ইসলাম সহজ কিন্তু সস্তা নাঃবিষয় গাজওয়াতুল হিন্দ

    0
    510

    মাহদী গালিবঃ হিন্দ আরবি শব্দ। মানে- ভারত উপমহাদেশ। পাকিস্তান থেকে বাংলা অবধি। গাজওয়া মানে যুদ্ধ। গাজওয়ায়ে হিন্দ- ভারতের যুদ্ধ। অর্থ যুদ্ধ হলেও গাজওয়ার আলাদা টার্ম, পরিভাষা আছে। মদিনা-মুনিব (দ) চোখের আড়াল হবার আগে যুদ্ধ হয় ২৯ টি। উপস্থিত ছিলেন ২৩ টিতে। এই তেইশটিকে বলে গাজওয়া। বাকিগুলো সারিয়া।

    তাহলে, রাসুল-অতুল (দ) সশরীরে না থাকলে গাজওয়া হয় না ! অবশ্য, এখানে বিতর্ক আছে। গাজওয়া-সারিয়ার পার্থক্য করেছেন ইতিহাসবেত্তাগণ, মুসলিমদের পুরোধাগণ। সরাসরি কোর’আন-হাদিসে আসেনি। তাই উপস্থিত না থাকলেও গাজওয়া হবে বলেছেন অনেকে। হয়ত, মালিক-রাজসিক (দ) এঁর নায়েব বা প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলে গাজওয়া হতে পারে। কিন্তু কে এই প্রতিনিধি ? যে পুরোধাগণ পার্থক্য করেছেন, কেন করেছেন ? যুক্তির বলিষ্ঠতা কী নেই ? আল্লাহু ওয়া রসূলুহু আ’লাম।

    মুসলিমরা কতবার ভারত আক্রমণ করেছে ? অসংখ্যবার। সুলতান মাহমুদ গাজনবি-ই তো ১৭ বার। প্রথম আক্রমণ হয় ৬৪৩ সালে। হযরত ওমর (রা) এঁর সময়। হামলাটি ছিল নৌপথে। খাতায় কলমে প্রথম বিজয়ী মুহাম্মাদ বিন কাশেম। ৭১০ সালে। এরপর কতবার, কতজন আক্রমণ করেছেন, কী জানি !

    যাহোক, প্রতিটি যুদ্ধই কি গাজওয়ায়ে হিন্দ ?

    মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২২৩৯৬। মদিনা-মুনিব (দ) বলেন : “আমার উম্মতের দুটি দল জান্নাতী। এক, যারা হিন্দে গাজওয়া করবে। দুই, যারা ঈসা আলাইহিস সালামের সঙ্গী হবে”।

    হাদিসটির দুটি অংশ এবং বিচ্ছিন্ন নয়। মেলবন্ধন আছে। আরেকটি হাদিস দেখি। গ্রন্থের নাম- আল ফিতান (১১৮২)। মান দূর্বল। লেখক- নুয়াইম বিন হাম্মাদ। মদিনা-মুনিব (দ) বলেন : আমার উম্মতের একটি দল হিন্দে লড়বে। বিজয়ী হবে। হিন্দের রাজাদের শিকল পড়াবে। আল্লাহ্ তাদের ক্ষমা করবেন। অতঃপর তারা শামে ফিরবে। এবং ঈসা বিন মরিয়মের দেখা পাবে।

    কী প্রমাণিত হয় ? সব যুদ্ধই গাজওয়ায়ে হিন্দ না। একটু খেয়াল করুন। ঈসা আলাইহিস সালাম নিচে নামবেন। এখন তৃতীয় আসমানে আছে। তাঁর দেখা পাবে বিজয়ী বাহিনী শামে। শাম মানে সিরিয়া। বা আশপাশের আরো কিছু অঞ্চল। এখানে দুটো বিষয় স্পষ্ট। এক, ঈসা আলাইহিস সালামের আবির্ভাব হবে। যা এখনো হয়নি। সে সময়কার ভারত আক্রমণ হবে গাজওয়ায়ে হিন্দ। দুই, বলা হয়েছে- শামে ফিরবে। শামের দিকে যাবে বলা হয়নি। তাহলে সেই বাহিনী শাম থেকেই এদিকে আসবে। কিন্তু এই বাহিনী কারা ?

