উৎবেগ আর উৎকণ্ঠায় সুনামগঞ্জের হাওরাবাসী

    0
    224

    “সরকারী,বেসরকারী ত্রান ও সহায়তা কমে আসছে,বন্ধ হয়ে গেছে খোলা বাজারে চাল বিক্রি”

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৩জুলাই,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ  জেলার হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবার গুলোর মাঝে আতংক বিরাজ করছে। এক ফলসী বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাবার পর থেকেই জেলার তাহিরপুর,দিরাই,শাল্লা,জগন্নাথপুর,ধর্মপাশা,জামালগঞ্জ,বিশ্বম্ভরপুরসহ ১১টি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সরকারী ও বেসরকারী সহযোগীতা দিয়ে আসছে যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সেই সহায়তাও এখন শেষের পথে। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে খোলা বাজারে চাল বিক্রির কার্যক্রম।

    জুলাই মাসের শেষে হবে প্রান্তিক,দরিদ্র ও ক্ষুদ্র চাষীদের জন্য নেওয়া সরকারের বিশেষ বরাদ্ধ ভিজিএফ কার্ডের কার্যক্রম। সরকারী সহায়তার পাশা পাশি বেসরকারী ত্রান সহায়তাও দিন দিন কমে আসায় উৎবেগ আর উৎকণ্ঠায় আছে ক্ষতিগ্রস্থ হাওরাবাসী।

    সহয়াতা বন্ধ হলে হাওরপাড়ে অভাব আরো প্রকট আকার ধারন করবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। জানাযায়,অকাল বন্যায় জেলায় ৯০শতাংশ বোরো ধান পানিতে তুলিয়ে যাওয়ার পর সরকার ভাবে গত ১০এপ্রিল ৪২টি পয়েন্টে ১৫টাকা কেজি ধরে চাল বিক্রিয় শুরু হয়। ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্য এর আরো ৬৮টি ওএমএস কেন্দ্র চালু করা হয়।

    এসব কেন্দ্রে সাপ্তাহে ৬দিন শনিবার ছাড়া প্রতিদিন ১৫টাকা কেজিতে ২শত মানুষের মধ্যে ১টন চাল বিক্রি করা হয়। ৩০জুন ওএমএস চাল বন্ধ হয়ে গেছে। গত এপ্রিল মাসের ২৩তারিখে ৩মাসের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ ঐসব কৃষকদের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্ধ ভিজিএফ কার্ড চালু হয়। এতে প্রতিটি পরিবার ৫শত টাকা ও ৩০কেজি চাল সহায়তা পাচ্ছে।

    এই সহায়তাও বন্ধ হবে ৩০জুলাই। জেলার তাহিরপুর উপজেলার বীরনগড় গ্রামের সাদেক আলী,শফিক,সবুজ,সোহাগ মিয়া জানান,সরকার যে সাহায্য দিছে তার মধ্যেও চেয়ারম্যান ও মেম্ভারগন করেছে চরম দূর্নীতি। এর পরেও আমরা সরকারী সাহায্য পাইয়া কোন রখমে জীবন চলাইছি। এই সাহায্য বন্ধ হইলে সামনের দিন গুলো কিভাবে পার করবো এই দুশচিন্তায় আছি।

    আগামী ফসল রোপন ও উঠার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত সরকারী সহায়তা বাড়ানোর দাবী করতাছি। দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের দুমাল গ্রামের ইসলাম উদ্দিন,রামসিমপুর গ্রামের তারা মিয়া,আলী আজগড় জানান,এই বার চৈত্র মাসেই বানের পানিতে কষ্টের ফলানো বোরো ধান ডুবাইয়া সব শেষ করে দিছে। এরপর থেইকা আর কাজের ব্যবস্থা নাই। সরকারী যে চাল দেয় তাও এক বারেই বাজে গন্ধ করে তার পরও কোন রখমে খাইয়া না খাইয়া দিন পার করতাছি। না পাইলে খাইমো কি। এখন সরকারী সহযোগীতা না হইলে আমরা চলমো কেমনে। সাহায়্য বাড়াইতে হইব নাইলে বাচঁমু না। অপু,সাজিদ মিয়া,করিম মিয়া সহ জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের লোকজন জানান-আমরার চাষাবাদের গরু আর গোলা (ধান রাখার পাত্র) এখন শূন্য।

    সরকারী সাহায্য যা পাইছি তা কোন রখমে চলছি। ওএমএস বন্ধ হইয়া গেছে। শুনতাছি সামনে নাকি ভিজিএফ কার্ড বন্ধ হইয়া যাইব তাইলে কেমনে চলমো। এই বার হাওরে মাছও নাই যে জাল দিয়া মাছ ধইরা-বেইচ্ছা খাবার যোগার করমু। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুস পুরকাস্থ টিটু সহ জেলার সচেতন মহল মনে করেন-সরকারী সহযোগীতা বন্ধ না করে সময় ও সহায়তা বাড়ানো খুবেই প্রয়োজন। সাথে সাথে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার। হাওরে এখন ত কোন কাজ নাই,কাজ না থাকলে ঐসব ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের জীবন চালাবে কি ভাবে। আগামী বোরো ধান রোপন ও কাটার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্থদের কষ্টের শেষ থাকবে না।

    তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান-সরকারী ভাবে দেওয়া ওএমএস চাল বন্ধ ও ভিজিএফ কার্ডের সময়ও শেষের পথে এই সুবিধা বন্ধ হলে চরম দূভোর্গে পড়বে হাওরবাসী। কারন হাওরে লাখ লাখ কৃষক পরিবার এমনিতেই এখন বেকার সময় পার করছে। কাজ না করলে টাকা আসবে কোথা থেকে।

    আর টাকা না থাকলে খাবারও জোটবে না। ওএমএস ও ভিজিএফ কার্ডের সময় ও সহায়তা বাড়ানো খুবেই প্রয়োজন। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম জানান,সরকারী সহায়তার মেয়াদ শেষ হলেও আমরা সহায়তা বাড়ানোর জন্য আবেদন জানিয়েছি। আমরা সবাই সব সময় হাওরে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পাশে আছি।