কওমী সনদের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যানঃ৫১০ জনের বিবৃতি !

    0
    253

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৪এপ্রিল,সাজিদুল ইসলাম রানা: কওমী সনদের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করে ৫১০ আলেমের বিবৃতি দিয়েছেেন।তারা দেওবন্দের আট মূলনীতিতে স্বীকৃতি নেয়া নিষিদ্ধ বলে দাবী করেছেন।বিবৃতি দাতারা  বহু বিতর্কিত আল্লামা আহমদ শফীর, ও মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের  কঠোর সমালোচনা করে বলেন,

     দেশের প্রখ্যাত  ৬টি বোর্ড ও বিশিষ্ট আলেমদের সমন্বয়ে কওমী সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়নের পথে। গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় ৩০০ কওমী আলেম প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে স্বীকৃতি নেয়ার জন্য প্রস্তুত। অথচ কোন শর্তে কিসের ভিত্তিতে স্বীকৃতি হচ্ছে তা দেশের লাখো আলেম জানেন না। সরকারের সাথে প্রতিটি বৈঠক গোপনে হচ্ছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা মিডিয়ার সামনেও মুখ খুলছেন না। রহস্যময় পরিবেশ ও ঢাক ঢাক গুড় গুড় ভাব। এমতাবস্থায় দেওবন্দের অনুসারী হাজারো মাদরাসা, এসবের মুহতামিম, ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক ও দাতারা চরম আতঙ্কিত। গত দেড়শ’ বছর স্বীকৃতি ছাড়া দেওবন্দ ও তার অনুসারী লাখো মাদরাসা যে আট নীতিমালার উপর চলে এসেছে, বাংলাদেশের ব্যতিক্রম সরকারি স্বীকৃতির কি প্রয়োজন পড়ল তা কারোরই বুঝে আসছে না। শোনা যাচ্ছে উলামায়ে কিরামের পক্ষে এক-দু’জন অর্থলোভী, অপরিপক্ব ও অনির্ভরযোগ্য ব্যক্তি সরকারের সাথে দহরম-মহরম করছেন। গতকাল১১ এপ্রিল দেশের শীর্ষ ৫১০ আলেম এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
    বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, স্বীকৃতির নামে মাদরাসাগুলো সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার খেলাঘরে পরিণত হবে। আলেম সমাজের পায়ে শিকল পরানোই স্বীকৃতির মূল লক্ষ্য। তড়িঘড়ি করে গোপনে নয়, স্বীকৃতির শর্তাবলি জনসমক্ষে প্রকাশ করে প্রস্তাব ও সংশোধনীর সময় দেয়া হোক। এতে যারা স্বীকৃতির পক্ষে তারা বুঝে-শুনে স্বীকৃতি নিতে পারবে। যারা স্বীকৃতি চায়না তাদের ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ৪৬ বছরের  মতো স্বীকৃতি ছাড়াই স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে। যেমন: ভারত, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা দেশে স্বীকৃতি ছাড়াই দেওবন্দী মাদরাসা চলছে।
    আলেমগণ বেফাকসহ সকল বোর্ডের মুরব্বীদের বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ জানান। সাময়িক ও অদূরদর্শী চিন্তায় হযরত নানুতুবী রহ.-এর ইলহামী ধারাকে বিনষ্ট করা সমীচীন হবে না।
    নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, বহু বিতর্কিত মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ প্রথম মিডিয়াকে জানিয়েছেন, ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দেবেন। আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে কওমী নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে স্বীকৃতি নেবেন। আমরা কওমী ঘরানার বিরাট অংশ এ স্বীকৃতি চাই না। কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষাব্যবস্থা ধর্মহীন কর্তৃপক্ষের  দেশের বর্ষীয়ান আলেম হেফাজতে ইসলামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল মালেক হালিম এ কথা বলেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শীর্ষ ৫১০ মাদরাসা প্রধান ও ইসলামী সংগঠনের নেতা  যৌথ বিবৃতিতে বলেন, কওমী স্বীকৃতি এতদূর অগ্রসর হয়ে গেল অথচ কওমী অঙ্গনে এর প্রক্রিয়া ও ভালো-মন্দ স্পষ্ট নয়। কারা এ বিষয়ে সরকারের সাথে দহরম-মহরম করছেন সেটাও কওমী আলেম সমাজ জানে না। গত কিছুদিন ধরে খুব গোপনে কওমী স্বীকৃতির নানা ধাপ দ্রুত অগ্রসর হয়েছে, আজ ১১ তারিখ স্বীকৃতি হয়ে যাচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে কিন্তু আমরা ৫১০ জন মুহতামিমসহ লাখো আলেম কিছুই জানি না। গোপন চুক্তির মতোই গোপন কওমী স্বীকৃতিও জাতিকে হতাশায় ফেলে দিচ্ছে।
