ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত আত্রাইয়ের কামার পল্লী

    0
    210

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৭আগস্ট,নাজমুল হক নাহিদ,আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর আত্রাইয়ে গ্রামীণ প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্পীরা এখন ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পারকরছেন। এ শিল্প নানা সংকটে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, কারিগরদের মজুরী বৃদ্ধি, তৈরি পণ্যসামগ্রী বিক্রয় মূল্য কম, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্টীল সামগ্রী আমদানি সহ চরম আর্থিক সংকট ও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কম থাকায় ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে আত্রাই উপজেলার কামার শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে।

    কিন্তু আগমনী ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের কামাররা দেশী প্রযুক্তির দা, কুরাল, বেকি, খুন্তা ও কাটারী বানাতে বেশ উৎসব মুখর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই গ্রামের লোকজন গরু, মহিষ, ছাগল জবাই ও মাংস তৈরির কাজের জন্য কামারীদের কাছে প্রয়োজনীয় ধারালো দেশী তৈরী চাকু, বটি, কাটারি ও ছুরি তৈরীর আগাম অর্ডার দেওয়া শুরু করায় কামার পলীগুলোতে টুংটুং শব্দে এখন মুখরিত। ঘুমাতে পারছে না পাশেরবাড়ির মানুষগুলো।

    আধুনিকতার উৎকর্স, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে নানাবিধ সমস্যার কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের গ্রাম-বাংলার মানুষের প্রিয় শিল্পটি। এক সময় আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক কর্মকার পরিবার থাকলেও তাদের তৈরি পণ্যসামগ্রী প্রযুক্তির ছোঁয়ার কাছে টিকে থাকতে না পারাই বেশকিছু পরিবার তাদের পৈতিক পেশা ছেড়ে পরিবারের অভাব-অনাটন ও চাহিদার তাগিদে লাভজনক অন্য পেশায় চলে গেছে। বর্তমানে উপজেলার মির্জাপুর-ভবানীপুর, বজ্রপুর, বান্ধাইখাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩০টি পরিবারের কর্মকাররা তাদের পৈতিক পেশা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে হলেও দু’মোঠ ভাতের আশায় তারা এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

    যতটুকু লাভ হোক না কেন কোন রকম দিন চললেই তারা বেজাই খুশি অন্য পেশায় যেতে তারা নারাজ। আহসানগঞ্জ হাট, নওদুলী হাট, ভবানীপুর-মির্জাপুর হাট, শাহাগোলা স্টেশন বাজার, বজ্রপুর হাট, বান্ধায়খাড়া হাট, কুশাতলা হাট, কাশিয়াবাড়ি হাট, আত্রাই সদরসহ প্রতিটি হাট-বাজারে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কামার কারিগররা সারা বছরের তুলনায় বর্তমানে রাতদিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এখানকার কামারদের নিপুন হাতে তৈরি বটি, ছুরি, কাটারি, দা, বেকি, কুঠার, খুন্তা ও লাঙ্গলের ফলাসহ বিভিন্ন ধরণের যাবতীয় প্রয়োজনীয় লৌহজাত দ্রব্য তৈরি করেন।

    আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কার্তিক কর্মকার ও সূর্য কর্মকার জানান, লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা আমার পেশা, বাপ-দাদার পৈতিক সূত্রে আমি এই পেশায় জরিত। একটি মাঝাড়ি ধরণের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ২শ’ ৫০টাকা থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। সাড়া দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে কয়টি জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে খুব বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেচে থাকার স্বার্থে আদি এই পেশা আমি ধরে রেখেছি। তবে সাড়া বছর কাজ-কর্মের ব্যস্ততা তেমন না থাকলেও কুরবানী ঈদকে সামনে রেখে আমার কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। সাড়া বছর এই রকম কাজ থাকলে ভালই হত।

    শ্রীঃ বিশ্বনাথ কর্মকার জানান, এবছরে বেশ কাজ পেয়েছি। কাজ বেড়ে যাওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে। আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তাদের ওই সূত্রে ধরে আমার জীবনেরও শেষ মূহুর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি।

    এ বিষয়ে নাগরিক উদ্যোগের শাহাগোলা ইউনিয়নের দলিত মানবাধিকার কর্মী শ্রী দিনেশ কুমার পাল বলেন, কামার শিল্পকে আরো আধুনিক করতে এর বাজার সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরি। সরকারি ভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে আমাদের আত্রাইয়ের কামাদেরকে সুদ মুক্ত ঋন দিলে পাইকারি মূল্যে উপকরণ কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুড়ে দাঁড়াবে।