ইত্তেফাকে’র আর্টিকেলের জবাব,যেভাবে এলো পবিত্র শবেবরাত

    0
    288

    “শবেবরাতকে বিদআত বলে চালিয়ে দিয়ে নিজের জ্ঞানের দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন ইত্তিফাকের কথিত কলাম লেখক আলদীন” 

    ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী, লুন্দ বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন: দেশের বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে ২০ এপ্রিল ২০১৯ “যেভাবে এলো পবিত্র শবেবরাত” নামে একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। শবেবরাতের মতো একটি প্রতিষ্ঠিত মহিমান্বিত রাত্রিকে লেখক (আনোয়ার আলদীন) প্রশ্নবিদ্য করেছেন। হিজরী ৪০০ বছর পর এর উৎপত্তি এবং শিয়া ইমাম মাহদীর জন্মদিন হিসেবে শিয়ারা এ দিনটি উদ্ভাবন করে উল্লেখ করে তিনি আসলে সত্য আড়াল করেছেন এবং মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢেকে দিতে ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। এ দিনটি মহিমান্বিত তবে এ উপলক্ষে অনৈসলামিক কার্যকলাপ বর্জনীয়। কুরআনের একটি আয়াত এবং অসংখ্য হাদিসে শা’বানের মধ্য রাত্রির (লাইলাতুন নিসফী মিন শা’বান) গুরুত্ব, এ রাতের এবাদত এবং পরবর্তী দিনের রোজার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ রাত্রি মূলত আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে শবেবরাত হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। শবেবরাত ফার্সি শব্দ যার অর্থ ভাগ্য রজনী। কেননা, আমাদের এ উপমহাদেশ দীর্ঘ প্রায় সাতশ বছর ধরে বিভিন্ন মুসলিম শাসক কর্তৃক শাসিত হয়েছিল যাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা ছিল ফার্সি।

    উল্লেখ্য, এ মহিমান্বিত রজনী এবং পরবর্তী দিনের যে গুরুত্ব তা মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি দেশেই উদযাপিত হয়ে আসছে সেই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লামের যুগ থেকেই। বর্তমান সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় ভাবে এ দিবসটি উদযাপিত না হলেও প্রতিটি মসজিদে এ রাতের মহিমা বর্ণনা করে বয়ান হয়। লেখক এই রাত্রির উৎসবকে কেবলমাত্র ভারত তথা বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতের নবআবিষ্কৃত একটি বিদআত বলে চালিয়ে দিয়ে নিজের জ্ঞানের দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। পরিশেষে তিনি এর সূচনার ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে একে শিয়াদের ইমামের জন্মদিন বলে আখ্যায়িত করে পুরো মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।

    আমি এই নাতিদীর্ঘ লেখায় উক্ত লেখকের মিথ্যাচার উদ্ঘাটন এবং এর পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদিসের দলীল উপস্থাপন করার প্রয়াস পাবো ইন-শা-আল্লাহ্‌।

    মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের সূরা দুখানের শুরুতে ঘোষণা করেনঃ
    “শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিলের ফায়সালা করেছি। আমিই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়।” (সূরা দুখানঃ ২-৪)

    স্বনামধন্য মুফাসসিরীনে কেরামগণ “লাইলাতাম মুবারাকা” বলতে শাবানের মধ্য রাত্রি অর্থাৎ শবে বারাত বা লাইলাতুল বারাতকে চিহ্নিত করেছেন। পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ শুরু হয়েছে পবিত্র মহিমান্বিত ক্বদরের রজনীতে যা নিয়ে পরিষ্কার আয়াত রয়েছে সূরা ক্বদরে এবং কুরআনের আরও কিছু স্থানে। এই নিয়ে কারো কোন সংশয় নেই। কিন্তু সূরা দুখানের “লাইলাতাম মুবারাকা” বলতে ক্বদরের রাতকে বুঝানো হয়নি বলে মত দিয়েছেন বিখ্যাত অনেক মুফাসসিরীনে কেরাম। মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন, “মহান আল্লাহ পাক লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে শা’বান মাসের মধ্য রাতকে বুঝিয়েছেন (যা আমাদের কাছে শবে বরাত হিসেবে পরিচিত)। আল্লাহ পাক এ রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলোর ফায়সালা করে থাকেন।”
    (দ্রষ্টব্যঃ ছফওয়াতুত তাফাসীর, তাফসীরে খাযীন, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, রুহুল বয়ান, আবী সাউদ, বাইযাবী, দূররে মানছূর, জালালাইন, কামলালাইন, তাবারী, লুবাব, নাযমুদ দুরার, মাদারিক)