    নেতৃবৃন্দ বলেন, দেওবন্দের আট মূলনীতিতে স্বীকৃতি নেয়া নিষিদ্ধ। গত দেড়শ’ বছরেও দেওবন্দ কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেয়নি। ভারত, আফ্রিকা-ইউরোপেও কওমী মাদরাসা সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, স্বাধীনভাবে চলছে। কেবল বাংলাদেশে কেন স্বীকৃতির নামে কওমী মাদরাসাকে নিয়ন্ত্রণের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। হাটহাজারীর মুরব্বীরা গত একশ’ বছর স্বীকৃতির বিরুদ্ধে ছিলেন। পটিয়ার মুফতি সাহেব (রহ.) ৫৪ সালে কওমী আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্টের সময়েও স্বীকৃতির বিরোধী ছিলেন। হযরত হাফেজী হুজুর (রহ.) সবসময়ই স্বীকৃতির বিরোধী ছিলেন। আল্লামা আহমদ শফীও আমাদের কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রাখার কথা বলেছেন। বর্তমানে কওমী আলেমদের বিচ্যুত ধারার নেতা, শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ফরিদ উদ্দিন মাসউদের তৎপরতায় শামিল হয়ে কওমী ধারার কিছু আলেম যে পথে অগ্রসর হচ্ছেন তা খালেস দীনি শিক্ষার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
    বর্তমান ফিতনার যুগে বাতিলের প্রভাবমুক্ত ইসলামী শিক্ষা ও চেতনার জন্য কওমী মাদরাসা অপরিহার্য। সেক্যুলার পদ্ধতির স্বীকৃতি নিয়ে দীনের আলেমরা কী মর্যাদা বা ক্ষমতা লাভ করবেন তা এক বিরাট প্রশ্ন। আমরা আল্লামা শফীসহ দেশের সব বোর্ডকে আল্লাহর ওয়াস্তে বলতে চাই, খুব ভেবে-চিন্তে কাজ করুন। আমরা শতকরা ৮০ ভাগ কওমী আলেম  (বোর্ডভুক্ত বা বহির্ভূত) ভয় পাচ্ছি, সরকারি যোগাযোগ ও সখ্য যেন কওমী মাদরাসা ধ্বংসের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। দেওবন্দ সরকারি স্বীকৃতি বা সাহায্য কোনোটাই নেয় না। মুহতামিম মাও. মারগুবুর রহমান ও সাইয়েদ আরশাদ মাদানী দা. বা.-এর বক্তব্য আপনারা পড়ে দেখুন। মাও. তাকি উসমানীর বক্তব্য পড়ে দেখুন। সরকারের নিযুক্ত দরবারি আলেমদের ফাঁদে পড়ে কওমী মাদরাসাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না। শত বছরের জাতির সাহায্য, দান, সদকা, জাকাত ও কোরবানির চামড়ায় পরিচালিত দীনি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বকীয়তা বিনাশের সূচনা যেন আপনাদের দ্বারা না হয়। এ উদ্যোগে কওমী শিক্ষার ক্ষতি হলে আপনারা খেয়ানতের দায় এড়াতে পারবেন না।
    আমরা বিস্মিত কওমী মাদরাসায় হস্তক্ষেপের বিষয় সামনে এলে আহমদ শফী সাহেব বলেছিলেন, কওমী মাদরাসায় হাত দিলে লাখ লাখ লাশ পড়বে। বলেছিলেন, মাদরাসা শিক্ষা হুমকির সম্মুখীন হলে দেশে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে। এখন হঠাৎ করে কী এমন হয়ে গেল যে, আল্লামা শফী সাহেব শাহবাগপন্থীদের সাথে এক হয়ে কওমী মাদরাসার ইতিহাস বদলে দিতে চাইছেন। দেশের অসংখ্য আলেমকে অন্ধকারে রেখে গোপন বৈঠকে এত কিছু হয়ে যাচ্ছে দেখে তওহীদী জনতা চরম উদ্বেগে রয়েছে। বিশেষত দেবীমূর্তি, খুতবা নিয়ন্ত্রণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি অধিগ্রহণ, মুসলমানদের জন্য মো্ঙ্গল শোভাযাত্রা বাধ্যতামূলককরণ ইত্যাদি বিষয়ে অনেক নেতার অদ্ভুত নীরবতাও তাওহীদি জনতার উদ্বেগের কারণ।
    এ অবস্থায় স্বীকৃতির বেলায় তারা কতটা প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবেন তা জনমনে জিজ্ঞাসা হয়ে আছে। সুতরাং এখনো সময় আছে, দীনি শিক্ষার এ প্রাচীন ব্যবস্থাটিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচান। ঢাকার মিরপুর, কামরাঙ্গিরচর, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর টঙ্গি ও গাজীপুরের বিভিন্ন মাদরাসাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর ইত্যাদি অঞ্চলে গণসংযোগের মধ্য দিয়ে মাওলানা আবদুল মালেক হালিম ও তার সঙ্গীয় ৫১০ আলেম স্বীকৃতির নামে সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং কওমী স্বকীয়তা বিনষ্টের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কর্মসূচি শুরু করেছেন বলেও বিবৃতিতে জানান।
    বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন মাওলানা সৈয়দ আবদুল মালেক হালিম, শাইখুল হাদিস মাওলানা সুলাইমান নুমানী, শাইখুল হাদীস মাওলানা ফারুক আহমদ, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা মাহবুবুর রহমান ঢাকুবী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা নূরুজ্জামান, মাওলানা আশরাফুজ্জামান পাহাড়পুরী, মাওলানা মোঃ ফয়সাল, মাওলানা নূর মোহাম্মাদ, মাওলানা কামাল হুসাইন মাওলানা সাজেদুর রহমান ফয়েজী, মুফতি নেয়ামত উল্লাহ, মুফতি শরীফুল ইসলাম, মাওলানা আবু সাঈদ প্রমুখ ৫১০ আলেম।সুত্রঃইউকেবিডিটাইমস।