ঈশা খাঁ ও মানসিংহের যুদ্ধস্থল ঐতিহাসিক এলাকা অষ্টগ্রাম

    0
    827

    আমারসিলেট24ডটকম,০২নভেম্বরঃ ভৌগোলিক অবস্থান : ২৪.২৬৬৬৬৬৬৭°  উত্তর দ্রাঘিমাংশ ৯১.১২৫° পূর্ব-দ্রাঘিমাংশ।
    এক সময়ের দুগ্ধজাত দ্রব্য পনীরের জন্য বিখ্যাত অষ্টগ্রাম এলাকা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা।  এই উপজেলার উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন ও ইটনা উপজেলা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নাছির নগর, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নাছিরনগর উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর ও নিকলি উপজেলা। আয়তন ৩৫৫.৫৩ বর্গকিলোমিটার।

    এই উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৫৯টি মৌজা, ১৭৩টি গ্রাম আছে ।

    এই উপজেলার নাম অষ্টগ্রাম কেন, এ নিয়ে নানা রকমের মতামত আছে। অধিকাংশের মতে— খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতকে বঙ্গের রাজা বল্লাল সেনের কৌলিন্য প্রথার বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠে। এই সময় বল্লাল সেনের অধীনস্থ সামান্ত অনন্ত দত্ত অষ্টগ্রামের কাস্তুল নামক স্থানে বসতি একটি স্থাপন করেন। অনন্ত দত্তের সাথে তাঁর গুরু শ্রী কণ্ঠদ্বিজ এবং অনচরবর্গ এই এলাকায় আসেন। তারা এই এলাকায় মোট আটটি গ্রামে বসতি স্থাপন করে। কালক্রমে এই আটগ্রাম অষ্টগ্রাম নাম পরিচিতি লাভ করে।

    ঐতিহাসিক  কুতুব মসজিদ অষ্ট গ্রাম
    ঐতিহাসিক কুতুব মসজিদ অষ্ট গ্রাম

    অন্যমতে এক সময় এই স্থানটিতে একটি সমৃদ্ধশালী গ্রাম ছিল। সে সময়ে এই গ্রামের নাম কি ছিল তা জানা যায় না। হযরত শাহজালাল (রঃ) এর আটজন সঙ্গী নিয়ে এই অঞ্চলে ধর্ম প্রচারের জন্য এসে কিছুদিন বসবাস করেছিলেন। অষ্ট (আট) আউলিয়া গ্রাম হিসাবে আট আউলিয়ার গাঁও বলা হতো। কালক্রমে তা অষ্টগ্রামে পরিণত হয়েছে।

    অন্যমতে এই অঞ্চলের আটটি মৌজা গ্রাম হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। এই মৌজাগুলো হলো— অষ্টগ্রাম, আসিয়া,  দুবাই ভাটেরা, নরসিংহ পূর্ববাদ,  খাসাল,  বীরগাঁও, বত্রিশ গাঁও ও বারেচর। এর ভিতরে অষ্টগ্রাম ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী। পরে এই গ্রামগুলোর সমন্বিত নাম দাঁড়ায় অষ্টগ্রাম।

    ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে অষ্টগ্রাম ময়মনসিংহের মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এই থানাকে  উপজেলায় পরিণত করা হয়।

    এই উপজেলার প্রধান নদী ৩টি। এগুলো হলো মেঘনা, বরাক ও ঘোড়ায়ুত্রা। উপজেলার প্রধান বিলগুলো হলো- বন্দ্রা, ধোপা, টুপা, মদন ও পদ্মা।

    উল্লেখ্যযোগ্য স্থান বা স্থাপনাঃ
    ১. ঐতিহাসিক কুতুব শাহ্ মসজিদ।
    ২. কাস্তুল পাথরের মসজিদ
    ৩. কাস্তুল (ঈশা খাঁ ও মানসিংহের যুদ্ধস্থল)
    ৪. হাবিলী বাড়ি (মাজার)

    অষ্টগ্রাম উপজেলার আয়তন: ৩০০.৪৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৩´ থেকে ২৪°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৯থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মিটামইন, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবড়ীয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা, পূর্বে হবিগঞ্জের লাখাই ও বানিয়াচং উপজেলা, পশ্চিমে বাজিতপুর ও নিকলী উপজেলা।

    জনসংখ্যা ১,৪৫,৫৫২; পুরুষ ৭৪৫৮০, মহিলা ৭০৯৭২। মুসলিম ১২৩১১৬ , হিন্দু ২২৩৪৭ , বৌদ্ধ ১৬ এবং অন্যান্য ৭৩ ।

    জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনা, বরাক, কালনী ও ঘোড়াউতরা। পদ্মা বিল, টোপা বিল, বাদ্রা বিল, চামিল বিল, মামদা বিল, মাটিহাটা বিল, ধোপা বিল, মোজানা বিল, বলিয়ান বিল, মনখোলা বিল উল্লেখযোগ্য।

    প্রশাসন ঃঅষ্টগ্রাম থানা গঠিত হয় ১৯০৫ সনে। ১৯৮৩ সালে উপজেলায় উন্নীত হয়।

    উপজেলা
    পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
    শহর গ্রাম শহর গ্রাম
    ৫৯ ৮২ ১৫৫৫০ ১৩০০০২ ৪৮৪ ৩৭.৯ ৩৭.৩
    উপজেলা শহর
    আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
    ২.১৫ ১৫৫৫০ ৭২৩২ ৩৭.৯
    ইউনিয়ন
    ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
    পুরুষ মহিলা
    আদমপুর ১১ ৯৩৮৬ ১১৩৯১ ১১০৪৫ ৩৫.৩৮
    অষ্টগ্রাম ২৩ ১২৬৯৯ ১৬৪৯৫ ১৫৩৫৩ ৪১.৮৩
    কলমা ৫৯ ৭০৬২ ৫৫০৯ ৫৭৩৫ ৪৬.৯৪
    কাসতাইল ৭১ ১১১৩৯ ৮১৫৮ ৭৩৭৫ ৩০.৩২
    খয়েরপুর আব্দু্ল্লাপুর ৮৩ ১৫৩৯৭ ১৫১৭৫ ১৪১৯৭ ৩৪.৯৬
    দেওঘর ৪৭ ১১২৯০ ১০২২১ ৯৯২০ ৩৬.৫৮
    বাঙ্গালপাড়া ৩৫ ৭০৪২ ৭৬৩১ ৭৩৪৭ ৩৬.২৯

    সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

    প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদঃ পাথরের মসজিদ (কাসতাইল, আনুমানিক ১৪৪৬ খ্রি.), কুতুব মসজিদ (আনুমানিক ১৬ শতক)।

    মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলীঃ ১৯৭১ সালে ৩ সেপ্টেম্বর পাকসেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পূর্ব অষ্টগ্রামের ইকরদিয়া গ্রামে ৩৫ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ৫ সেপ্টেম্বর সাভিয়ানগর গ্রামে পাকসেনারা আরও ২৫ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

    ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানঃ মসজিদ ৮২, মন্দির ১৩, মাযার ১২, আখড়া ২১। কাস্ত্তল পাথরের মসজিদ (১৪৪৬), কুতুব মসজিদ (আনুমানিক ১৬ শতক)।

    শিক্ষার হার ঃ গড় হার ৩৭.৪%; পুরুষ ৪২.৫%, মহিলা ৩২.০%।

    অনিয়মিত লিটল ম্যাগাজিনঃ  শুভেচ্ছা, সূর্যতপা ও অনির্বাণ।

    সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ঃলাইব্রেরি ১, অফিসার্স ক্লাব ১, খেলার মাঠ ৩০।

    জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস ঃকৃষি ৮২.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫২%, শিল্প ০.২৭%, ব্যবসা ৭.৫২%, পরিবহন ও যোগাযোগ ০.২৯%, চাকরি ১.৯১%, নির্মাণ ০.৩১%, ধর্মীয় সেবা ০.২৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৪% এবং অন্যান্য ৪.৫০%।

    কৃষিভূমির মালিকানা ঃভূমিমালিক ৬৬.১৮%, ভূমিহীন ৩৩.৮২%। শহরে ৫৬.৩৮% এবং গ্রামে ৬৭.৫১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

    প্রধান কৃষি ফসলঃ ধান, আলু, সরিষা, বাদাম, মরিচ, পিয়াজ, রসুন, হলুদ, ধনিয়া।

    বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি ঃপাট।

    প্রধান ফল-ফলাদিঃআম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে।

    হাঁস-মুরগি, মৎস্য ও গবাদিপশুর খামার ঃ এ উপজেলায় হাঁস-মুরগির ৮০ টি খামার রয়েছে। এ উপজেলার হাওড়গুলো মৎস সম্পদে পরিপূর্ণ এবং এখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গরু ও মহিষ মুক্তভাবে পালন করা হয়।

    যোগাযোগ বিশেষত্বঃ পাকারাস্তা ৭.৮০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৬৩.১৩ কিমি।

    বিলুপ্ত বা বিলুপ্ত প্রায় সনাতন বাহন ঃপাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

    হাটবাজার ও মেলা ঃঅষ্টগ্রাম বাজার, পূর্ব অষ্টগ্রাম বাজার, সাবিয়ানগর বাজার, কাস্তুল বাজার, বাঙ্গালপাড়া বাজার, আদমপুর বাজার, কলমা বাজার, খয়েরপুর বাজার ও আব্দুল্লাহপুর বাজার এবং বাঙ্গালপাড়ার চৌদ্দমাদালের মেলা (ভাটি এলাকার সবচেয়ে বড় মেলা) উল্লেখযোগ্য।

    প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ঃ  ধান, আলু, বাদাম, কলা, পেঁপে ।

    বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিলবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১২.৫৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

    পানীয়জলের উৎস ঃনলকূপ ৯৩.১৭%, পুকুর ১.৭৭%, ট্যাপ ০.৬৭% এবং অন্যান্য ৪.৩৯%।

    স্যানিটেশন ব্যবস্থাঃ এ উপজেলার ১৩.৮৫% (গ্রামে ১৩.২৪% ও শহরে ১৮.৩৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭৬.৭৫% (গ্রামে ৭৮.৩৬% ও শহরে ৬৪.৯০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৯.৪০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

    স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঃউপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১।

    এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা।  [এনায়েত সোবহান]

    তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; অষ্টগ্রাম উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭। সুত্রঃবাংলা পিডিয়া।