কমলগঞ্জে ২শত বছরের পুরাতন শশ্মানভূমি অবশেষে দখলমুক্ত

    0
    222

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২০জুলাই,শাব্বির এলাহীঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের যোগীবিল গ্রামে মহাদেব টিলায় (টিলাগাঁও) সংখ্যালঘু নাথ সম্প্রদায়ের ২ শত বছরের প্রাচীন শশ্মানভূমি অবশেষে দখলমুক্ত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৯ জুলাই রোববার দুপুর ১২টায় যোগীবিল গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক এসে প্রাচীনতম এই শশ্মানভূমির জায়গাটির অনেকটাই দখলমুক্ত করে বাঁশের বেড়া প্রদান করেন। টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুকুমার দেবনাথের নের্তৃত্বে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দখলকৃত ভূমি মুক্ত করার কার্যক্রম শুরু করেন।

    এর মধ্যে উদ্ধার করা হয় স্থানীয় মিরাসদার নরেন্দ্র নাথ (মৃত্যু: ১৬/০৯/৫২বঙ্গাব্দ) ও অশ্বিনী নাথ (মৃত্যু: ০৪/০২/৫৭বঙ্গাব্দ) এর প্রাচীনতম সমাধি মন্দির।

    ১৯ জুলাই রোববার সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, যোগীবিল ও আশপাশ গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার ২ শত বছর থেকে এই শশ্মানভূমি ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু ২০০৫ইং সাল থেকে হঠাৎ করে কিছু অসাধু লোক (জাহাঙ্গীর, হান্নান, শাহীন, মুসলিম, জাবেদ, রুজিনা গং) শশ্মানভূমির জায়গায় বাড়িঘর বানিয়ে দখল করে এবং শশ্মানভূমির জায়গায় গাছ রোপন করে রাখে। যোগীবিল গ্রামের নাথ সম্প্রদায়ের লোকজন এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অবহিত করে।

    বিভিন্ন সময় শশ্মানভূমি উদ্ধারে গ্রামবাসী এগিয়ে আসলে দখলদাররা তাদেরকে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র সহকারে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করে। এ ব্যাপারে ৬নং আলীনগর ইউনিয়নের স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য সুকুমার দেবনাথ এর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রীনাথপুর মৌজার জে,এল নং ৭৪ এর ৩৭৪৮ নং দাগের ৩৯টি খতিয়ানের মিরাসদারীদের উত্তরাধিকারীরা ওয়াহিদ চৌধুরী ওরপে ছুরাব মিয়া, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, জমির উদ্দিন চৌধুরী, মৌরসী স্বত্ত্ব হিসেবে কিছু জায়গার মালিকানা হলেও জ্বাল জ্বালিয়াতির মাধ্যমে তারা অনেক বেশি জায়গা বিক্রি করেন।

    উত্তর যোগিবিল গ্রামের বাসিন্দা মনির মিয়া (৫০) বলেন, আমার জন্মের পর থেকে দেখেছি যোগীবিল গ্রামে মহাদেব টিলায় (টিলাগাঁও) সংখ্যালঘু নাথ সম্প্রদায়ের লোকজন এই প্রাচীনতম শশ্মানভূমি ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে কতিপয় কুচক্রী মহল শশ্মানভূমি দখল করে বসত বাড়ি, গাছ পালা লাগিয়ে জোরপূর্ব্বক দখল করে আসছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

    স্থানীয় ইউপি সদস্য সুকুমার দেবনাথ, শিবপুর গ্রামের চাকুরীজীবি অজিত দেবনাথ (বাবুল), যোগিবিল গ্রামের চাকুরীজীবি শৈলেন্দ্র দেবনাথ, ডা: সঞ্জয় দেবনাথ, রসেন্দ্র দেবনাথ, বিজিবি সদস্য স্বপন দেবনাথ, শিক্ষক নিরোদ রঞ্জন দেবনাথ, দিপন দেবনাথ, অবিনাশ দেবনাথ, নিমাই দেবনাথ, মনির মিয়া, ইউনুস মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন দেবনাথ, সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রাজিব দেবনাথ, হারুন মিয়া, আং রহমান, ফরিদ মিয়া, শামসুল মিয়া, সাবিয়া বেগম, আরিফ উদ্দিন, সৈয়দ মিয়া, আং হান্নান, হানিফ উল্যা, বাবুল দেবনাথ, আশু দেবনাথ, পরিমল দেবনাথ, প্রেমানন্দ দেবনাথ, কমলা দেবনাথ, সুনীল দেবনাথ, কমলা দেবনাথ, যতীন্দ্র দেবনাথ, অতুল দেবনাথ, অরবিন্দ দেবনাথ, সুরঞ্জিত দেবনাথসহ ৫ শতাধিক হিন্দু-মুসলিম অসংখ্য গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে অদ্য ১৯ জুলাই দুপুর ১২টায় অবৈধভাবে থাকা শশ্মানভূমির অনেক জায়গা উদ্ধার করে বাঁশের বেড়া প্রদান করা হয়।

    গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, শ্রীনাথপুর মৌজার জে,এল নং ৭৪ এর ৩৭৪৮ নং দাগের ৩৯টি খতিয়ানের প্রায় ৩ একর নাথ সম্প্রদায়ের ২ শত বছরের প্রাচীন শশ্মানভূমির জায়গা দীর্ঘদিন ধরে ভূমিগ্রাসী চক্র জোরপূর্বক জবর-দখল করে আসছিলো। অবশেষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যদের অবগত করে যোগীবিল গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব জমির সকল ওয়ারিশগন এসব জমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নিজেরাই নিজেদের অনেকাংশ জমি দখলে নিয়ে বাঁশের বেড়া দেন। কিন্তু শশ্মানের অনেক জায়গায় এখনো ঘরবাড়ি রয়েছে। অবিলম্বে অবৈধ দখলে থাকা ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে শশ্মানের ভূমি স্থানীয় সংখ্যালঘু নাথ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল। না হলে যে কোন মুহুর্তে অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।

    শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৯ জুলাই রোববার বিকাল ৫টায় শশ্মানভূমির অদুরে জাহাঙ্গীর মিয়ার দোকানের সামনে (মহাদেব এর টিলা এলাকায়) যোগীবিল গ্রামের জনৈক সুনীল দেবনাথ-কে দখলদার জাবেদ মিয়া ও তার লোকজন অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে রাখে। পরে স্থানীয় গ্রামপুলিশ সহ গণ্যমান্য লোকদের সহযোগিতায় সুনীল দেবনাথ ছাড়া পায়। গ্রামবাসীরা জানান, রোববার রাতে শশ্মানভুমির দখলদাররা গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের কয়েকদফা হুমকি প্রদান করে।

    আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা জানান, তিনি এলাকায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্র“তি দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে তিনি প্রকৃত জমির মালিকদের কাছে শশ্মানভূমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।