কবিরাজের কথায় উলঙ্গ হয়ে শ্বশানে তাবিজ জ্বালিয়ে

    0
    413

    “কবিরাজের সাঙ্গোপাঙ্গদের কথামত অনৈতিক কাজ না করার অপরাধে গ্রাম ছাড়ার হুমকি,মৌলভীবাজার থানায় মামলা নিস্তেজ !”  

     

    আলী হেসেন রাজন.মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ বন্ধ্যা নারীদের সন্তান হওয়া, অল্প বয়সে চুল পাকা, প্রতিবন্ধী শিশুদের ভালো করা, প্রেমিক-প্রেমিকাকে পাইয়ে দেয়া, জিন- ভূত তাড়ানো, যেসব নারীদের বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে হচ্ছে না ক্যানসার, ডায়াবেটিকস, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, পিত্তথলিতে পাথর, প্যারালাইজড, বাতের ব্যথা, হাঁপানি, একশিরা, যৌন দুর্বলতা, আলসার, ব্যথা, স্বপ্নদোষসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করে। আর রোগের তাবিজের হাদিয়া নিয়ে থাকে ২১শ টাকা।
    মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নের সনকাপন গ্রামের তাজিন মিয়ার ছেলে শামিম মিয়ার ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে বিভিন্ন গ্রাম এলাকার সহজ-সরল মানুষ। সর্বরোগ সারানোর কথা বলে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওইসব  ভণ্ড সাধু কবিরাজের ঝাড়-ফুঁক, পানি পড়া আর তাবিজ-কবজ এনে দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করছেন একই গ্রামের তারই পাতানো চাটুকার রুবেল মিয়া ও সোহেল মিয়া।
    সরেজমিনে গেলে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারী জৈতুন মিয়ার মেয়ে শাবনুর বেগমের প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য একটি তাবিজ এনে দেয় শামিম, আর শামিম শাবনুরকে বলেন রাতে হিন্দুদের শ্বশান ঘাটে উলঙ্গ হয়ে তাবিজ জ্বালানোর জন্য। ছেলের সুস্থতার কথা চিন্তা করে শাবনুর সনকপন ও ঘাগুটিয়ার মাঝা মাঝি শ্বশান ঘাটে উলঙ্গ হয়ে তাবিজ জ্বালায়,ঐ সময় শামিম তার মোবাইল দিয়ে শাবনুরের উলঙ্গ অবস্থায় ছবি তোলে। ১৪ জানুয়ারী সকালে শামিম শাবনুরের নানা বাড়িতে এসে বলে কবিরাজ বলেছে তোমার তাবিজ জ্বালানো হয়নি তাই আজ রাতে আরেক টি তাবিজ জালাতে হবে। এই তাবিজ জ্বালানোর জন্য তোমার সাথে ১৪/১৫ বয়েসের একজন মেয়ে সাথে নিতে হবে।শামিমের কথা শুনে শাবনুর যেতে অস্বিকার করে।এসময় শামিম বলে কবিরাজ বলেছে আজ তাবিজ না জ্বালালে তোমার ছেলের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে,তাই তোমাকে তাবিজ জ্বালাতে হবে।

    ছেলের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে কারনে শাবনুরের খালাত বোন কনা মিয়ার মেয়ে সুইটিকে নিয়ে শ্বশান ঘাটে রাতে য়ায়,সেখানে শাবনুর উলঙ্গ হবার সময় সাথে থাকা সুইটি দেখে পেলে শ্বশান ঘাটে দেয়ালের পাশে দুইটি ছেলে রুবেল ও সোহেল লুকিয়ে আছে । তখন শাবনুরকে সুইটি বলে উলঙ্গ না হওয়ার জন্য। ছেলেদের দেখে সেখান  থেকে পালিয়ে আসার চেষ্টা করলে শামিম ,রুবেল ও সোহেল তাদের কে ধরে পেলে এবং তাদের সাথে খারাপ কাজ করতে চাইলে শাবনুর ও প্রিয়ার সুর-চিৎকার শুনে স্থানীয়  উজ্জল নামে একটি ছেলে ছুটে আসে, শাবনুর ও সুইটিকে তাদের হাত থেকে ছাড়িয়ে দিলে শাবনুর ও সুইটি পালিয়ে বাড়িতে চলে যায় এবং মেয়ে দুটিকে উদ্ধারকারী উজ্জলকে আটক করে শামিম ,রুবেল ও সোহেল মিলে শ্বশান ঘাটে গাছের সাথে  বেঁধে মার দর করে। ঐ রাতেই উজ্জলকে সঙ্গে নিয়ে শামিম,রুবেল ও সোহেল শাবনুরের নানা বাড়িতে আসে,দরজা  ভেঙ্গে  তাদের কে হুমকি দিয়ে বলে তাদের সাথে খারাপ কাজ না করলে মোবাইলে তোমার উলঙ্গ অবস্থায় থাকা ছবি ইন্টারনেট,ফেইজবুকে ছড়িয়ে দিব,এসময় তারা ঘরের  সব কিছু মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করে নেয়। বিষয় টি যখন জানা জানি হলো তখন তাদের এলাকার পবন মিয়ার বাড়িতে পবন মিয়া,পবন মিয়ার ছেলে ইকবাল মিয়া ,মাহমুদ মিয়,সালিক উদ্দিন মালিক উদ্দিন তড়িঘড়ি করে একটি সালিশ বসায়,সেখানে পবন মিয়া অভিযুক্ত শামিম,রুবেল ও সোহেলের অভিবাভকদের বলেন ৪০ হাজার টাকা দেয়ার জন্য।

    সালিশ না মেনে পর দিন মৌলভীবাজার মডেল থানায় শাবনুর বাদি হয়ে একটি অভিযোগ দ্বায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার মডেল থানার এস আই গিয়াস ও সদর সার্কেল রাতে অভিযান চালালে অভিযোক্ত শামিম,রুবেল ও সোহেল পালিয়ে যায়।
    এই প্রতিবেদক কে মেয়েদের অভিবাভকরা জানান সালিশ না মানায় পবন মিয়া তাদের কে এই গ্রাম ছেরে চলে যাওয়ার  নির্দেশ  দিয়েছে এবং এলাকার কেউ যাতে আমাদের সাথে না মিশে তাও নিষেধ করে দিয়েছে।
    এবিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার এস আই গিয়াস বলেন বাদী যোগাযোগ না রাখায় তাদের অভিযোগ আলোর মুখ দেখেনি। আর মডেল থানার অফিসার ইনর্চাস আলমগীর হোসেন বলেন এবিষয়ে জেনে কথা বলবেন।
    বর্তমানে এই পরিবর টি রয়েছে হুমকির মুখে সরকার ও প্রশাসনের কাজে সহযোগীতা চায়।দেশের আইন–প্রশাসন এগুলোর প্রতি নজর না দিলে সরল মনের মানুষেরা প্রতারিত হতেই থাকবে বলে সচেতন মহল আশংকা করছে।