    আল্লাহ পাক এমন এক বরকতময় রজনীতে কোরআন নাজিলের উদ্যোগ নিয়েছেন যে রজনীতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা করা হয়। সহীহ হাদিসের আলোকে সেই রজনী শাবানের মধ্য রজনী, যে রজনীতে প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা করা হয়। এ কারণে রমজান মাস ব্যতীত একমাত্র শাবান মাসই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লামের কাছে অত্যধিক প্রিয় মাস ছিল। রমজান ব্যতীত এ মাসেই তিনি অধিক রোযা পালন করতেন এবং নফল আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। এ মাসে আমরা যেন আমাদের আমল ও বাড়িয়ে দেই সে ব্যাপারে তিনি পরামর্শও দিয়েছেন। সহীহ বুখারি এবং সহীহ মুসলিমের বেশ কিছু হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনাকারীর মাধ্যমে একথা আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন রাবির শব্দে কিছু তারতম্য রয়েছে কিন্তু বিষয়বস্তু একই।

    “আয়িশা (রাদ্বিঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম শাবান মাস ব্যাতীত বছরের অন্য কোন মাসে এত অধিক সাওম (রোযা) পালন করতেন না। তিনি বলতেনঃ তোমরা যথাসাধ্য অধিক পরিমাণে ভাল কাজ কর। কারণ আল্লাহ তা’আলা সওয়াব দিতে কখনও ক্লান্ত হন না বরং তোমরাই আমল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়। তিনি আরও বলতেনঃ বান্দা যে কাজ নিরবিচ্ছিন্নভাবে করতে পারে, তাই আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়- তার পরিমাণ কম হলেও।” (সহীহ বুখারিঃ ১৮৪৬ ই ফা, সহীহ মুসলিমঃ ২৫৯০)

    শা’বানের মধ্য রাত্রি বা শবেবরাত নিয়ে যারা আপত্তি করে থাকেন তারা প্রশ্ন তুলবেন এখানে তো শাবান মাসের কথা বলা হয়েছে, বিশেষ কোন দিনের বা রাতের কথা বলা হয়নি। তাদের প্রশ্নের জবাব আসছে নিচের হাদিসে। শাবানের মধ্য দিনের রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম বলেন, কেউ যদি এ দিনের রোজা না রেখে থাকে সে যেন রমজানের পরে একটির বিনিময়ে দুইটি রোজা রাখে। এতেই এই দিনের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। দেখুন হাদিসটিঃ

    “ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি শাবান মাসের মধ্যভাগে সাওম (রোযা) পালন করেছিলে? তিনি বললেন, না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যখন-তুমি সাওম (রোযা) পালন করনি, তখন পরে দুই দিন সাওম পালন করে নিও।” (সহীহ বুখারিঃ ১৯৮৩/ ১৮৬০- ই ফা, সহীহ মুসলিমঃ ২৬১৭, ২৬১৮ ও ২৬১৯)

    এব্যাপারে আরও কিছু হাদিস রয়েছে উপরোক্ত হাদিসের আগে ও পরে। যাদের কাছে উক্ত কিতাবগুলো রয়েছে তারা পড়ে নিতে পারেন। এ পর্যায়ে এসে শবে বারাতকে বিদআত আখ্যাকারীগণ বলবেন, এটা তো রোজা রাখার ব্যাপারে, কোন রাতকে মর্যাদা দেবার ব্যাপারে নয়। তাদের জন্য নিচের হাদিস দু’টি গুরুত্বপূর্ণ।

    “উসামা বিন যায়দ (রাদ্বিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমান রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন: রজব এবং রামাযানে মধ্যবর্তী এ মাসটি সম্পর্কে মানুষ উদাসিন থাকে। অথচ এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে, এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি চাই রোযা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।”
    (মুসনাদ আহমাদ ৫ম খন্ড। সুনান নাসাঈ, কিতাবুস সিয়াম। আলবানী সাহেব এ সনদটিকে হাসান বলে মত দিয়েছেন। দ্র: সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ্‌। হাদীস নং ১৮৯৮)

    অনুরূপ একটি হাদিস এসেছে আম্মাজান আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম) শাবান মাসে রোজা রাখতেন। আমি আরজ করলামঃ হে আল্লাহর রাসুল! সকল মাসের মধ্যে কি আপনার নিকট শাবানে রোজা রাখা অধিক পছন্দনীয়? তখন তিনি ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’লা এ বৎসরে মৃত্যুবরণকারী প্রতিটি আত্মার নাম এ মাসে লিখে দেন। আর আমি এটা পছন্দ করি যে, আমার বিদায়ের সময় (যখন) আসবে তখন যেন আমি রোজা অবস্থায় থাকি।
    (মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নং ৪৮৯০, দারুল কুতুব বৈরুত। হাদিসের মান সহীহ)

    উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা প্রমাণ হয় যে শাবান মাসে আমাদের আমল আল্লাহর কাছে পৌঁছে আর কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী অনেক প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়। কাজেই যে রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়ে থাকে সে রাত্রি ক্বদরের রজনী নয়। বরং সে রাত্রিটি হল শাবানের কোন এক রাত্রি। আর শাবানের মধ্যরাত্রি নিয়ে অন্যান্য হাদিস গ্রন্থের হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সে রাত্রিটি হল শাবানার মধ্য রাত্রি বা শবে বারাত। যা ১৪ শাবানের দিবাগত রাত।

    আর শাবানের শেষ অংশে রোজা রাখার ব্যাপারে রাসুল ﷺ নিরুৎসাহিত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা:) হতে বণির্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘শাবান মাস অধের্ক হয় গেলে তোমরা রোযা রেখো না (মুসনাদ আহমাদ (২/৪৪২)

    নিচের হাদিসটি আহলে হাদিস, জামাতে ইসলামী, সৌদি নজদিপন্থী ওলামাগণের সবার মুখে ছাই নিক্ষেপ করে দিয়েছে যারা বলে শবে বারাত বলে কুরআন ও হাদিসে কিছু নেই এবং শবে বারাত বিদআত !

    “হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম] ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (পৃথিবীর) দিকে তাকিয়ে দেখে মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।” (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪)

    শবেবরাত নিয়ে সর্বশেষ হাদিসটি এ রাতের বিরোধিতাকারীদের মুখে চুনকালি নিক্ষেপ করবে। হাদিসটি হলোঃ

    হযরত আয়শা রাঃ বলেন-এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনার কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন-কি ব্যাপার আয়শা? তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? হযরত আয়শা রাঃ বললেন- আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন-যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত আসে [অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়] তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। {সুনানে তিরমিযী ই. ফা. হাদীস নং-৭৩৭, মুসনাদে আহমাদ: হাদীস নং-২৬০২৮; ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮, ১৩৮৯ ও ১৩৯০; মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ: হাদীস নং-১৫০৯}। উল্লেখ্য সিহাহ সিত্তার অন্যতম গ্রন্থ ইবনে মাজায় শাবানের মধ্য রাত্রির অধ্যায়ে তিনটি হাদিসেই এ রাতের মহিমা বর্ণনা করা হয়।

    অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, শবেবরাত বা মধ্য শা’বানের রাতে এবাদত করা এবং দিনের বেলা রোযা রাখা শিয়াদের আবিষ্কৃত কোনও উৎসব নয়, এটি বিদআতও নয়, বরং তা স্বয়ং আল্লাহ্‌ পাক কর্তৃক তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিশেষ মহিমান্বিত রজনী। আর এ দিবস উপলক্ষে হালুয়া-রুটি বা ভালো খাবার দাবারে সমস্যা কোথায়? হালুয়া মিষ্টির আরবি শব্দ যা রাসূল স্বয়ং অত্যধিক পছন্দ করতেন। এমন মহিমান্বিত রজনীতে বা দিনে কেউ অন্য কাউকে ভালো খাবার পরিবেশন করলে ইসলামী শরিয়ার বিপরীত কোনও আমল হয় না। কাজেই এতে দোষের কিছু নেই। তবে আতশবাজি, পটকা ফোটানো সহ যেসব কাজ কুরআন ও সুন্নাহর বিরুদ্ধে যায় তা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

    বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থ এবং বিখ্যাত ইসলামের ইতিহাসের পুস্তকে প্রায় একশ সাহাবী কর্তৃক প্রমাণাদি সহ এ রাতের আমল লিপিবদ্ধ রয়েছে। কাজেই এ রাতের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ মুসলমানকে বিভ্রান্ত করা কোনও মু’মিন মুসলমানের কাজ হতে পারে না। ইত্তেফাক পত্রিকার মতো এমন একটি জনপ্রিয় এবং দেশের প্রধান সারির পত্রিকায় এমন বিতর্কিত এবং মিথ্যা সম্বলিত লেখা প্রকাশিত হওয়ায় দেশের আপামর সাধারণ মুসলমান নিশ্চিত দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পতিত হবেন। এ ভুল সংশোধন করা প্রতি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহ্‌ পাক আমাদেরকে এমন মহিমান্বিত রজনীতে তাঁর এবাদত করার তৌফিক দান করুন এবং তাঁর ঘোষিত ক্ষমার অধিকারী করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন। লেখকঃ ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট ।