‘আমি আজ কাঁদবো না’

    0
    255

    ‘আমি আজ কাঁদবো না’
    -আবছার তৈয়বী

    পনেরই আগস্ট- সারা দেশ আজ কাঁদছে
    বৃষ্টির ফোঁটার মতো, শীতের কুয়াশার মতো
    ঝরে ঝরে পড়ছে কারো কারো চোখের পানি
    কিন্তু আমি কাঁদবো না।

    কেউ করছে লোক দেখানো আয়োজন
    কেউ মায়াকান্না কাঁদছে,
    কারো আজ খুশির শেষ নেই
    কেউ জীবন বয়েসী কেক কেটে আনন্দেতে ভাসছে।
    আমি ভাসবো না- আমি কাঁদবো না।

    নাহ্ আমি কাঁদবো না-
    কাঁদলে আমার সব দুঃখ চোখের জলের সাথে
    ধুয়ে যায়- মুছে যায়,
    কাঁদলে নিমকহারাম বাঙালির প্রতি আমার ঘৃণার স্তুপ
    বরফের মতো গলে যায়-
    তাই আমি কাঁদবো না।

    আমি বিস্ফোরিত নয়নে দেখবো-
    শোক দিবসের নাম করে
    কতো বাঙালি কাঙাল সাজে,
    দেখবো- কতো চাঁদাবাজি হয়-
    কতো গরমিল হয় তাদের কথায় ও কাজে।
    কিন্তু আমি কাঁদবো না।

    আমি অবাক নয়নে দেখবো-
    তোমার বাংলায় আর কতো খুন হয়
    কতো মানুষ পুড়ে ইটের ভাটায়,
    কতো অভাগা মানুষ গুম হয়-
    কতো নিরপরাধ মানুষকে ওরা খাটায়?
    তবুও আমি কাঁদবো না।

    আমি বিস্ময় ভরা চোখে দেখবো-
    কত ফারুকীর লহু ঝরে তোমার সবুজ বাংলায়
    বিচারের বাণী কীভাবে নীরবে-নিভৃতে কাঁদে,
    কত শিশু নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে অকালে ঝরে পড়ে
    কতো মানুষ আটকা পড়ে নিষ্ঠুর আইনের ফাঁদে।
    তারপরও আমি কাঁদবো না।

    আমি বিস্ফোরিত নয়নে দেখবো-
    বাঙালিরা আর কতো নির্মম হতে পারে!
    আর কতো নিষ্ঠুর হতে পারে!
    আর কতো অমানুষ হতে পারে!

    আমি জানি- যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে
    ততোদিন তুমি থাকবে অক্ষয়- অম্লান,
    ভালোবাসায় বা বিরোধিতায় তোমাকে স্মরিবে জাতি
    তোমার অবদান হবে না এতোটুকু ম্লান।

    আমার হাসি পায়- বড্ড হাসি পায়
    যখন দেখি- তোমার কন্যার নামে
    জমির দলিল নিয়ে কোন মন্ত্রী গণভবনে যায়।
    হায়! হায়! সে রিক্সাঅলা রমিজের সাথে টেক্কা দিতে চায়!
    তুমি কি জানো-
    রিক্সাঅলা রমিজের ভালোবাসার ওজন কতো?
    ঠিক ততোটুকু- পুরো বাংলাদেশটার ওজন যতো।

    তোমার ছিল এক চাটার দল-
    যারা শুধু সামনে তোমার তোষামোদ করতো
    পেছনে পাকাতো ষড়যন্ত্রের ঘোঁট,
    যারা তোমার নির্মম হত্যাকান্ডের পর- আশ্চর্য!
    ‘টু’ শব্দটি করেনি, খোলেনি তাঁদের দু’টি ঠোঁট।
    হায়!
    তারা আজ তোমার নামে সিন্নি বিলায়!

    তোমার ছিল এক চোরের খনি-
    সেই চোরের খনিটা বড় হতে হতে একসময়
    তাদের ছা-পোনায় পুরো বাংলাদেশ গেলো ছেয়ে,
    যেন দেশপ্রেমিক আর কেউ হতে পারে না তাদের চেয়ে।
    রিলিফের টিন গরীবের ঘরের ছাদে নয়-
    যায় সেই রাজনীতির চোরদের পুকুরের তলদেশে,
    রিলিফিরের বিস্কিট হাড্ডিসার মুক্তিযোদ্ধার পেটে নয়-
    যায় ঘোড়া আর ছাগলের পেটে- সারাদেশে।

    তোমার দল তোমাকে তাদের দলীয় খাঁচায় বন্দী করে রেখেছে
    তারা ছাড়া কেউই তোমাকে ভালবাসার অধিকার রাখে না,
    বাংলার প্রতি ঘরের প্রতিটি সন্তান তোমাকে ভালোবাসতে চায়,
    কিন্তু তারা দেবে না, দেবে না, দেবে না।

    আমি কাঁদবো-
    আগে তুমি এই অমানুষদের বিচার করো
    এই নিষ্ঠুরতার বিচার করো
    এই নির্মমতার বিচার করো
    এই জোর-জুলুম আর অবিচারের বিচার করো।
    হে বঙ্গবন্ধু- ‘বাংলাদেশের আত্মা’
    তুমি আমায় ক্ষমা করো।

    “কবিতাটি ১৫ আগস্ট উপলক্ষ্যে লিখা ”