কাকরাইল মসজিদে ইলিয়াসী তাবলীগী দু’গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ

    0
    397

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৫নভেম্বর,ডেস্ক নিউজঃ  কথিত সংগঠক ইলিয়াস মেওয়াতী দেওবন্দীর মুরীদান ভক্ত তথা তার স্বপ্নে পাওয়া তরীকা ও অরাজনৈতিক সংগঠন তাবলীগ জামাতের অনুসারীরা তাদের বাংলাদেশের মারকাজ রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে মতবিরোধের জের ধরে দু’ দলে বিভক্ত হয়ে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি ও ভাংচুর করেছে !

    গতকাল সকালে কাকরাইল মসজিদে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাবলীগের শীর্ষ নেতাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এতে সেখানকার মাদ্রাসার ছাত্রদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলামসহ বেশ কয়েকজন মুরুব্বীর কক্ষের জানালা ভাংচুর করা হয় !

    পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মইনুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের জানান, মতবিরোধের জেরে তাবলীগের দু’ পক্ষের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আমরা দু’ পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এছাড়া, যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।তথ্য বাংলা  ট্রিবিউন

    তাবলিগী মো. শরফুল ইসলাম খান জানান, তিন-চার বছর ধরেই এ দলাদলি চলছে। বাংলাদেশ তাবলীগ জামাত পরিচালনা কমিটির সুরা সদস্য ১১ জন। এর মাঝে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও হাফেজ মৌং জুবায়েরের মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং রয়েছে। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন।

    গতকাল সকালে কাকরাইল মসজিদে মাসোয়ারা (বৈঠক) ছিলো শুরা সদস্যদের। তখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। মো. শরফুল ইসলাম খান আরো জানান: এর আগে মাসোয়ারায় ঝামেলা হওয়ায় কোনো বৈঠক হতো না। অনেকদিন পর আজ (মঙ্গলবার) বৈঠক শুরু হয়। এ সময় ওয়াসিফ ও জুবায়ের গ্রুপ একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে থাকেন। তখন দু’ পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ হয়। প্রথমে ধাক্কাধাক্কি, এরপর হাতাহাতি হয়। এ সময় কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জুবায়ের গ্রুপের পক্ষ হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে ওয়াসিফুল গ্রুপকে ধাওয়া করে। তখন পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মাসোয়ারা কক্ষসহ মসজিদের ভেতরের কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।

    দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাব-প্রতিপত্তি ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে ইলিয়াস মেওয়াতীর এ অরাজনৈতিক সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয়দের মাঝে দ্বন্দ্ব ছিলো। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাবলীগের দিল্লীর নিজামুদ্দিন মারকাজের মৌং সাদ কান্ধলভীর আগামী ইজতেমায় বাংলাদেশে আসার বিষয়টি। তাকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছে হেফাজতে ইসলামসহ কওমী আলেমরা।

    তাবলীগী সূত্রে জানা গেছে, তাবলীগ জামাতের দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এ দ্বন্দ্বে আগেও একাধিকবার মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশে তাবলিগের ফায়সালের (আমির) দায়িত্ব পালন করছেন সাত জন। তাদের মাঝে সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের একজন শুরা সদস্য ও ফায়সাল (আমির)। সৈয়দ ওয়াসিফের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তাবলীগের প্রবীণ দায়িত্বশীল মুরুব্বি অধ্যাপক মুশফিক আহমেদ ও তার অনুসারীরা। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে অধ্যাপক মুশফিকের মৃত্যুর পর কোণঠাসা হয়ে পড়ে তার অনুসারীরা।

    সূত্রটি জানায়, বিশ্ব জুড়ে তাবলীগ জামাতের মারকাজ (মূল কেন্দ্র) ভারতে দিল্লীর নিজামুদ্দিনে, যা নিজামুদ্দিন মারকাজ নামে পরিচিত। এর অন্যতম ব্যক্তি মৌং সাদ কান্ধলভী। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দও মৌং সাদ কান্ধলভীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়। দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মৌং আবুল কাসেম নোমানীসহ শীর্ষ আলেমরা বিবৃতি দিয়ে মৌং সাদের বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তখন উনি চাপে পড়ে তার বক্তব্যের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেন।

    মৌং সাদ আলেমদের অর্থের বিনিময়ে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়ার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। এছাড়া, উনি ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল ফোন পকেটে রেখে নামাজ হয় না বলেও মন্তব্য করেন – যা সমালোচিত হয়।

    সূত্রটি আরো জানায়, বাংলাদেশে তাবলীগের ফায়সালের মাঝে মৌং মুহাম্মদ জুবায়ের, রবিউল হক ও ওমর ফারুক আগামী ইজতেমায় মৌং সাদের বাংলাদেশে আগমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাকে বাংলাদেশে আসতে দিতে নারাজ হেফাজতে ইসলামসহ কওমীপন্থী আলেমরাও। ১১ই নভেম্বর উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের আয়েশা মসজিদে এ ইস্যুতে একটি সভা হয়। সেখানে হেফাজতপন্থী আলেমরা অংশ নেন। সভায় হেফাজতপন্থী আলেমরা মৌং সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।

    দুপুর ২টার দিকে তাবলীগ জামাতের শুরা সদস্যরা বৈঠকে বসেন। ততে সিদ্ধান্ত হয়, ভবিষ্যতে কাকরাইল মসজিদের যে কোনো সভায় শুরা সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা চূড়ান্ত হবে। সম্প্রতি যেসব বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হয়েছে, সেসবের সমাধানও এভাবেই করা হবে। কাকরাইল মসজিদের মাদ্রাসার ছাত্ররা উত্তর দিকেই থাকবেন। তারা দক্ষিণ দিকে আসবেন না। তাবলীগের কার্যক্রমে কেউ কোনো অস্ত্র নিয়ে আসতে পারবেন না। কেউ নিয়ম ভাঙলে, আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশী মেহমান আগমনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।কিছু তথ্য বাংলা ট্রিবিউন থেকে নেওয়া।