু করে রাখা এদের কাছে বেশি জরুরি। না পারেন চাইতে, না পান খাইতে।
    গত রাত থেকে মধ্যবিত্ত প্রকল্প শুরু করলাম। এলাকার মানুষদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে প্রকৃত প্রাপকদের দুয়ারে এভাবেই সঙ্গোপনে চাল- ডাল – তেল- নুন এর প্যাকেট রেখে আসা। জানলে/দেখলে হয়তো তারা মুখের উপরই না করে দিতেন, তাই এই গোপনীয় ত্রাণযজ্ঞ। গতকাল প্রথমদিনে দুটি গ্রামে গিয়েছিলাম। এভাবে প্রতিটি গ্রামেই অন্তত একবার করে যাওয়ার ইচ্ছে আছে আমার। আর আগের মতোই আমার প্রতিটি প্যাকেট প্রকৃত ক্ষুধার্ত এবং প্রকৃত বিপদে পড়া মানুষের হাতেই পড়বে, এটা আমি নিশ্চিত করব।

    ভাবছি, আজ সকালে দরজা খুলে পরিবারগুলোর ক্ষুধার্ত মানুষেরা যখন আমাদের রেখে আসা খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটগুলো দেখতে পেয়েছে, কেমন হয়েছিলো তাদের অনুভূতি !”

    তার স্ট্যাটাসে পাঁচ হাজারের অধিক লাইকসমর্থন,প্রায় সাড়ে চার শতাধিক বাহবা কমেন্ট পড়েছে এবং চার শত তিরানব্বইটি শেয়ার হয়েছে।  এর থেকে নিম্নে দু’একটি কমেন্ট তুলে ধরলাম।

    Maya Akter বাংলাদেশ টিকে যাবে আপনাদের হাত ধরেই। আল্লাহ্‌ আপনাদের নেক হায়াত দান করুন। সুস্থ থাকুন আর মানুষের সেবা করুন।

    Marjana Arisa স্যার.. ধন্যবাদ নয়,, আপনার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ যেনো আপনাদের মতো ভালো মানুষদের ভালো কাজ গুলোর উসিলায় হলেও এই ভাইরাস থেকে এই দেশকে রক্ষা করে।

    মেহেদী হাসান আপনাকে স্যালুট ভাইয়া আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ গুলো সত্যিই অনেক বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। আল্লাহ্ মেহেরবান।

    আনোয়ার হোসেন শামিমের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, আমি এই ধরনের সংবাদ শুনে কষ্ট পায় কিন্তু আমাদের সম্পদ,সামর্থ সবই সীমিত, তবে অনেকেই এগিয়ে আসেন এদের সাহায্যে। দেখেন যারা হাত পাততে পারে তারা কিছু না কিছু পেয়ে যাই কিন্তু যারা হাত পাততে পারেনা লোক লজ্জার ভয়ে;এই মুহুর্তে কঠিন সময় পাড় করছে তারা। সময় কঠিন হতে চলেছে আমাদের সামনে।তাই তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত নিয়ে সামর্থবানদের এগিয়ে আসা উচিত।