ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে জামিন আদেশ বাতিল

    0
    252

    ফেনী জেলার মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যোর ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে সাইবার ট্রাইব্যুনাল তার জামিন আদেশ বাতিল করে এ আদেশ দেন। সোমবার বেলা সোয়া ২টার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। মাথা নিচু করে মুখ ঢেকে আদালতে প্রবেশ করেন তিনি।

    অভিযোগ গঠনের জন্য মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ৩০ জুন নির্ধারণ করেছেন আদালত। অপরদিকে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস শামস জগলুল হোসেনের আদালতে ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন করেছেন তার আইনজীবী মাসুমা আক্তার। এর আগে সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় তাকে বহনকারী গাড়িটি শাহবাগ থানা থেকে রওনা হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়। এরপর তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। দুপুর ২টার দিকে তাকে সাইবার আদালতে তোলা হয়।

    আজ সোমবার সকালে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছ থেকে ফেনী পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মাহবুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ সকালে জানান, ‘সোনাগাজী থানা পুলিশের একটি দল গতরাতেই ঢাকা এসেছে। আজ সকালে আমরা তাকে তাদের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি। তারাই মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে গেছেন।’গতকাল রোববার রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকা থেকে শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

    গত মার্চ মাসে নুসরাত যখন তার মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছিলেন তখন সোনাগাজী থানার ওসি ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। অভিযোগ আছে, নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার কয়েকদিন আগে ২৭ মার্চ তাকে আপত্তিকর প্রশ্ন এবং তা ভিডিওতে ধারণ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তিনি তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সন্তান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। মামলায় আদালতের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে ২৭ মে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেদিনই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
    এর আগে ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যুর রাতেই সোনাগাজী থানা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রত্যাহার করা হয়। ৮ মে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে ১২ মে রংপুর রেঞ্জে ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। আর গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি ৩ জুন ফেনী ও পরবর্তী সময়ে রংপুর রেঞ্জ অফিসে পৌঁছায়। আর এই সুযোগে ওসি মোয়াজ্জেম চলে যান আত্মগোপনে। গতকাল রোববার হাইকোর্টে জামিন করাতে এসে কদম ফোয়ারার সামনে থেকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মোয়াজ্জেম।

    যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়, গোয়েন্দারা জানান, নুসরাত হত্যার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মোয়াজ্জেম হোসেনের যে ছবি ছড়িয়েছিল, গ্রেফতার হওয়া মোয়াজ্জেমের সঙ্গে সেই চেহারার মিল খুঁজতে তাদের বেগ পেতে হয়েছে। রোববার (১৬ জুন) দুপুরে তিনি যখন হাইকোর্টে আগাম জামিন নিতে আসেন তখন থেকেই তাকে গ্রেফতারে তৎপর ছিলেন গোয়েন্দারা।

    দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সকালে ওসি মোয়াজ্জেম জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে আসার পর প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের ১১১ নম্বর কক্ষে বসেন। এরপর শাহবাগ থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নেয়। তবে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের  জানান, “শাহবাগ থানাধীন কদম ফোয়ারার সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের কাছে গোপন তথ্য ছিল তিনি সেখানে থাকতে পারেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”