উগ্র হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজদের হাতে ২২ বার ধর্ষিত বিলকিস

    0
    192

    “শেষ পর্যন্ত প্রকৃত ন্যায় বিচার পাননি ওই গণধর্ষিত নারী”

     

    “গুজরাট গণহত্যাকে এমনভাবে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে যেন কোথাও কিছু ঘটেনি! তিন হাজার মানুষের মৃত্যু, দু’হাজার নারী ধর্ষণ, ত্রিশূলের ডগায় ভ্রূণ নিয়ে নাচা যেন কোনও কিছু ঘটনা না! আশাকরি ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল হবে, মানবিক হবে। মুসলিমদের কেবলমাত্র ভোটার হিসেবে না ভেবে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে।”

     

    বিশিষ্ট সমাজকর্মী, ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক ভারতের গুজরাটে ২০০২ সালে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় গণধর্ষণের শিকার বিলকিস বানু প্রকৃত ন্যায় বিচার পাননি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আজ (বুধবার) রেডিও তেহরানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে ওই মন্তব্য করেন।

    গতকাল (মঙ্গলবার) সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গুজরাট সরকারকে বিলকিস বানুকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, একটি সরকারি চাকরি ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে।

    গুজরাটের দাহদের বাসিন্দা বিলকিস বানু। ২০০২ সালের ৩ মার্চ বিজেপিশাসিত গুজরাটের গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু আহমেদাবাদের রন্ধিপুর গ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজদের কবলে পড়ে যান তাঁরা। সেসময় ২১ বছর বয়সী বিলিকিস বানুকে ২২ বার ধর্ষণ করেছিল উগ্র ধর্মান্ধরা। তাঁর পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর তিন বছর দু’মাস বয়সী মেয়ে সালেহাকে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে পাশবিক উন্মমত্ততায় হত্যা করা। সহায় সম্বলহীন ও নিঃস্ব হয়ে পড়েন বিলকিস। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে ওই ঘটনায় ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১১ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় আদালত।

    ড. ইমানুল হক

    সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. ইমানুল হক রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘১৭ বছর পরে হলেও বিলকিস বানু একটা মোটামুটি বিচার পেলেন। একে প্রকৃত ন্যায় বিচার বলব না। কারণ ২২ বার ধর্ষণের জন্য ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ধর্ষণের ক্ষতিপূরণ হয় না। তাঁকে একটা বাড়ি ও চাকরি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিলকিস বানুর বয়স এখন ৩৮ বছর। ২০০২ সালের ঘটনা। রায় বেরোলো ১৭ বছর পরে ২০১৯ সালে। যেসব পুলিশ কর্মকর্তারা এরমধ্যে জড়িত ছিলেন তাদের চারজনের কেবলমাত্র অবসর ভাতা আটকে দেয়া হয়েছে, সেভাবে কোনও শাস্তি দেয়া হয়নি। আর একজন পুলিশ কর্মকর্তা আর এস ভাগোরার অবসর ভাতা আটকানো হয়নি। যে ঘটনা সেসময় ঘটেছিল তাতে গুজরাট সরকারকে ফেলে দেয়া উচিত ছিল।’

    ইমানুল হক বলেন, ‘তখনকার প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী মুখে রাজধর্ম পালনের কথা বললেও তা পালিত হয়নি। গুজরাটের যিনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তিনি বলেছিলেন প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, সেই নরেন্দ্র মোদিকে যিনি রক্ষা করেছিলেন এল কে আদবানী তিনি আজকে বিজেপিতে জীবন্মৃত অবস্থায় আছেন। দলে তাঁর আজ কোনও গুরুত্ব নেই। একেবারে চরম গুরুত্বহীন অবস্থায় তিনি জীবন কাটাচ্ছেন। তিনি তাঁর প্রাপ্য শাস্তি খানিকটা হলেও পেয়েছেন। সেটাই অবশ্য যথেষ্ট নয়। বিলকিস বানুর ঘটনায় দেরীতে হলেও শেষ পর্যন্ত একটা বিচার মিলেছে। যখন বিচার পাওয়া গেল তখন দেশে নির্বাচন চলছে। আমাদের সুন্দর ধর্মনিরপেক্ষ দেশে প্রায় এক হাজার চারশ’ বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে বাস করে আসছে। তাকে হঠাৎ করে পাল্টে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। হিন্দু-মুসলিমের বিভাজনের ভিত্তিতে দেশে ভোট করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে কোনও আইন মানছেন না। তিনি নিজেকে শাহেন শাহ, সম্রাট ভাবছেন।’

    তিনি বলেন, ‘বিলকিস বানুর জন্য তিস্তা শীতলবাদসহ যেসব সমাজকর্মী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁদেরকে ধন্যবাদ। কিন্তু দুঃখের বিষয় ভারতের কোনও রাজনৈতিকদল তাদের পাশে যেভাবে দাঁড়ানোর দরকার ছিল তা দাঁড়াননি। শুধু তো বিলিকস বানু নয়, এরআগে আমরা দেখেছি জাহিরা বানু তিনি টাকা নিয়ে আপোস করে মামলা মিটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। গুলবার্গ সোসাইটি মামলায় যে পরিবারের দশ জনকে হত্যা করা হয়েছিল, তিনি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন। কিন্তু গণমাধ্যম বিষয়টি সেভাবে প্রকাশ্যে আনল না।’

    তিনি বলেন, ‘গুজরাট গণহত্যাকে এমনভাবে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে যেন কোথাও কিছু ঘটেনি! তিন হাজার মানুষের মৃত্যু, দু’হাজার নারী ধর্ষণ, ত্রিশূলের ডগায় ভ্রূণ নিয়ে নাচা যেন কোনও কিছু ঘটনা না! আশাকরি ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল হবে, মানবিক হবে। মুসলিমদের কেবলমাত্র ভোটার হিসেবে না ভেবে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে।’পার্সটুডে থেকে