    গ্রন্থ- নুয়াইম বিন হাম্মাদের আল ফিতান (১২১৪)। মান দুর্বল। হাকাম বিন নাফে হযরত কাবে আহবার, তাবেয়ি ছিলেন। সাহাবাদের পরের প্রজন্মকে তাবেয়ি বলে। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ছিলেন ইহুদী পন্ডিত। তিনি বলেন : জেরুজালেমের একজন অধিপতি হিন্দে অভিযাত্রী পাঠাবেন। তারা হিন্দুস্তান বিজয় করবেন এবং ঘুরে বেড়াবেন। সেখানকার গুপ্তধন গ্রহণ করবেন। যা সেই অধিপতি বাইতুল মাকদিসের সৌন্দর্যবর্ধনে লাগাবেন। অতঃপর সে বাহিনী হিন্দের রাজাদের বেড়ি পরিয়ে নিয়ে আসবেন এবং পূর্ব-পশ্চিম পুরো দুনিয়া তাদের পদানত হবে। তারা দাজ্জালের আগমন পর্যন্ত হিন্দে অবস্থান করবেন।

    মোট তিনটি হাদিস পেলাম। কয়েকটা পয়েন্ট করি। এক, দুটি দল জান্নাতি। দুই, প্রমাণিত হল দুটি দল মূলত একই দল। তিন, ঘটনাটি হবে দাজ্জালের আবির্ভাবের সময়কার। চার, সে সময় ঈসা আলাইহিস সালাম-ও আসবেন। এখন সবচে জরুরী পয়েন্ট। এই সে একটি দল আসবে, তাদের পাঠাবেন এক অধিপতি বা রাজা। যিনি কিনা জেরুজালেমের রাজা হবেন।

    কয়েকটি প্রশ্ন করি। দাজ্জাল এসেছে ? ঈসা আলাইহিস সালামের আগমনের বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে ? সে অধপতি, যিনি জেরুজালেমের দখল নিবেন- তিনি কী এখনো আছেন ?

    দাজ্জালের আসাটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ধাপে ধাপে ময়দান প্রস্তুত হবে। যা কিনা জায়োনিস্ট-ইজরাইলিরা করছে। সভ্যতা এখন ফ্রিম্যাসনের দখলে। ক্রমে ক্রমে এগোচ্ছে দাজ্জালের আগমনের দিকে। কিন্তু এত দ্রুত না হয়ত। একটু সময় লাগবেই।

    দাজ্জাল না আসলে ঈসা আলাইহিস সালাম আসবেন না। দাজ্জালের পরে ঈসা আলাইহিস সালাম আসবেন।

    আর সেই অধিপতি এখনো আসেন নি। অনুমান করা হয়- জেরুজালেম তিনবার মুসলমানের অধীনে থাকবে। ইতোমধ্যে দু’বার হয়েছে। এক, হযরত ওমর রা. এঁর সময়। দুই, সালাউদ্দিন আইয়ুবি এঁর সময়। তৃতীয়বার এখনো হয় নি। সেই অধিপতি এখনো আসেন নি।

    বলছি না আমি একমাত্র সঠিক। কিন্তু যা তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, তা আমার অনুমানের দিকেই ইঙ্গিত করে। তাই বলা যায়, গাজওয়ায়ে হিন্দের সময় এখনো হয় নি। এখনো অনেকটা পথ।

    অনেকেই এখন শাহ নেয়ামতুল্লাহ র. এঁর কাসিদার কথা বলবেন। সেখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সে তর্কে যাব না। শুধু বলব- ভবিষ্যদ্বাণী খুব আপেক্ষিক। সুনির্দিষ্ট নয়। যেভাবে চাইবেন ব্যবহার করা যায়। কেউ নিজ স্বার্থ হাসিলে এসব ব্যবহার করছে কিনা- এটা কিন্তু ভাবার বিষয়।

    কয়েকটা কথায় শেষ করছি। ইনবক্সে একভাই জানালেন- আমাদের প্রস্তুত হতে হবে, অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিতে হবে, গাজওয়ায়ে হিন্দ চলে এসছে ইত্যাদি। আমি চুপ ছিলাম। আরো কয়েকজন ইনবক্সে ম্যাসেজ দিল। তখন নড়েচড়ে বসতে হল। জনমানুষের আবেগ নিয়ে কেউ খেলছে। তা স্পষ্ট বুঝলাম। কে খেলছে, বা কারা খেলছে, তা সহজ অনুমেয়।

    আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা। জঙ্গি সম্প্রদায় প্রায় সবাই বা পুরোটাই ওহাবিতন্ত্রের আহলে হাদিস, সালাফিবাদে বিশ্বাসী। এরা কিন্তু মদিনা-মুনিব (দ) এঁর এলমে গায়েব মানে না। এলমে গায়েব মানে অদৃশ্যজ্ঞান। এটা বিশাল অধ্যায়। ভবিষ্যদ্বাণী এলমে গায়েবের মধ্যেই পড়ে।

    এখন নিজেকে প্রশ্ন করুন- যারা এলমে গায়েব মানে না, তারাই এলমে গায়বের কথা বলে আপনাকে প্রভাবিত করছে। মানসিকতা উগ্র বানাচ্ছে। এই যে একমুখে দুই কথা, এটা কি হিপোক্রেসি না? ভণ্ডামি না? শুধু কী পীর বেসেই ভণ্ড হয়? সহিহ সহিহ মুখে এসব ভণ্ডামি কেন! এরা নবীর এলমে গায়েব মানে না। কিন্তু এলহামে আউলিয়া, বা অলি-আল্লাহদের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা আপনাকে বলে। আজব না!

