ইয়েমেন এর সাথে সৌদির যুদ্ধ ঘুরে যেতে পারে !

    0
    231

    ইয়েমেনের পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদির অনুগত যোদ্ধারা জনপ্রিয় আনসারুল্লা বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে পরাজিত হওয়ার পর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি রাজধানী সানা থেকে পলায়ন করেন। এরপর আনসারুল্লাহ ও তাদের সহযোগী যোদ্ধারা রাজধানী সানার পুরো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। এরপর সৌদি আরব ইয়েমেন বিরোধী সামরিক জোট গঠন করে এবং ব্যাপক হামলা চালিয়ে আনসারুল্লাহর কাছ থেকে রাজধানী সানা দখল করে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু চার বছরে সৌদি আরব তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি বরং ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ যোদ্ধারা আগের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে।

    আনসারুল্লাহর হাতে রাজধানী সানার পতন ঘটার পর এডেন হচ্ছে ইয়েমেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর যা কিনা সৌদিপন্থি মানসুর হাদির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাত সম্মিলিতভাবে গত চার বছর ধরে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে এলেও এডেন নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তারা কখনোই ঐক্যবদ্ধ ছিল না। বরং সৌদি আরবের মোকাবেলায় দক্ষিণ ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য আমিরাত সরকার পৃথক অন্তর্বর্তী পরিষদ গঠন করে এবং নিজস্ব অনুগত মিলিশিয়া বাহিনীকে শক্তিশালী করে। সর্বশেষ তুমুল লড়াইয়ে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আমিরাতের অনুগত বাহিনী সৌদিপন্থি মিলিশিয়া বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় এবং এডেনের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।

    এ ঘটনা নিঃসন্দেহে সৌদি আরবের জন্য অনেক বড় পরাজয়। এ ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় সৌদিপন্থি পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদির তথ্যমন্ত্রী মোয়াম্মার আল রিয়ানি বলেছেন, এডেনের পতন সৌদি আরবেরই পরাজয়। তিনি আরো বলেছেন, এ ব্যাপারে হাদি সরকার কোনো ছাড় দেবে না এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে ব্যবহার করবে।

    যাইহোক, এডেন শহরের কেন পতন ঘটল এবং কেন এটাকে সৌদি আরবের জন্য বিরাট পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। ধারণা করা হচ্ছে, এডেনের পতনের বড় কারণ হচ্ছে পদত্যাগী মানসুর হাদি সরকারের অনুগতরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যও আবুধাবি ও রিয়াদের মধ্যকার বিরোধের অন্যতম কারণ। যার পরিণতিতে তাদের মধ্যকার জোট দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং একপক্ষ অন্য পক্ষকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এ অবস্থায় সৌদিপন্থিরা কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছে এবং তাদের মধ্যে কোনো আশা বা প্রেরণা কাজ করছে না। অন্যদিকে দক্ষিণ ইয়েমেনে আমিরাতপন্থী অন্তর্বর্তী পরিষদের প্রধান এইদ্রুস আয যাবিদির অনুগতরা বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল।

    এডেনের পতনের তৃতীয় কারণ হচ্ছে, ইয়েমেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় এবং ইয়েমেনের জনগণের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় মানসুর হাদির অনুগত অনেক যোদ্ধা ও কমান্ডাররা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক ছিল না। এমনকি মানসুর হাদির অনুগত অনেকেই আমিরাতপন্থী অন্তর্বর্তী পরিষদে যোগ দিয়েছে।

    এসব কারণে এডেনের পতন ঘটেছে। এ অবস্থায় ইয়েমেনের ব্যাপারে সৌদি আরবের নীতি কেমন হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এমনকি ইয়েমেন যুদ্ধের মোড় ঘুরে যেতে পারে বলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।পার্সটুডে