কমলগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপনে অবৈধ টাকার বাণিজ্য

    0
    251

    “টাকা না দেওয়ায় শতাধিক পরিবারে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৭মে,কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:‘চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউপির বড়চেগ গ্রামের দক্ষিণ অংশের প্রায় শতাধিক পরিবারকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হয়নি। বিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা যারা দিতে পেরেছেন তারা বিদ্যুৎ পেয়েছেন। এদেশে রোহিঙ্গাদের দাম আছে কিন্তু আমাদের দাম নেই।’ কথাগুলো  বলছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের বড়চেগ গ্রামের হারুনুর রশীদ ও মনসুর মিয়া।

    এলাকাবাসীর অভিযোগে গত শনিবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করার জন্য রহিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে ও নতুনভাবে বড়চেগ গ্রামের প্রায় চার কি.মি. বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি ভূমিতে বসবাসকারী এই চার কি.মি. এলাকায় বিদ্যুতায়নে খুঁটি স্থাপন শেষে তার টানার কাজ চলছে। নতুন এই লাইন স্থাপনে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তোলেছেন। প্রভাবশালী এই চক্রের বিরুদ্ধে সবাই মুখ খোলে কথা বলতেও সাহস পান না। তাদের চাহিদা মতো টাকার পুরো অংশ দিতে না পারায় আংশিক টাকা দিয়েও অনেকেই বিদ্যুৎ বঞ্চিত নিয়েছেন।

    বড়চেগ গ্রামের সমিরুন বেগম বলেন, মাহমুদ আলী মেম্বারের চাহিদা মতো অনেক কষ্ট করে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার পরও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়নি। গ্রামের আমির হোসেন বলেন, দুইটি মিটারের বিপরীতে ১৪ হাজার টাকা দেওয়া হলে তাদের চাহিদা মতো আরও ৬ হাজার টাকা দিতে না পারায় বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া যায়নি। মসুদ মিয়া বলেন, আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে মাহমুদ আলী মেম্বার ও সোলেমান মিয়া ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাদের চাহিদাকৃত টাকা দিতে না পারায় আমার বাড়ি সহ গ্রামের প্রায় ৯০টি পরিবারকে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করা হয়নি।

    এদিকে নতুন বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করার জন্য গ্রামবাসীর কাছ থেকে ২৭ লাখ টাকা চাঁদা আদায় এবং গ্রাম্য রাস্তার উপরে খুঁটির সাথে টানা স্থাপনে আপত্তি জানালে ইউপি সদস্য মাহমুদ আলী, তার মাদকাসক্ত ছেলে বাবেল ও সোলেমান মিয়া ওরপে পিচ্ছি সোলেমান হামলার চেষ্টা করেন বলে গত ২০ মে মসুদ আলী কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়াও অবৈধভাবে ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে মাহমুদ আলী ও সোলেমান মিয়াকে অভিযুক্ত করে গত ২২ মে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে মসুদ আলী, মাসুক মিয়া, মো. আসাদ, আমির হোসেন ও জোবায়ের আহমদ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া রহিমপুর ইউনিয়নের কালাছড়া গ্রাম থেকেও মিটার, উদ্বোধনী খরছসহ অন্যান্য খাত দেখিয়ে একটি প্রভাবশালী মহল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করার খবর পাওয়া গেছে।

    অভিযোগ বিষয়ে সোলেমান মিয়া ও রহিমপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মাহমুদ আলী টাকা গ্রহণের কথা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা কিছু টাকা উত্তোলন করে বিভিন্ন কাজে ব্যয় করেছি। খরছ ছাড়া তো কোন কাজ করা যায়নি।

    মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শ্রীমঙ্গলস্থ অফিসের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী আশিকুর রহমান (কেসিএল) বলেন, রহিমপুর ইউনিয়নের বড়চেগ গ্রামের অবশিষ্ট এলাকায় জমির মালিকানা বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সরকারি থাকলে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লিজ অথবা ব্যক্তি মালিকানাধীন কাগজপত্রাদি দেখালে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।