ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা আজ শেষ হচ্ছে

    0
    530

    ক্রীড়া ডেস্কঃ ২৯ অক্টোবর ২০১৯—বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক কালো অধ্যায়। জুয়াড়ির সঙ্গে কথোপকথন গোপন করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান। এই ক্রিকেট তারকাকে দুই বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। এর মধ্যে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হয়। বাকি এক বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হয় দেশসেরা ক্রিকেটারকে।

    দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এল নিষেধাজ্ঞার এক বছর। আজ বৃহস্পতিবার আইসিসির সব নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেলেন সাকিব। এখন থেকে সব ধরনের ক্রিকেটে খেলতে আর বাধা থাকবে না বিশ্বের অন্যতম অলরাউন্ডারের। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বড় ধাক্কাই দিয়েছিল গত বছরের ২৯ অক্টোবর। ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে হঠাৎ গুঞ্জন ওঠে, নিষিদ্ধ হতে পারেন দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব। এই খবরে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো দেশের ক্রিকেট। টানা ১২-১৩ ঘণ্টা মিরপুর শেরেবাংলায় ভিড় জমান গণমাধ্যমকর্মীরা। পুরো স্টেডিয়ামের চারপাশ ঘিরে ছিলেন ভক্তরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সন্ধ্যা নামতেই সেই গুঞ্জন সত্যিতে রূপ নেয়। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন সাকিব।

    সাকিবকে ফাঁসানোর পেছনে ছিলেন দীপক আগারওয়াল নামের একজন ভারতীয় জুয়াড়ি। মোট তিনটি অভিযোগ এনে সাকিবকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। তবে ভুল স্বীকার করায় এক বছরের শাস্তি কমানো হয়। আইসিসির অ্যান্টিকরাপশন ইউনিটের (এসিইউ বা আকসু) ২.৪.৪ অনুচ্ছেদের মধ্যেই তিনটি অপরাধ করেছিলেন সাকিব।

    যেগুলো হচ্ছে :

    ১. ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়েকে নিয়ে বাংলাদেশের যে ত্রিদেশীয় সিরিজ হয়েছিল, অর্থাৎ ২০১৮ আইপিএলে প্রথম ম্যাচ গড়াপেটার (ফিক্সিং) প্রস্তাব পান সাকিব। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি আইসিসির অ্যান্টিকরাপশন ইউনিটকে (এসিইউ) বিস্তারিত কোনো কিছুই জানাননি।

    ২. একই ধারার অধীনে অপরাধ : ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের সময়ই আরো একটি ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু তখনো সে বিষয়ে সাকিব আইসিসিকে অবহিত করেননি।

    ৩. একই ধারার অধীনে অপরাধ : ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার ম্যাচেও ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু সে বিষয়েও তিনি আইসিসি কিংবা সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি দমন সংস্থাকে কিছুই জানাননি।

    নিষেধাজ্ঞায় থাকাকালীন বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রেই কাটিয়েছেন সাকিব। সেখানেই স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। দুই মেয়ে আর পরিবারকে নিয়ে সময় কাটিয়েছেন সাকিব। তবে দূর দেশে থেকেও করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অসহায় মানুষকে সাহায্য করে যান তিনি। নিজের নামে একটি ফাউন্ডেশন চালু করে নিরলসভাবে কাজ করে যান। মানুষের সাহায্যের জন্য বিক্রি করে দেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ রাঙানো প্রিয় ব্যাট। খাদ্য সহায়তা, করোনা কিট কেনা, অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তসহ অনেককেই সাহায্য করেন তিনি।

    শ্রীলঙ্কা সফর দিয়ে ফিরবেন বলে মাঝে দেশে ফিরেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে এসে বিকেএসপির মাঠে নিবিড় অনুশীলনও করেন বাংলাদেশের বিশ্ব তারকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সফর স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আবারও যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে চলে যান সাকিব। তবে সাকিবের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো আজ। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি লিগ। ঘরোয়া এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়েই ফের ২২ গজে ফিরবেন বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান।