উদযাপিত হচ্ছে সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা (আদ্বহা)

    0
    223

    ইসলামী ডেস্কঃ আজ বুধবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা (আদ্বহা)উদযাপিত হচ্ছে।সিলেটের কিছু অঞ্চলে ঘুরি ঘুরি বৃষ্টি হচ্ছে তবে বিশেষ করে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া খুব একটা গরম নয় আজ এখন পর্যন্ত কিছুটা ঠাণ্ডা রয়েছে।আজকের দিনে ত্যাগের মহিমায় চিরভাস্কর পবিত্র এই উৎসব পালনে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। আজ ১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলেও পরের দু’দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিল হজ্জে ও কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সাধারণত উট, দুম্বা, গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া এসব গৃহপালিত পশুই যা কোন প্রকার প্রতিবন্ধী নয় খোদ মুক্ত পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। এ দিকে ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তালবিয়া পাঠ করা ওয়াজিব। তালবিয়া হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’

    আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম তাঁর প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালামকে কোরবানি দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মূলত পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে আত্মোৎসর্গের এক পরম মহিমার নজির স্থাপন করে গেছেন তিনি। এই প্রতীকী ঘটনার অন্তর্নিহিত বাণী স্রষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও ত্যাগ স্বীকার। পশু কোরবানি হচ্ছে তার মাধ্যম শুধু। মানুষের জীবনে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের জন্য চরম ত্যাগ স্বীকারের প্রতীক কোরবানি। ঈদুল আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিজের অহমিকা ও উচ্চাভিলাষতা বিতাড়িত করে হজরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম এর প্রবর্তিত অগণিত কাল ধরে চলে আসা পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানি পর্ব এবং অপরিহার্য এ ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ।
    হজরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম এর সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা ও গভীরতম আত্মসমর্পণে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা সন্তুষ্ট হয়ে হজরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালামকে আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ কোরবানি করার নির্দেশ প্রদান করেন। হজরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম প্রিয়তম বস্তু তথা তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালামকে কোরবানি করার জন্য স্বপ্নে আদিষ্ট হয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহিম আল্লাহর নির্দেশে নিজের প্রাণপ্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালামকে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন, যা সর্বকালের মানব ইতিহাসে ত্যাগের সর্বোচ্চ নিদর্শন। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কুদরত ও রহমতে শিশুপুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম এর পরিবর্তে একটি দুম্বা (এক জাতিয় পশু যা মরুভূমি অঞ্চলে পাওয়া যায়) কোরবানি হলো। এর মাধ্যমে হজরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম ত্যাগের চরম পরীক্ষায় আল্লাহর দরবারে উত্তীর্ণ হন। এ থেকে বিশ্বের মুসলমানদের জন্য জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে হালাল গৃহপালিত পশু কোরবানি করার রেওয়াজ চালু হয়।
    সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর দেখানো পথে স্রষ্টিকর্তার প্রেমে আত্মোৎসর্গিত মহান নবী হজরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম নিজ প্রাণাধিক প্রিয় পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় নিবেদনের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন, তা বিস্ময়কর শুধু নয়; এক বিরাট শিহরণ জাগানো ঘটনারই অদ্বিতীয় বহিঃপ্রকাশ। হজরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম কর্তৃক পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালামকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কোরবানি দেওয়ার মর্মস্পর্শী ঘটনা ও স্মৃতিকে জীবন্ত করে রাখার জন্যই পশু কোরবানির চলমান বিধান। বাহ্যিকভাবে প্রতীকী জন্তু কোরবানির মাধ্যমেই সারা বিশ্বে মুসলমানরা সাড়ম্বরে ঈদুল আজহা পালন করে আসছে।

    ইসলামি শরিয়তে শুধু সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানির মাধ্যমে ঈদুল আজহার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘সুতরাং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে নামাজ কায়েম করো এবং কোরবানি করো।’ (সূরা আল-কাওছার, আয়াত: ২) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর কাছে সাহাবিরা আরজ করলেন, ‘ কোরবানি কী ? উত্তরে তিনি বললেন, এটি তোমাদের পিতা হজরত ইব্রাহিম আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম এর সুন্নত।’ (ইবনে মাজা ও আহমাদ)

    নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোরবানির দিনে আল্লাহর কাছে রক্ত প্রবাহিত (কোরবানি করা) অপেক্ষা প্রিয়তর আর কোনো কাজ নেই। অবশ্যই কিয়ামতের দিন কোরবানি দাতার পাল্লায় কোরবানির পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ হাজির হবে। কোরবানির রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার আগেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে
    কোরবানি করো।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজা)।
    লক্ষণীয় বিষয় হল,কে কত টাকা খরচ করে পশু ক্রয় করেছে, কার পশু কত মোটা, কত সুন্দর, আল্লাহ তা দেখেন না- বরং তিনি দেখতে চান কার অন্তরে কতটুকু তাকওয়া বা খোদাভীতি। কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগ ও উৎসর্গের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই উদ্দেশ্য। এর দ্বারা আল্লাহ মানুষের আন্তরিকতা যাচাই করেন। মূলত আল্লাহর কাছে তাকওয়া বা খোদা ভীতিই আসল কথা।

    তাই একজন মুসলমান হিসেবে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ রয়েছে, “আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এগুলোর গোশত ও রক্ত, বরং পৌঁছায়
    তোমাদের তাকওয়া।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত-৩৭)”

    কোরবানিদাতা শুধু নিজেই কোরবানির গোস্ত ভোগ করেন না, আত্মীয়-স্বজন,প্রতিবেশী এবং দরিদ্র মানুষের মধ্যে তা বণ্টন করেন। কোরবানির এই চেতনা এক দরদী সমাজ গঠনে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। দেশের অনেক দরিদ্র পরিবার আছে যারা ঈদের আনন্দ তেমনভাবে উপভোগ করতে পারে না। সমাজের সেই হতদরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ভেতর দিয়ে এবারের ঈদুল আযহা তাৎপর্যময় হয়ে ওঠতে পারে। বঞ্চিত মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার ভেতর দিয়ে সহমর্মিতার নতুন দৃষ্টান্ত করা সম্ভব।

    এই ঈদে যেহেতু পশু কোরবানি করা হয়, সেজন্য নিজ নিজ এলাকা বাড়ি ঘর অর্থাৎ কুরবানীর বর্জ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটির দিকে নজর দিতে হবে অবশ্যই। নগরবাসীর নিরাপত্তায় এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও তৎপর থাকতে হবে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য অনেক মানুষ ছুটে গেছেন নিজ নিজ বাড়ি ঘরে। গ্রামে গঞ্জে যাওয়া মানুষ যেন নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারে তা নিশ্চিত করা গেলে ঈদের আনন্দ অনেকটাই বেড়ে যাবে।

    বছরের দুটি ঈদের দিনে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা ভুলে যান। একে অপরকে বুকে টেনে নেন। এ এক বিরল দৃশ্য। “পশু কোরবানির সঙ্গে মানুষের মধ্যে থাকা বিদ্যমান পশু প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য,পরনিন্দাসহ এ ধরনের যাবতীয় নেতিবাচক কুপ্রবৃত্তিকে সরিয়ে সহজ-সরল মানবিক গুণাবলী অর্জনে ঈদুল আজহার তাৎপর্য নিহিত যেমন;তেমনি পাশের বাড়িতে থাকা আত্মীয় বা প্রতিবেশির কথা মনে রাখুন যিনি সারা বৎসরে হয়তো কোন একদিন এক কেজি গোস্ত ক্রয় করে নিজের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খেতে পারেনি” 

    উঁচু নিচু নেই ভেদাভেদ সকলকে নিয়েই ঈদের আনন্দে উদ্ভাসিত হোক সকল মানব জাতির অন্তর।