কানযুল ঈমান এপ নিয়ে ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজীর সিদ্ধান্ত

    0
    365

    নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সময়ের প্রয়োজনে কানজুল ঈমানের এপ প্রতিটি আহলে হক অর্থাৎ আহলে সুন্নাত দাবীদার প্রতিটি লোকের প্রাণের দাবী হিসেবে দীপ্তমান।কানজুল ঈমান এক প্রেমিক আব্দুল মজিদ কথা প্রসঙ্গে আফসোস করে বলেন,”আজ যে এপ নিয়ে কথা বার্তা বা বিরোধিতা করা হচ্ছে তা অত্যান্ত লজ্জাজনক।এ ধরনের এপ তো আরও ১৫/২০ সাল আগেই হওয়ার কথা ছিল আজ লক্ষাধিক পাঠকের মোবাইলে ইন্সটল থাকার কথা ছিল যেহেতু কেহ এমন দায়িত্ব নিতে সমর্থ হয়নি অথচ এর মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় এ কঠিন দায়িত্ব নিয়ে সুন্নি মতাবলম্বীদের সময়ের দাবী পূরণে সচেষ্ট হয়েছে এখন এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি  অসৌজন্য মুলক ভাষা ব্যবহার শুভনিয় দেখাচ্ছে না”যাক এবার আসি মুল কথায়,নিম্নে আব্দুল বাতেন মিয়াজির স্ট্যাটাস থেকে কিছুটা সাজিয়ে হুবহু তুলে ধরা হল।

    যে কারণে কানযুল ঈমান এপ থেকে বাংলা মুছে দিতে হচ্ছে
    ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজী

    “পোষ্টের বক্তব্যের বাইরে মন্তব্য, মন্দ শব্দ এবং গালিগালাজ থেকে আল্লাহ্‌ পাক আমাদের হেফাজত করুন।”

    আর্থিক লাভের জন্য এপ করেছি?

    মাওলানা আব্দুল মান্নান একজন শ্রদ্ধাভাজন বক্তি। তিনি অনেকের সহযোগিতা নিয়ে হলেও আলা হযরত রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক কুরআনুল কারীমের অনবদ্য উর্দু অনুবাদ কানযুল ঈমান-এর বাংলা উপহার দিয়েছেন। এটা সুন্নিয়তের একটা বড় খেদমত, সন্দেহ নেই। পুরো অনলাইন জগত বাতিলদের এপে সয়লাব হয়ে গেছে। সুন্নিদের তেমন কোন এপ নেই। এ আফসোস থেকে আমি এ কাজে হাত দেই এবং একে একে ২৫ টির মতো গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের এপ উপহার দেই। এর মধ্যে অনেকের দাবী রক্ষা করতে গিয়ে কানযুল ঈমানের বাংলা এপও করি। তখন মাওলানা মান্নান সাহেবের সাথে আমার ব্যক্তিগত জানাশোনা বা পরিচয় ছিল না। এর আগে যেসব কিতাবের এপ করেছি, তাতে কেউ অনুমতির ব্যাপারে বাধা হয়ে দাঁড়ান নি।

    আমি আলা হযরতের সৈনিক। স্বাভাবিক ভাবেই ভেবেছিলাম কানযুল ঈমান প্রতিটি আশেকে রাসুলের। আর কুরআন আল্লাহ্‌ পাকের কালাম। এর প্রচার ও প্রসার স্বয়ং ওহীর মালিকের নির্দেশ। কিন্তু না, মাওলানা আব্দুল মান্নান এপ বের হবার সাথে সাথেই এতে ঘোর আপত্তি জানালেন। তিনি অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। উনার আপত্তির অন্যতম কারণ উনি উল্লেখ করলেন আমি নাকি ব্যবসার উদ্দেশ্যে এপ করেছি। মায়াযাল্লাহ। আমি বিশ্বাস করি উনি সুন্নিয়তের খেদমতের জন্য কানযুল ঈমানের অনুবাদ করেছেন। আমারও তো একই উদ্দেশ্য। কিন্তু উনি ভাবছেন এতে আমার অনেক আর্থিক লাভ হয়েছে। কি লাভ হয়েছে তা নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করছি।

