কমিশনকে অবশ্যই তার সক্ষমতা বাড়াতে হবেঃটিআইবি

    1
    248

    আমারসিলেট24ডটকম,১৪মেঃ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মু্ক্ত হওয়ার পরামর্শদিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)। তারা বলেছে, কমিশনকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে স্বাধীন ওসক্রিয় শক্তি হিসেবে কাজ করতে হবে।
    আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশকরা সংস্থাটির “বাংলাদেশের জাতীয় শুদ্ধাচারব্যবস্থার বিশ্লেষণশীর্ষক” গবেষণা প্রতিবেদনে এ পরামর্শ তুলে ধরা হয়।
    বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় একই ধরনেরগবেষণা বাংলাদেশ ছাড়াও মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় পরিচালিতহয়েছে। গবেষণাটি যৌথভাবে প্রণয়ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসনবিভাগের অধ্যাপক ড.সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান এবং  টিআইবির উপনির্বাহীপরিচালক অধ্যাপক ড.সুমাইয়া খায়ের। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তারা প্রতিবেদনটিউপস্থাপন করেন।
    টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ও নির্বাহীপরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
    প্রতিবেদনে জাতীয় মানবাধিকারের কমিশনের দুর্বলতার দিকগুলো তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে রয়েছে কমিশনের অর্থায়নের জন্য সরকার বা দাতা সংস্থার ওপরনির্ভরশীলতা,লোকবল, কারিগরি জ্ঞান, অবকাঠামোগত লজিস্টিক্যাল সহযোগিতারঅভাবে কমিশনের অনুসন্ধানব্যবস্থার দুর্বলতা, কমিশনারদের নিয়োগেস্বজনপ্রীতির সুযোগ থাকা, তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে আইনিকাঠামোর অপর্যাপ্ততা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতা এবং আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর আইনভঙ্গের তদন্ত পরিচালনায় আইনি প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি।
    এসব থেকে উত্তরণে টিআইবি তাদের সুপারিশমালায় বলেছে, রাজনৈতিক ও অন্যান্যবিবেচনা দিয়ে প্রভাবিত না হয়ে কমিশনকে অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধেস্বাধীন পর্যবেক্ষণ ও সক্রিয় শক্তি হিসেবে কাজ করতে হবে।
    সুপারিশে আরো বলা হয়, মানবাধিকারের সংজ্ঞা, কমিশনারদের যোগ্যতার মানদণ্ড, সুশৃঙ্খল বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্তে কমিশনারদেরক্ষমতা- এই বিষয়গুলো সংযুক্ত করে কমিশনের আইনের পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয়সংশোধন করতে হবে।
    প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার মাধ্যমে কারযকর তদন্ত, প্রতিবেদন ওকাজের সাফল্যের জন্য কমিশনকে অবশ্যই তার সক্ষমতা বাড়াতে হবেবলে টিআইবি মনে করে।

    টিআইবির এ গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতারতুলনায় অনুশীলন ও বাস্তবায়নের মধ্যে বিস্তৃত পার্থক্যের কারণে দুর্বল জাতীয়শুদ্ধাচার ব্যবস্থা  বাংলাদেশে সুশাসনের সম্ভাবনাকে ব্যাহত করছে। ফলেদুর্নীতির প্রসার ঘটছে।

    ২০১২ সালের আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এ গবেষণাঅনুযায়ী, তুলনামূলকভাবে শক্ত আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং সম্পদ থাকারপরও অপর্যাপ্ত বাস্তবায়ন ও চর্চা এবং আইন অমান্যের সংস্কৃতি বিরাজ করায়দেশে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা দুর্বলতর হচ্ছে।

    গবেষণায় জাতীয় শুদ্ধাচারব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত ১৫টি স্তম্ভ বিশ্লেষিত হয়।এগুলো হলো: সংসদ, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পুলিশ (আইন প্রয়োগকারী সংস্থা), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ওব্যবসা খাত।

    সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গবেষণায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আইনি কাঠামো, সক্ষমতা, সুশাসন ও ভূমিকার আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়।   প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষসূত্রের উপাত্ত ছাড়াও সংশ্লিষ্ট জাতীয় আইন, গবেষণা, প্রতিবেদন (গণমাধ্যম ওঅন্যান্য) এবং মুখ্য সাক্ষাৎদাতাদের তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা প্রতিবেদনপ্রণয়ন করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফল একটি পিয়ার রিভিউ ও লাইবেল চেকের পর আটসদস্যবিশিষ্ট একটি শক্তিশালী উপদেষ্টা গ্রুপ কর্তৃক সত্যায়িত হয়।

    সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় শুদ্ধাচারব্যবস্থার বিশ্লেষণকে দুর্নীতিপ্রতিরোধে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানের কার্যকরতা এবংসামর্থ্যের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী,  অকার্যকরসংসদ ও বয়কটের সংস্কৃতি, সর্বময় কর্তত্বের অধিকারী নির্বাহী বিভাগ অন্যদিকেবিচার বিভাগ, আমলাতন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত দলীয়করণের ফলেসুশাসনের জন্য অপরিহার্য তদারকি ও জবাবদিহির ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

    অন্যদিকে, বিভিন্ন কমিশনের (নির্বাচন কমিশন, দুদক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও তথ্য কমিশন) স্বাধীনতা ও কার্যকরতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণে ওইপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর জন-আস্থা হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে রাজনৈতিকদল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে সুদৃঢ় অভ্যন্তরীণ সুশাসনের সমস্যারকথা উল্লেখ করা হয়েছে।

    টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির  অভাব তৈরি হলেইশুদ্ধাচারব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটে। যখন শুদ্ধাচারব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানগুলোসঠিক ও কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে, তখন সমাজ ও রাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন ওদুর্নীতির মতো ঘটনা বিলুপ্তির মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।”

    সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছারঅভাব অব্যাহতভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আরো কিছু বিষয়  বিদ্যমানজাতীয় শুদ্ধাচারব্যবস্থার ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করেছে। এগুলো হলো, প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর উদ্বেগজনক মাত্রায় দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্বলতদারকি, অপর্যাপ্ত সম্পদ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির বিস্তার এবং দুর্নীতিরঅস্বীকৃতি চর্চার ফলে সৃষ্ট বিচারহীনতার সংস্কৃতি।”