কানাডার শহরে শহরে বর্নাঢ্য শারদীয় উৎসব

    0
    186

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১৩অক্টোবর,সদেরা সুজন, সিবিএনএ কানাডা থেকেঃ কানাডার শহরে শহরে জাঁকজমকভাবে  সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছরের শারদ উৎসব প্রবাসীদের কাছে দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে এজন্যে যে, এই প্রথম প্রবাসীরা মনভরে শারদ উৎসবে যোগ দিতে পেরেছেন। সনাতন ধর্মের বিশুদ্ধ পঞ্জিকা তিথী অনুয়ায়ি  শুক্রবার থেকে পূজা শুরু হওয়াতে উইক এন্ড এবং থ্যাংকস গিবিংস ডে’র আরো একদিন সোমবার বন্ধ থাকায় প্রবাসে কষ্টকঠিন যান্ত্রিক জীবনে লং উইক এন্ড এ এবছর পূজা থাকায়  সন্তান-সন্তদিদের স্কুল কিংবা কর্মব্যস্ততা কম থাকায় মনভরে   পূজা অনুষ্ঠান প্রবাসীদের আনন্দ মুখরিত সপরিবারে উপস্থিতি ছিলো দেখার মতো। বিভিন্ন শহরের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিজস্ব মন্দিরে  দেবীকে তিথী অনুযায়ী আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পাঞ্জলি, চন্দন, ধুপ ও দীপ দিয়ে পূজা-অর্চণা, সন্ধ্যায় পূজা মণ্ডপগুলোতে ভক্তিমূলক গান, আরতি, রকমারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে মধ্যে দিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে সমাপ্তি হলো বর্নাঢ্য শারদীয় দুর্গোৎসব ২০১৬।

     এ বছর দুর্গোৎসবের প্রথম দিন থেকেই প্রতিটি মন্দিরে তিল ধারণের ঠাই ছিলো না। কানাডার মেগা শহর গুলোতে একাধীক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার শুরু হয় শারদীয় দুর্গোত্সব। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা এবং আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যে দিয়ে পূজা অর্চনা ঢাকের আওয়াজ ও শঙ্খের ধ্বনি আর রকমারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পাঁচদিন ব্যাপী শারদ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। মন্ট্রিয়লের বাংলাদেশ হিন্দু মন্দির ও সনাতন ধর্ম মন্দিরে পৃথকভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে ঠিক একইভাবে টরন্টোতে হিন্দু ধর্মাশ্রম, দুর্গাবাড়ি ও হিন্দু কালচারাল সোসাইটি মন্দিরগুলোতেও জমজমাট পূজার নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এছাড়া ভারতীয়রা আলাদাভাবে বিভিন্ন স্থানে দুর্গা পূজার আয়োজন করেছে।

    শুক্রবার ষষ্ঠী, শনিবার সপ্তমী, রবিবার অষ্টমী, সোমবার নবমী এবং মঙ্গলবার দশমী, এই পাঁচদিনব্যাপী দুর্গোৎসবে মানুষের ঢল নেমেছিলো। কানাডার মন্ট্রিয়লে বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশন অব ক্যুইবেক এর উদ্যোগে সনাতন ধর্ম মন্দিরে এবং বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে মন্ট্রিয়লস্থ হিন্দু মন্দিরে পাঁচদিনব্যাপী অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে পূজা উদযাপন করা হয়েছে। মন্দিরে-মন্দিরে সারাক্ষণই চলে দেবীর বন্দনা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতী, সিঁদুর খেলা, ঢাক-ঢোল শঙ্খ আর কাঁসরের সুরের মূর্চনায় সঙ্গে সুরেলা উলুধ্বনি। পাঁচদিনব্যাপী পূজা অর্চনার পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পী এবং নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে অসাধারন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি  বাংলাদেশ ও কোলকাতার বিখ্যাত শিল্পীরা অংশগ্রহণ করে। বাঙালির ঐতিহ্যবাহি শাড়ী-সালোয়ার-কামিজ পাঞ্জাবি- ফতোয়া পরে নারী-পুরুষ শিশুদের জমজমাট উপস্থিতি ছিলো দেখার মতো। প্রতিটি পূজায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভক্তদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।

    শারদীয় দুর্গোৎসবের অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অন্যান্য ধর্মের মানুষদের উপস্থিতিও ছিলো উল্লেখযোগ্য। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির বন্ধনে বিশ্ব এগিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা ছিলো সবার। সনাতনী কৃষ্টি-ঐতিহ্য-সভ্যতা-সত্য ও সুন্দরের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে এবং নিজের দেশ ও শেকড়কে প্রবাসে বড় হয়ে ওঠা নতুন প্রজন্মদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে প্রতিটি পূজা কমিটি সদস্যরা রকমারি আয়োজনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন।।

     বহুজাতিক সাংস্কৃতিক, বহু ধর্ম ও বর্ণের অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ বলে খ্যাত কানাডার শহরে শহরে পাঁচদিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির পাশাপাশি প্রবাসীদের মধ্যে মিলন মেলায় একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় শারদীয় আড্ডাসহ গতকাল মঙ্গলবার আনন্দ বিষাদে শেষ হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচে’ বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের শেষ দিনে প্রতিকী ঘট (প্রতিমা রেখে দেওয়া হয় আগামী বছরের জন্য) বিসর্জন অপরাজিতা আর মন্দিরে মন্দিরে সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি ঘটলো মহা উৎসবের।

    প্রায় প্রতিটি পূজা কমিটিই প্রকাশ করেছে দৃষ্টিনন্দন ও সুপাঠ্য সংকলন। কানাডার প্রধান মন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মন্ত্রী, মেয়র, এমপিসহ ধর্মীয় মহারাজ এবং স্থানীয় এমপিদের বাণী স্থান পেয়েছে ম্যাগাজিনগুলোতে। শিশু-কিশোরদের আর্ট, দেশে-বিদেশের নামকরা লেখক-সাহিত্যিকদের লেখার পাশাপাশি রয়েছে প্রবাসীদের ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি বিজড়িত নষ্টালজিয়া লেখা।