আল্লাহ সে দোয়া কবুল করেনঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 

    0
    204

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের মহামারী থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে ঘরে বসে বেশি বেশি নামাজ ও দেয়া পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঘরে বসে দোয়া করলে আল্লাহ সে দোয়া কবুল করেন। এ সময় তিনি কর্মজীবীদের ঘরে বসে পরিবারকে সময় দেয়ার পরামর্শ দেন।

    গতকাল এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানান। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আগামী বাজেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির ঘোষণার পাশাপাশি কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

    নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও দলীয় লোকজনের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, মানুষকে সহায়তায় যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করার চেষ্টা করবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাদের বিচার করা হবে।

    গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১৬ জেলার স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সশস্র বাহিনীর সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের লক্ষ্যে এই ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষতি মোকাবেলায় বেশ কিছু প্রণোদনা দিয়েছি। শিল্প-কৃষি সব ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনার কারণে অনেক উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় কথা মানুষ বাঁচানো। মানুষের জীবনযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া।

    করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বব্যাপী মারাত্মক খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি নিজেরা উৎপাদন ঠিক রাখি তাহলে এই সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারব। এজন্য আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে, যাতে আমার দেশের মানুষ কষ্ট না পায়। পাশাপাশি আমরা অনেক দেশকে সহযোগিতা করতে পারি। রফতানি করতে পারি সেই বিষয়টা মাথায় রেখেই আপনারা উৎপাদন বাড়াবেন। তিনি আরো বলেন, কারও এতোটুকু জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আপনারা বাড়ির পাশে এবং ছাদে টবের মধ্যেও গাছ লাগান। যেটাই উৎপাদন করবেন সেটাই কাজে লাগবে।

    ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হবে উল্লেখ করে বলেন, কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার নতুন একটি পুন: অর্থায়ন স্কিম গঠন করবে। এখান থেকে শুধু কৃষি খাতে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ দেয়া হবে। যার সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৫ শতাংশ। এই তহবিল থেকে গ্রামাঞ্চলে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি তাদের জন্য ঋণ দেয়া হবে। কৃষি, ফুল, ফল, মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম ইত্যাদি সকল কর্মকান্ডে এখান থেকে সহায়তা পাবেন।

    তিনি আরো বলেন, কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ রেখেই ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করছি। কৃষি মানে গ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি। কারণ, আমাদের দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর থেকে শুরু করে কামার-কুমার তাঁতি জেলে সবার জন্য সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত। পাশাপাশি সারের ভর্তুকি হিসেবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হবে। যাতে কৃষকের উৎপাদন ব্যাহত না হয়।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে শিল্প খাতের জন্য ৭২ হাজার কোটি টাকার বেশি কয়েকটি প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে বোরো ফসল উঠবে। কৃষক যেন সঠিক মূল্য পায় বিষয়টি লক্ষ রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় এবছর বেশি ধান চাল ক্রয় করবে। তিনি বলেন, ধান কাটা ও মাড়াই যান্ত্রিকীকরণের জন্য ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।

    এছাড়া বীজ, চারা রোপণের জন্য আরো ‘দেড়শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। কেউ পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলা জাতীয় কিছু উৎপাদন করলে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার আরেকটি উদ্যোগ বর্তমানে চলমান রয়েছে। আগেই চালু এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। তবে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যত কমানো যায়, সেটিই ভালো। ফসল তরি-তরকারি, ফলমুল নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ, এগুলো বিক্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য তার সরকার কর্তৃক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

    পণ্য বাজারজাত করার সময়ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়ে বলেন, হাট-বাজার একেবারে বন্ধ না রেখে বড় একটি মাঠে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সপ্তাহে একদিন হলেও এগুলো বিক্রীর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সেখান থেকে মানুষ পণ্য কিনে নেবে, কিন্তু অনেক মানুষের ভড়ি যেন না হয় সেদিকে সকলে লক্ষ রাখবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা মিলিতভাবে এবং পরিকল্পনা করে যদি এ ধরনের উদ্যোগ নেন তাহলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হবে না। তিনি এ সময় দুধের মূল্য নিশ্চিত করতে এটি রিলিফে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণে এবং দুগ্ধজাত সামগ্রী প্রস্তুত করে এই দুধকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণেও আহ্বান জানান।

