কমলগঞ্জে চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় প্রকল্পের টাকা লুটপাট

    0
    413

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০২এপ্রিল,কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ   কমলগঞ্জ উপজেলায় অতিদরিদ্রের কর্মসংস্থানে সরকারের গৃহীত কর্মসৃজন প্রকল্পের সুফল পায়নি প্রকৃত দরিদ্র লোকজন। ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ঠ চেয়ারম্যান মেম্বাররা নিজেদের ঘনিষ্ট আত্মীয়-স্বজন, পান ও চাল ব্যবসায়ী, ইউডিসি উদ্যোক্তা, বিত্তশালী ও সরকারী চাকুরীজীবি পরিবারের সদস্যদের নাম শ্রমিক তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে প্রকল্পের অর্থ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। অধিকাংশ তালিকা ভুক্ত শ্রমিক জানেই না এ প্রকল্পের খবর। এছাড়াও প্রকল্প এলাকায় খুজে পাওয়া যায়নি কোন সাইনবোর্ড। গোপনেই লুটপাট করে নেওয়া হয়েছে ৪০ দিনের প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা। গত তিনদিন ধরে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নে সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে এ অনিয়ম ও লুটপাটের চিত্র ফুটে উঠেছে। ইউপি সদস্য বশির বক্স, জুমের আলী, রেজাউল করিম ও সুনীল কুমার সিংহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইউপি সদস্যরা নামে মাত্র প্রকল্প চেয়ারম্যান,প্রকৃতপক্ষে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় এসব অনিয়মের ঘটনা ঘটছে।

    জানা গেছে, উপজেলার গ্রামীন রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইজিপিপি কর্মসুচির ১ম পর্যায়ে আদমপুর ইউনিয়নের৪টি প্রকল্পে ২৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ৩৩২ জন শ্রমিকের কাজ করার জন্য ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্নের নির্দেশনা থাকলেও দুর্বল তদারকির কারণে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ভূয়া ও স্বল্প শ্রমিক দিয়ে নামমাত্র কাজ করে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

    প্রকল্প চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য কে মনিন্দ্র সিংহ নিজ সম্প্রদায় মনিপুরী ৩৬জন পুরুষ ও ২৫জন মহিলা কে অতিদরিদ্র দেখিয়ে শ্রমিক তালিকা ভুক্ত করলেও বাস্তবে তাদের কেউ প্রকল্প এলাকায় কাজ করেনি। অথচ তালিকাভুক্ত সব মনিপুরী শ্রমিকরা স্বচ্ছল ও শিক্ষিত। ছনগাওঁ গ্রামের তালিকাভুক্ত মনিপুরী মহিলা শ্রমিক রাসে দেবী কোন কাজ করেনি তবে চেকে স্বাক্ষর দিয়ে ৫শত টাকা ও ভানুবিল গ্রামের বেলী রাণী মাত্র ২০০টাকা পেয়েছেন বলে জানান। একই প্রকল্পের শ্রমিক এলাকার বিত্তশালী নাসির মিয়া কাজ করার কথা অস্বীকার করে জানান, তার ৪ ছেলে প্রবাসে। তিনিও হতবাক। এ বিষয়ে অবগত নন। ডিজিটাল শ্রমিক হিসেবে পরিচিত আদমপুর ইউপির তথ্য সেবা কেন্দ্রর উদ্যোক্তা অশোক মীতৈর সাথে বারবার তার মুঠোফোনে(০১৭১৫৪৯০১০৫) কথা বলতে চাইলে ফোন না ধরায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
    নির্ধারিত শ্রমিক তালিকায় অর্ন্তভূক্ত সরকারী চাকুরীজীবি পরিবারের সদস্য, সৌখিন গৃহিনী,ব্যবসায়ীরা টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে ঘোড়ামারা গ্রামের নিলিমা রানী সিনহা, অঞ্জলী দেবী, শ্রাবনী সিনহা ,উত্তর ভানুবিলের চিত্ত বিশ্বাস স্বীকার করেছেন। এছাড়াও শ্রমিক তালিকায় থাকা অঞ্জনা রানী সিনহা একজন পুলিশ কর্মর্কতার স্ত্রী। কুতুব আলী, সুজন মিয়া,আছকর আলী,বাদশা মিয়া কোন কাজ করেননি,টাকাও পাননি বলে জানিয়েছেন।

    এদিকে তালিকাভূক্ত শ্রমিক স্যানিটারী ব্যবসায়ী মোঃ আমির হোসেন কোন কাজ না করে চেকে স্বাক্ষর দিয়ে সাড়ে সাত হাজার টাকা তুলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প চেয়ারম্যানকে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এভাবেই ইউনিয়নের অন্যান্য প্রকল্পের মতো ভূয়া শ্রমিক দেখিয়ে অতিদরিদ্্েরর টাকা লুটপাট করছেন প্রকল্প চেয়ারম্যানরা । প্রকল্পের কাজে খাতা-কলমে শ্রমিকসংখ্যা ঠিক রেখে বাস্তবে কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ ইউপি সদস্য বশির বক্স, জুমের আলী, রেজাউল করিম ও সুনীল কুমার সিংহ। ৪টি প্রকল্পের চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যগনরা, ভুয়া শ্রমিকদের চেকে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে নিজেই পূবালী ব্যাংক আদমপুর বাজার শাখা থেকে প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন করে ৫০০/১০০০ টাকা প্রদান করে বাকী টাকা নিজেদের পকেটস্থ করেছেন বলে শ্রমিকরা জানান।

    প্রকল্প চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য হাজী আলমগীর হাসান ও মোস্তফা কামাল জানান, তাদের কর্ম এলাকায় কোন অনিয়ম হয়নি। ইউপি সদস্য কে মনিন্দ্র সিংহ কোন সুদত্তর দিতে না পারলেও অপর প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও মহিলা ইউপি সদস্য সন্ধ্যারানী সিনহা বলেন, প্রকল্প বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না, তবে ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলার পরার্মশ দেন।
    উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ট্যাগ অফিসার শাব্বির আহমেদ বলেন, তিনি শ্রমিক যাছাইবাচাই কালে প্রশিক্ষনে থাকায় পরবর্তীতে শ্রমিক তালিকায় স্বাক্ষর দিয়েছেন।
    এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্ম্দ মাহমুদুল হক (১৭১৬৩৬৭০৩৫) ও আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দাল হোসেন (০১৭২৭৩১৫৪২১) এর সাথে যোগাযোগ কার সম্ভব হয়নি।