    উপরের তিনটি হাদিস ছিল। তার দুটির মান দূর্বল। দূর্বল মানেই বাতিল না কিন্তু। প্রথমটি সহিহ বা হাসান। হাসান মানে মধ্যম। কিন্তু সেটি স্পষ্ট নয়। বাকিদুটো হাদিস প্রথম হাদিসকে স্পষ্ট করেছে। তাহ্লে ভাবুন তো- সহিহ সহিহ বলে মুখে ফেনা তোলে, আবার এরাই জয়িফ বা দুর্বল হাদিসের দলীল দেয়? বলে যুদ্ধে নামো! মুসলিম মরছে! এটা কী ভণ্ডামির চূড়ান্ত না?

    যে মুসলিমদের তারা বাঁচাতে বলে- এরা সবাই মাযহাবি, সুন্নি। অথচ তাদের গুরুঠাকুরেরা বলে- মাযহাবিরা তওবা না করলে কতল করো, মেরে ফেল। এরা কাশ্মিরে গাজওয়াতুল হিন্দ দেখায়। কিন্তু ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ায় না। বাড়ির পাশে ইজরাইল- আক্রমণ করে না। ইয়ামেনে, সিরিয়ায়, আফ্রিকায় লাখে লাখে মানুষ মারে। এ কেমন দ্বিমুখিতা?

    এরা খেলছে। নরম মনের আবেগ নিয়ে খেলছে। সাবধান হোন। না হলে নিজে ডুববেন, সাথে ডুববে আপনার প্রজন্ম। চিলে কান নিয়েছে শুনেই দৌড়াবেন না। আগে কান দেখুন।

    বলছি না জিহাদ করবেন না। অবশ্যই করবেন। অস্ত্রের ঝনঝনানি, বোম ফাটানোই জিহাদ না। গত কয়েক শতাব্দীতে আমরা করেছিটা কী বলুন তো? আধুনিক সব আবিষ্কার পশ্চিমাদের। সভ্যতা এখন ফ্রিম্যাসনদের। তারা বোতাম টিপে, ড্রোন চালিয়ে আপনাকে গায়েব করে দিবে। আর আপনি সত্তুর হুরের স্বপ্নে ভাসছেন। বদ্ধপাগলের আচরণও আপনার থেকে ভালো।

    নিজেকে প্রস্তুত করুন। প্রজন্মকে শিক্ষিত করুন। ছড়িয়ে যান সভ্যতার রন্ধে রন্ধে। আমাদের প্রথম জিহাদ উম্মাহকে শিক্ষিত করা। অর্থের মুক্তি আনা। তথ্য-প্রযুক্তিতে সবার সেরা হওয়া। মেধায় সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া। সভ্যতার নিয়ন্ত্রণ নেয়া। রাস্ট্রকে বাধ্য করা মানুষ ও মুসলিমদের ওপর অত্যাচার বন্ধে উদ্যোগী হতে।

    আমাদের বিপ্লব মানবিক। আমরা সুন্নি, আমরা সুফি- আমরা ধ্বংসে না নির্মাণে বিশ্বাসী। মুসলিমদের আগে মানুষ ভাবতে শিখুন। যখন আগে ভাববেন- মানুষ মারছে, পরে ভাববেন- মুসলিম মারছে; তখনি আমাদের উত্থানের শুরু। সাইকোলজিকাল পরিবর্তন ওয়াজিব।

    যখন চারুকলা, শিল্পকলায় গেলে মুসলিম শুনলে কেউ ভ্রু কুচকাবে না, যখন বাংলা একাডেমিতে সুফিয়ানা সাহিত্য রচিত হবে, বইমেলায় সুন্নি-সুফিদের বই ছড়াছড়ি করবে- তখনি আমাদের বিজয়ের শুরু কেবল।

    রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী- ভোরে অপেক্ষায় থাকিয়েন না। প্রদীপ জ্বালাতে শিখুন। নিজেকে আলোকিত করুন। ইসলাম সত্তুর হুরে আটকে নেই। ইসলাম সহজ কিন্তু সস্তা না।