উদ্বোধনের ৪বছর পর চালু হচ্ছে বেনাপোল প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল!

    0
    275

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৯মে,বেনাপোল থেকে এম ওসমান: উদ্বোধনের দীর্ঘ ৩ বছর ৯ মাস পার হওয়ার পর আগামী ২ জুন চালু হতে যাচ্ছে বেনাপোল চেকপোস্ট স্থলবন্দর আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন। নকশায় না থাকলেও ভবনটির তৃতীয় তলাটি ব্যবহার করা হচ্ছে বন্দর পরিচালকের দপ্তর হিসেবে। অন্যদিকে নিচতলায় পরিবহনের কাউন্টার করায় বন্দরের কর্মকর্তাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন কাউন্টারের জন্য আলাদা টার্মিনাল ও পরিবহন মালিকদের আলাদা অফিস কাউন্টার রয়েছে। এর ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রীদের পারাপারে বাধাগ্রস্ত হবেন।
    নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহাজান খান প্যাসেঞ্জার টার্মিনালটির আবারও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালুর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
    এর আগে ২০১৩ সালের ২৩ আগস্ট নৌ-পরিবহন মন্ত্রী এই প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলায় এতদিন তা চালু করেনি। এদিকে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনে প্রবেশ করলেই যাত্রীদের মাথাপিছু ৩৩ টাকা পরিশোধ করতে হবে। যাত্রীরা টার্মিনালে প্রবেশ করবে কি না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে অনেকে বলেছেন পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকলে সেটা দিতে কোনো অসুবিধা নেই।
    বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ভবনের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে এ আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল। ১০ তলা ভিত্তির ওপর বর্তমানে ৩ তলা পর্যন্ত ১ লাখ ৩ হাজার ৬৭৫ বর্গফুটের এ ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় ৭ কোটি ৬৮ লাখ ১৭ হাজার ৮৮২ টাকা। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডিং কর্পোরেশন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে ভবনটি হস্তান্তর করে। তারপর নৌ-পরিবহন মন্ত্রী উদ্বোধন করেন। এর পরপরই ভবনটির তিন তলায় চালু করা হয় বন্দরের প্রশাসনিক ভবনের কার্যক্রম। আর নিচতলা ও দ্বিতীয় তলা খালি পড়ে থাকে।

    ভবনের নকশায় রয়েছে, নিচতলায় একই সময়ে পাঁচটি বড় বাস দাঁড়ানোর মতো খালি জায়গা, খোলা বারান্দা, কাঁচ দিয়ে ঘেরা যাত্রীদের বিশ্রামকক্ষ, পর্যাপ্ত শৌচাগার, ব্যাংকের বুথ ও টোল আদায় কক্ষ, দ্বিতীয় তলায় যাত্রীদের জন্য ৩ হাজার ৮৪০ বর্গফুটের রেস্তোরাঁ, শৌচাগারসহ বিশ্রামকক্ষ, হাত-মুখ ধোয়ার কক্ষ (ওয়াশ রুম) এবং তৃতীয় তলায় টার্মিনাল তদারকি কার্যালয়, বিশেষ অতিথিদের (ভিআইপি) জন্য পাঁচটি বিশ্রামকক্ষ, শৌচাগার ও খোলা প্রাঙ্গণ থাকার কথা।
    ভবনে ঢুকে দেখা গেছে, নিচতলায় কিছু পরিবহনের কাউন্টার করা হয়েছে। দোতলায় কাজ চলছে। তৃতীয় তলায় ভিআইপিদের জন্য নির্মিত পাঁচটি কক্ষে বসে দিব্যি অফিস করছেন বন্দর পরিচালকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। যাত্রীদের বিশ্রামের বিশাল কক্ষে বসেন কর্মচারীরা। তার একপাশে বানানো হয়েছে নামাজের স্থান। প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের নকশায় এর কোনোটিই নেই।
    ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ব্যবসা, ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার দেশি-বিদেশি পাসপোর্টযাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করছে। ভ্রমণ কর বাবদ সরকার প্রতি বছরে প্রায় একশ কোটি টাকার কাছাকাছি রাজস্ব আয় করে থাকে। কিন্তু শুরু থেকে এপথে যাত্রী সেবার মান খুব নাজুক ছিল। সরকার ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বেনাপোল চেকপোস্টে আন্তর্জাতিক মানের প্যাসেঞ্জের টার্মিনাল নির্মাণ করেন। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এতদিন তা চালু করা হয়নি। ফলে যাত্রীরা বি ত হচ্ছিলেন তাদের কাঙ্খিত সেবা থেকে।
    বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, বন্দরের সাথে বিভিন্ন বৈঠকে যাত্রী ভোগান্তির বিষয়টি আলোচনায় আসার পর এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাস ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ হয় বেনাপোলবাসীর। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলেও তার সুফল মানুষ ভোগ করতে পারছিল না। এখন এটা চালু হলে মানুষ কাঙ্খিত সেবা পাবে বলে তিনি আশা করেন।
    বাংলাদেশ স্থলবন্দর এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন মজুমদার বলেন, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন চালু হলে যাত্রীরা সেখানে মাত্র ৩৩ টাকার বিনিময়ে বিশ্রামের জন্য দিনভর অবস্থান করতে পারবেন। একই ভবনের নিচে থাকছে ঢাকা-কলকাতাগামী যাত্রীবাহী পরিবহন কাউন্টার ও খাওয়ার জন্য ক্যান্টিনের ব্যবস্থা। এতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।

    বেনাপোল স্থলবন্দরের সিনিয়র উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ও ইমিগ্রেশন কাস্টমস কার্যালয়ের ভবন পাশাপাশি অবস্থিত। দুটি ভবনের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের বিষয়ে দুই পক্ষের একমত হতে তিন বছরের বেশি সময় লেগে গেছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে সবাই একমত হওয়ায় আগামী ২ জুন এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। এর ফলে যাত্রীরা টার্মিনালের মধ্য দিয়ে ইমিগ্রেশনে সরাসরি যেতে পারবেন।

    এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টার্মিনাল ভবনের নকশায় না থাকলেও বন্দর পরিচালকের দপ্তর আপাতত টার্মিনাল ভবনেই থাকবে। কারণ, বন্দর পরিচালকের ভবনে এখন রাজস্ব বিভাগের কাজ চলে।