    এপ রিলিজ করার পর থেকে মান্নান সাহেবের স্বনামধন্য একজন আলেম আমার নাম বিকৃত করে একাধিকবার পোষ্ট দিয়েছেন। অথচ কারো নাম বিকৃত করা কোন মুমিনের কাজ নয়, কেননা আল্লাহ্‌ পাক বলেন, “মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না (গালি দিও না)। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গর্হিত। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।” [সূরা আল-হুজরাত ৪৯:১১]

    সুন্নিদের স্বনাম ধন্য একজন আলেমের বারবার কুরআনের নির্দেশের এমন লঙ্ঘন সত্যিই অবাক করার মতো। এর ভার আমি আল্লাহ্‌ পাকের কাছেই অর্পণ করলাম। তাছাড়া মওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মতে মন্দ শব্দ ব্যবহার নিচু লোকদের একটি পরিচয়ও।

    অন্যের অনুবাদ চুরি করে ব্যবসা করছি?
    সম্প্রতি সৈয়দ জালাল উদ্দিন আজহারি সাহেবও একই সুরে কথা বললেন। উনি মিশরের আল-আজহার থেকে লেখাপড়া করে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আধুনিক যুগের মানুষ। উনি আমার একটি পোষ্টে মন্তব্য করলেন এরকম, “অন্যের অনুবাদ চুরি করে এপস করে ব্যবসা করছে আর অন্য চোরেরা এতে সমর্থন করছে! চোরে চোরে ……ভাই।” যেমনটি আপনারা স্ক্রিনশটে দেখতে পাচ্ছেন।

    জালাল উদ্দিন আজহারি সাহেব আমাকে অন্যের লেখা চুরির অপবাদ দিলেন। সাথে আরো অপবাদ দিলেন আমি এই এপ করে ব্যবসা করছি। আমি জানতাম উনি খুব মেধাবী মানুষ। কিন্তু উনি যে বাস্তবতা থেকে এতো দূরে তা জানতাম না। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য মানুষের অজ্ঞতাকে প্রকাশ করে দেয়।

    এপ থেকে কি আয় হচ্ছে?

    এপ করে ব্যবসা করা সম্ভব। তিনটি উপায়ে। যারা আমার করা এপটি ইন্সটল করেছেন তারা যাচাই করে এই তিনটি ব্যাপার মিলিয়ে জানাবেন প্লীজ।

    একঃ
    এপে এড দেয়া। আমার কোন এপেই আমি এড সংযুক্ত করিনি।

    দুইঃ এপটি বিক্রি করা। আমার এপ কারো কিনতে হয়নি। অর্থাৎ এপটি সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।

    তিনঃ donation. কেউ বলতে পারবেন না আমি কারো কাছ থেকে কোন আর্থিক অনুদান নিয়েছি কিংবা আমার এপে বা সাইটে ডোনেট করার কোন আবেদন করেছি। আমাদের দেশের পীরেরা সাধারণত অন্যের অনুদান নির্ভর থাকেন। কিন্তু একটি পরিচিত দরাবারের এক পীরজাদা নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আমাকে ১০ (দশ) হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন এপ করার জন্য। সেই নূরনবী এপ করার সময়। আমি উনাকে তা উনার কাছেই রেখে দিতে বলি। প্রয়োজনে চেয়ে নেবো বলে জানাই। আজো তার প্রয়োজন হয়নি। যা খরচ হয়েছে, আমি নিজের পকেট থেকেই তা বহন করেছি।

    অনুমতিঃ

    এপ রিলিজের পর থেকে অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন লোক মান্নান সাহেবের সাথে দেখা করে এ ব্যাপারে একটি সমাধানে আসার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মান্নান সাহেবের একই কথা, আগে এপ মুছে দিতে হবে, এরপর এ নিয়ে কথা হবে। ছাত্রসেনার এক সিনিয়র নেতা যিনি বর্তমানে আমেরিকায় থাকেন, উনি নিজ উদ্যোগে মান্নান সাহেবের সাথে কথা বলেছেন। মান্নান সাহেব উনাকেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, উনি আমাকে এপ করার অনুমতি দিবেন না।

