করোনা ত্রাণ চুরি’র অভিযোগে মোট ২৪ মেম্বার-চেয়ারম্যান বরখাস্ত

    0
    215

    করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে আরো ১২ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও নয়জন ইউপি সদস্য।

    আজ (রোববার) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে বলে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানিয়েছে। এর আগে গত ১২ এপ্রিল তিনজন ও ১৫ এপ্রিল নয়জন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত মোট ২৪ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

    আজ সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ইউপি চেয়ারম্যান হলেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউপির মখদুম কবীর তন্ময়, নাটোরের লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর বরমহাটি ইউপির মো. আবদুস সাত্তার ও বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউপির মির্জা গোলাম হাফিজ সোহাগ।

    সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার ইউপি সদস্যরা হলেন নাটোরের লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর-বড়মহাটি ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রেজা, বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাকির হোসেন ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রোকনুজ্জামান, ভোলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আব্দুর রব পাটোয়ারী, নড়াইলের  কালিয়া উপজেলার জয়নগর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শেখ মোশারেফ হোসেন এবং ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য রনি বেগম, সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আল-আমিন চৌধুরী এবং ৭,৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য মোছা. আছিয়া খাতুন।

    প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ, ভিজিডির চাল আত্মসাৎ, খাদ্য সহায়তা চাইতে আসা লোকজনকে মারধর, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে দেশের সংকটময় মুহূর্তে এলাকায় অনুপস্থিত থাকা, উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় অনুপস্থিত ইত্যাদি কারণে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছেন এবং কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। উল্লেখিত চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ মূলক কার্যক্রম জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের স্বীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

    একইসময় পৃথক পৃথক কারণ দর্শানো নোটিশে কেন তাদের চূড়ান্তভাবে নিজ পদ থেকে অপসারণ করা হবে না তার জবাব পত্রপ্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানোর  জন্য অনুরোধ করা হয়।

    স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এর আগে ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে অফিস আদেশ জারি করা হয়।

    আজ এক বার্তায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম করা জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে বর্তমানে অনিয়মের ঘটনা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

    চাল চুরির মামলায় কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা

    রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল চুরির মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের এক নেতাকে আজ (রোববার) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর বাড়ি থেকে ৬৭ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়।

    এই নেতার নাম আলাল উদ্দিন ওরফে স্বপন। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের পরিবেশক। তাঁর বাড়ি থেকে চাল উদ্ধারের পর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জামাল উদ্দিন তাঁর নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

    চাল উদ্ধার করার পর শনিবার রাতেই পুলিশ তাঁকে আটক করে গোদাগাড়ী থানায় নিয়ে আসে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, রাতেই তাঁর নামে মামলা করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা একটার দিকে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও এই নেতা ন্যায্যমূল্যের চালের পরিবেশক ছিলেন। তখনো তাঁর বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন জেলা প্রশাসকের কাছে ন্যায্যমূল্যের চাল, কৃষি ভর্তুকির সার ও বীজ কার্ডধারী কৃষকের কাছে বিক্রি না করে আত্মসাতের অভিযোগ দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগের এখনো তদন্ত হয়নি।

    ভৈরবে ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

    কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে এক ভিক্ষুকের কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে এক ইউপি সদস্যকে গতকাল শনিবার বিকেলে  গ্রেপ্তার করা হয়।

    ওই ভিক্ষুক উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পুরানগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। ওই ভিক্ষুকের নাম রাহেলা বেগম (৬০)। ওই ভিক্ষুকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে পুলিশ আজ রোববার তাঁকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠিয়েছে।

    এ বিষয়ে ভিক্ষুক রাহেলা অভিযোগ করে বলেন, ‘খরচা ছাড়া ঘর পামু হুইনা গেছিলাম। মেম্বার কিছু খরচা দাবি করে। মনে করছি, তিন লাখ টেহার ঘর পামু, খরচা দিলে দোষ কী। পরে ১৮ হাজার টেহা দিছি। অহন কই ঘর দিতে পারব না।’

    ইউএনও লুবনা ফারজানা বলেন, ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মশিউজ্জামান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। পুলিশ তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।পার্সটুডে