করোনা পরিস্থিতির মাঝে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

    0
    256

    বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির মাঝে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের বৃদ্ধি থাকলেও বর্ষার আগমনে তা দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। এদিকে করোনা ও ডেঙ্গু জ্বরের মধ্যে লক্ষণ বা উপসর্গগত কিছু মিল থাকার কারণে এ সময় সাধারণ একটু জ্বর হলেই মানুষ করোনার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন।

    চিকিৎসকদের মতে, দু’টি রোগের উপসর্গের মধ্যে সামান্য কিছু পার্থক্য আছে। রোগীর দেহে জ্বর দেখেই ডেঙ্গু বা করোনা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি করোনার ক্ষেত্রে সোয়াব টেস্ট করতে হবে।

    এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডক্টর কবিরুল বাসার বলেছেন, গতবছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। করোনা পরিস্থিতির কারণে তা হাসপাতালের খাতায় স্থান পাচ্ছে না। তিনি বলেন, বছরের শুরু থেকেই মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের কারণে এবং এখন বর্ষাকালে বাইরে খানাখন্দ বা ডোবা নালায় জমে থাকা পানিতে মশার বংশ বিস্তার বেশি হয়েছে। ফলে এ সময় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বরং বেড়েছে।

    এ প্রসঙ্গে রাজধানীর গ্রীণ লাইফ মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক ডাক্তার রাশেদুল হাসানের পরামর্শ হচ্ছে- এ সময় ডেঙ্গু ছাড়াও টাইফয়েড, নিউমোনিয়া এসব কারণেও জ্বর হতে পারে। সেসব জ্বরের জন্যও চিকিৎসা জরুরি।

    চিকিৎসকগণ বলছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হচ্ছে- উচ্চ মাত্রার জ্বর, গা-হাত-পায়ে অসহ্য ব্যথা ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, মাথা ও চোখের আশেপাশে অসহ্য ব্যথা, গায়ে র‍্যাশ দেখা দেওয়া, বমি বমি ভাব, মাঝেমধ্যেই বমি হয়ে যাওয়া, পেটে তীব্র য্ন্ত্রণা, মুখের স্বাদ হারিয়ে ফেলা ও খিদে না পাওয়া, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া এবং গলা ব্যথা ও ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া। আর করোনার ক্ষেত্রে গুরুতর দু’টি লক্ষণ হচ্ছে শ্বাসকষ্ট ও বুকে অসহ্য ব্যথা হওয়া।

    ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ হচ্ছে- সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশারি খাটিয়ে ঘুমাতে হবে। ফুল-হাতা জামা কাপড় পরতে হবে। তাছাড়া, ডেঙ্গুর বাহক মশার বংশবৃদ্ধি কমাতে বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে চারিদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ব্লিচিং পাউডার অথবা অ্যান্টি-লার্ভাল স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।

    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪। এর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এত মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। এবারই প্রথম ঢাকাসহ ৬৪ জেলায় এ রোগ ছড়িয়েছে।

    এদিকে, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে দ্বিতীয় দফা পরিচ্ছন্নতা অভিযান (চিরুনি অভিযান) পরিচালনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। চলবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত।

    এর আগে গতমাসে (৬-১৫ জুন) প্রথমদফায় ১০ দিনব্যাপী চিরুনি অভিযানে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৩৫টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে মোট ১ হাজার ৬০১টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৮৯ হাজার ৬২৬টি বাড়ি-স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ শনাক্ত করেছিল। এসময়ে মোট ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়।পার্সটুডে