    অনেকেই দোষারোপ করছেন এপ করার পূর্বে আমার উচিৎ ছিল অনুবাদকের অনুমতি নেয়া। অনেকে আবার আমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার উস্কানিও দিচ্ছেন। আচ্ছা, বাতিলেরা এক ডজনেরও বেশি অনুবাদের কয়েকশ এপ করে নেটে ছেড়ে দিয়েছে। তাদের একেক এপের ইন্সটল হয়েছে লাখেরও বেশি। মউদুদি, সাইদী, আহলে হাদিসের ডঃ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন খান সহ অনেক অনুবাদ পাওয়া যায়। এসবই উন্মুক্ত। যে কেউ বিনা অনুমতিতে কপি করে নেটে কিংবা এপে ব্যবহার করতে পারেন। যাঁদের লক্ষ্য একটাই, আর তা হল, যত বেশি মানুষ তাদের মতবাদ সম্পর্কে জানবে ততই তাদের আক্বীদার প্রসার হবে। আহলে হাদিস সংখ্যায় সুন্নিদের এক দশমাংশও হবে না। অথচ এদের এপ, ওয়েবসাইট এবং বইয়ের অনলাইন ভাণ্ডার দেখলে মনে হবে এরাই ইসলামের খেমদত করে যাচ্ছে।

    এর ব্যতিক্রম আমাদের সুন্নিদের বেলায়। উল্লেখ্য, এপ শুরু করার পূর্বে আল্লামা মুফতি বখতিয়ার সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে। সুন্নি কিতাবাদির এপ করার পূর্বে লেখক, প্রকাশক বা অনুবাদকের অনুমতি নিয়ে প্রশ্ন তুলি আমি। উনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন যে অনুমতি নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। বরং আমাদের এ কাজে আর সময় ব্যয় না করে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিৎ।

    আরো উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের আমান উল্লাহ (Aman Ullah Aman) এবং জাফর সিদ্দিক (Jafar Siddique) নামে দুজনের সাথে এপ করারও বছর খানেক পূর্বে কথা হয়েছে। আমান উল্লাহ সাহেবকে আমি মান্নান সাহেবের সাথে কথা বলে আমাকে টেক্সট মেনেজ করে দেবার জন্য আহ্বান জানাই। উনি আমাকে মান্নান সাহেব সহ আরো অনেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর করা হয় নি। এপ রিলিজ করার পর জাফর সিদ্দিক আমাকে মেসেঞ্জারে আশ্বস্ত করেছিলেন যে উনি এবং আমান উল্লাহ মান্নান সাহেবের কাছ থেকে বছর দুই পূর্বে অনুমতি নিয়ে লোক খুঁজছিলেন। কিন্তু এপ করা হয়নি। উনারা মান্নান সাহেবের সাথে কথা বলে সমস্যার সমাধান করবেন। [উনাদের প্রত্যেকের সাথে এসব কথার রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে। প্রয়োজনে মন্তব্যে সেগুলো দেবো]

    আমি এপ রিলিজ করার পর মান্নান সাহেব এবং উনার আশেপাশের কিছু লোকের বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে যে, এই এপ করে আমি প্রচুর টাকার মালিক হয়ে গেছি। উনাদের এ কথার সুর ধরে উনাদের অনেক ভক্ত ও অনুরাগী ফেসবুকে আমার নামে অনেক মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছেন। অনেকেই আবার আমাকে কপিরাইট আইনের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ভুলেন নি।

    বাংলা মুছে দিচ্ছিঃ

    এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার কানযুল ঈমান এপ থেকে বাংলা অনুবাদ মুছে দেবো। যারা ইংরেজি কিংবা উর্দু বুঝেন তারা আপাতত ইংরেজি এবং উর্দু পড়তে পারেন। আর আল্লাহ্‌ পাক চাইলে এ মহৎ কাজের জন্য হয়তো কাউকে কবুল করবেন। তখন নতুন করে বাংলা এড করা হবে। এর স্থলে অনেকের দাবী অনুযায়ী বাংলা উচ্চারণ দিয়ে দেবো ইনশাআল্লাহ।