কেওলার হাওরে ধান চাষ কৃষকের মূখে ফসলের হাসি

    0
    379

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩০জানুয়ারী,শাব্বির এলাহী,কেওলার হাওর থেকে ফিরেঃ কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার, পতনউষার, শমশেরনগর ও আলীনগর ৪ ইউনিয়ন নিয়ে এক হাজার হেক্টরের কেওলার হাওরে অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার পরিবারের বসবাস।এক সময় এ হাওরে আউশ, আমন আর বোরো ধানের চাষ হলেও পানি নিষ্কাশন আর যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় গত দশ বছর ধরে হাওরের অর্ধেক ফসলি জমি কৃষকরা পতিত ফেলে রাখেন। কারণ কষ্ট করে ফলানো ফসল তারা ঘরে তুলতে পারেন না। বর্ষার পানিতে সেই ফসল তলিয়ে যায়। এতে করে কৃষকরা শ্রম ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। মূলত: এ দুটি কারনেই কেওলার হাওরে জমিকে ধান চাষ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন ওই এলাকার কৃষকরা।
    তবে চলতি বোরো মৌসুমের আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ মো: আব্দুস শহীদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্ঠায় হাওরের বুক চিরে যাওয়া উপসি ও খাইজান খালটি পূন:খনন করা হয়। আর কেওলার হাওরের রুপসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে র্প্বূ দিকে লাঘাটা ছড়ার পাড় পর্যন্ত ২০০০ ফুট রাস্তা পূন: সংস্কার করা হয়। এতে হাওরে পতিত জমিগুলো চাষ উপোযোগী হয়ে উঠে।
    সম্প্রতি সরজমিনে কেওলার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা মনের আনন্দে হাওরে জমি চাষ,বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন চারা রোপন ইত্যাদি কৃষিকাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।এক সময় ফেলে রাখা হাওরের পতিত জমি সবুজ ধান গাছে ভরে উঠছে। কেবল স্থানীয় এমপির একটু উদ্যোগ আর প্রচেষ্ঠাই বদলে দিয়েছে কেওলার হাওরের এই চিত্র। বিস্তীর্ণ হাওরের মাঠ জুড়ে এখন শুধু সম্ভাবনার হাত ছানি। স্থানীয় কৃষক মাসুক মিয়া, আবুল বশর জিল্লুল, জুবায়ের আহম্মেদ, শামিম আহম্মেদ, মৌরাজ মিয়া, সিপার মিয়া, আব্দুর হান্নান জানান, এতো দিন তাদের জমি পতিত ফেলে রাখতেন। কিন্তু এখন তারা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। চলতি মৌসুমে সবাই হাওরে পতিত জমিতে ধান চাষ করেছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে হাওরে পানি নিষ্কাশন আর যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেয়ায়। এখন তারা অনায়াসেই ঠেলায় করে সার, বীজ নিয়ে হাওরের শেষ সীমানা পর্যন্ত যেতে পারবেন। কৃষকদের দাবী লাঘাটা খালে স্লুইচ গেইট নির্মাণ ও কয়েকটি বিল খননের, তা না হলে পাহাড়ী ঢলে উজান থেকে আসা ছড়ার পানির সাথে পলি মাটি এসে কেওলার হাওর ভরাট হয়ে যাবে।
    মুন্সিবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালিব তরফদার এবং পরিষদের সদস্য মো. শফিকুর রহমান বলেন, কেওরার হাওর উন্নয়ন এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। আজ কেওলার হাওরে প্রাণ ফিরে এসেছে।
    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামছুউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পানি নিস্কাশনের সুষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় এই হাওরের জমি আনাবাদি থেকে যেত। ওই জমিতে এখন থেকে বছরে প্রায় দুই হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপন্ন হবে।
    কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, খালটি খননের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। এলাকার এমপি মহোদয়ের প্রচেষ্টায় খালটি খনন করা হচ্ছে। কাজও প্রায় শেষ পর্যয়ে রয়েছে। খালটি খননের ফলে হাওরের প্রায় ২৮৬ হেক্টর জমি এখন চাষাবাদ করা যাবে। খালে পানি থাকায় এই হাওরে এখন তিনটি ফসলেরই আবাদ হবে।
    স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ মো: আব্দুস শহীদ বলেন, দেশে কৃষি জমি বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকেই আমি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া এই খালটি খনন করা এলাকার কৃষকদের প্রাণের দাবি ছিল। খালটি খননের ফলে এই হাওরে এখন মানুষ সারা বছরই তিনটি ফসল ফলাতে পারবে। কৃষকদের উন্নয়নে সরব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।