কুলাউড়ায় সিএনজি-টমটম চালকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত-৩২

    0
    237

    নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ  প্রতিনিধিঃ মৌলবীবাজারের কুলাউড়ায় সিএনজি  চালিত  অটোরিকশা ও ব্যটারিচালিত অটোরিকশা (টমটস) চালকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে আহত ৩২ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। বুধবার ৪ নভেম্বর বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে প্রায় তিনঘণ্টা ঘণ্টাব্যাপী থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পরিণত হয় পৌর শহর। উত্তেজিত দুপক্ষের শ্রমিকরা শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা-ব্যটারীচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর চালায়।

    এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কুলাউড়া পৌর শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহর জুড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

    সিএনজি অটোরিকশা-ব্যটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়,  কুলাউড়ায় অবৈধ ব্যটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা অটো টেম্পু, অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং চট্ট০-২৩৫৯) কুলাউড়া শাখার আয়োজনে পূর্ব ঘোষিত সিএনজি অটোরিকশা বন্ধ রেখে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কর্মসূচি পৌর শহরের স্টেশন চৌমুহনীতে শুরু হয় বুধবার সকাল ১১টার দিকে। মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা স্টেশন চৌমুহনীতে একটি ব্যটারিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়।

    এরপর মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন  (রেজি: নং চট্ট: ২৪৫৩) কুলাউড়া উপজেলা শাখার শ্রমিকরা পাল্টা অবস্থান নেয় পৌর শহরের উছলাপাড়া এলাকার প্রধান সড়কে। এ সময় মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার জন্য উপজেলার রবিরবাজার থেকে আসা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের একটি মিছিল আলালপুর এলাকায় পৌঁছালে বিক্ষুব্দ রিকশা শ্রমিকরা বাধা প্রদান করলে আরো উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এসময় দুই পক্ষের শ্রমিকরা সংঘর্ষে লিপ্ত হোন এবং সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যটারিচালিত রিকশা ভাঙচুর করা হয়।

    দফায় দফায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উত্তেজিত দুপক্ষের শ্রমিকরা শহরের উত্তর রেল আউটার, চৌমুহনী, দক্ষিণ বাজার, মাগুরা, উছলাপাড়া, আলালপুর, স্কুল চৌমুহনী এলকায় প্রায় ৪০-৪৫টি সিএনজি অটোরিকশা এবং অর্ধশতাধিক ব্যটারিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর ও সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন এবং উছলাপাড়ায় অবস্থিত মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন কুলাউড়া শাখার কার্যালয় ভাঙচুর চালায়।

    সংঘর্ষে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ৫জন ও রিকশা শ্রমিক ২ জন আহত হয়ে কুলাউড়া উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। সংঘর্ষ চলাকালে লুৎফুর রহমান (৫০), মরম আলী (৪০) , নওশাদ (২৮), বদরুল (৩০), জব্বর (৩২) ফখরুল (২১), ফয়ছল (৩০)সহ উভয় পক্ষে ৩২ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে লুৎফুর রহমান নামে ব্যটারিচালিত রিকশা চালক মারাত্মক জখমী হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

    পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজরাতুন নাঈম এবং কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওসার দস্তগীররের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নেন।

    এদিকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়কালীন সময়ে দুপুর ১টার দিকে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা আলালপুর এলাকায় মৌলভীবাজার-কুলাউড়া প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা সেখানে অবস্থান নেওয়ার পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।

    মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন  (রেজি: নং চট্ট: ২৪৫৩) কুলাউড়া উপজেলা শাখার সভাপতি আকাশ আহমদ জানান, চৌমুহনীতে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদরে মানববন্ধন চলাকালে আমাদের একজন শ্রমিক সড়ক দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে যাওয়ার সময় সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে চালককে মারধর ও রকিশা ভাঙচুর করেন। পরে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে শহরে থাকা আমাদের ৫০টি রিকশা ও আমাদের কার্যালয় এবং কার্যালয়ে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর করে গুড়িয়ে দেয়। হামলায় আমাদের সংগঠনের ২০জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

    মৌলভীবাজার জেলা অটো টেম্পু, অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন  (রেজি: নং চট্ট০-২৩৫৯) কুলাউড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ মিয়া জানান, অবৈধ ব্যটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে স্টেশন চৌমুহনীতে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছিলাম। কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান আমাদের মানববন্ধন চলাকালে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দেন। এসময় আমাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য রবিরবাজার থেকে সিএনজি অটো রিকশা শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা মিছিল নিয়ে শহরে আসার মুহূর্তে আলালপুর এলাকয় রিকশা শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নেতৃত্বে শ্রমিকরা ওই মিছিলে বাধা প্রদান করে  এবং হামলা চালায়। রিকশা শ্রমিকরা শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে আমেদর ১২ জন শ্রমিককে আহত করে ও ৪০টির বেশি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করে।

    কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওসার দস্তগীর জানান, সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ কঠোর অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত এবং শহরে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ব্যাপারে কোন পক্ষই লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

    তিনি আরো বলেন, আগামী রোববার বিষয়টি সমাধানে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হবে। দুপক্ষকেই শান্ত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।