    ভিডিও কনফারেন্সে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত মসজিদের এক ইমাম জানান, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী জুমার নামাজ দশজনে পড়েছেন এবং ওয়াক্তের নামাজে পাঁচজনের বেশি মুসুল্লি উপস্থিতি রাখছেন না। এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে সবাইকে দোয়া করতে হবে। যেন এ করোনাভাইরাস থেকে আমরা রক্ষা পাই। আপনারা জানেন, সউদী আরবে মক্কা এবং মদিনাতেও কারফিউ দিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘরে বসে দোয়া করলে আল্লাহ সে দোয়া কবুল করবেন। কাজেই, ঘরে বসে যত বেশি দোয়া পড়া যায়। আর এখন তো কাজ নেই বেশি। কাজেই, বেশি বেশি করে দোয়া করতে হবে। যাতে আল্লাহ আমাদের এ বিপদ থেকে রক্ষা করেন।

    শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে দেশবাসীকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, এটি সংক্রামক। কখন সংক্রামিত হবে তা বোঝা খুব কষ্টকর। এটাই হচ্ছে এ ভাইরাস নিয়ে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।

    নববর্ষের দিন ঘরে অবস্থান করে এবং বাইরে কোনো জনসমাগম না করে পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ আসে, সেই দুর্যোগ সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হয়। যে নির্দেশগুলো আমরা দিয়েছি বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া হচ্ছে বা প্রতিনিয়ত রেডিও, টিভি, গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে দয়া করে সেগুলো একটু মেনে চলুন। এটা মেনে চললে নিজে যেমন ভালো থাকবেন তেমনি অন্যকেও আপনি সুরক্ষিত করবেন। নিজের জন্য নিজের ওপরে যেমন আপনার দায়িত্ব আছে তেমনি অন্যের ওপরেও রয়েছে। সে কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।

    আর যারা হাত পাততে পারেন না তাঁদের সকলের ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেয়ার কথা পুণর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজ না থাকায় অনেকে কাজ করতে পারছেন না আবার রিলিফও চাইতে পারছেন না, এরকম বহু পরিবার রয়েছে। তাঁদেরকে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা আমরা ইতোমধ্যে নিয়েছি। সেটা সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করতে হবে।

    তাছাড়া, ১০ টাকা কিলোয় চাল বিক্রী, ওএমএস-এর চালেরও দাম কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কাজেই, আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব নেই বরং যথেষ্ট খাদ্যসামগ্রী রয়ে গেছে সেটা আমরা প্রয়োজনে দিতে পারব। তিনি ত্রাণ সরবরাহে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে এ ধরনের ঘটনার তাৎক্ষণিক শাস্তি বিধান করা হবে। কারণ, এই ধরনের দুর্নীতি আমরা কখনোই বরদাশত করব না।

    শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারাদেশে এ ভাইরাস মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছি। এ ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য সব কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছি। সবাই ঘরে থাকুন। বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। জানি, মানুষের কষ্ট হবে কিন্তু আমরা করণীয় করে যাচ্ছি। এজন্য আমরা ২৩টি নির্দেশনা তৈরি করেছি। সর্দি-কাশি হলে প্রচুর গরম পানি খান। হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন খোলা হয়েছে। করোনা রোগীর জন্য হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড করে দিয়েছি। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের সংবাদমাধ্যম অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতামূলক জিনিস প্রচার করছে। তিনি বলেন, আগামী ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস। যেটুকু সীমিত আকারে ঘরে বসে পালন করা যায়, সেটুকু করবেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে এ সময় সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ এবং বাংলাদেশে যেন কেউ ঢুকতে না পারে এবং কেউ ঢুকলে তাকে সেখানেই কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণেও নির্দেশ দিয়েছি।

    করোনায় যারা মৃত্যুবরণ করছেন তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

    ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ প্রমূখ।ইনকিলাব