আমরা ভিক্ষুক জাতি নাঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

    1
    452

    আমারসিলেট24ডটকম,০৮মেঃ “ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না”বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ লাইনটির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভিক্ষুক জাতি না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। পরমুখাপেক্ষী না হয়ে দেশকে কিভাবে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া যায়, সে চিন্তাই সবাইকে করতে হবে। অন্যের কাছে হাত পাতার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।
    আজ বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের শুরুতেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দেশকে এগিয়ে নেব। আমরা, আর কারো কাছে হাত পাততে চাই না। অর্থনৈতিকভাবে আমরা মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছি। এ অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিনসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানগণ ও সিনিয়র কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিমানবন্দরগুলোর মান উন্নীতকরণ, নিরাপদ বিমান অবতরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছি। এর মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আপগ্রেডেশনের জন্য ৫৩১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ট্যাক্সিওয়ে- লাইটিং সিস্টেম স্থাপন ও বিমানবন্দরের ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নয়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৮৮ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ বিমানবন্দরের রানওয়ের ওভারলেকরণ প্রকল্প আগামী মাসে শেষ হবে। ১৩২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ’র প্রধান কার্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছি।
    শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বিমানের প্রতি এতই আন্তরিক ছিলেন যে, এর লোগো তৈরি এবং চূড়ান্তকরণ তিনি নিজে তদারকি করেন। মাঝখানে ব্যত্যয় ঘটেছিল, দেখলাম ভালো লাগে না। তাই পুরনো লোগোতেই ফিরে গেছি। ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি আকাশপথে পরিবহন সংস্থা হিসাবে বাংলাদেশ বিমানের জন্ম হয়। স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পদক্ষেপের অংশ হিসাবে ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিমান পরিবহন বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। ওই বিভাগসহ জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নামে একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে এটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হিসেবে পুনর্গঠিত হয়েছে। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে ডিপার্টমেন্ট অফ সিভিল এভিয়েশনের অধীনে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের এভিয়েশন কর্মকাণ্ডের সূচনা হয়। যা বর্তমানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
    প্রধানমন্ত্রী  আরও বলেন, বর্তমান অবস্থা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আরো উন্নয়নের জন্য ৫৩১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ট্যাক্সিওয়ে লাইটিং সিস্টেম বসানো এবং বিমানবন্দরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে। ১৮৮ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রানওয়ের ওভারলের প্রকল্প জুন মাসে শেষ হবে। তিনি বলেন, সরকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ে স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে ৫৪৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এমন ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে এই পর্যটন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক বিমান নামতে পারে। যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারটি ‘৭৭৭-৩০০ ইআর’ উড়োজাহাজ বাংলাদেশ বিমানের বহরে যুক্ত হয়েছে। ২০১৫ সালের শেষে দুইটি ‘বোয়িং ৭৩৭-৮০০’ মডেলের উড়োজাহাজ সংগ্রহ করা হবে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যটক আকর্ষণ করতে আমরা নেপাল ও ভুটানের সাথে যৌথ উদ্যোগ নিতে পারি। সেটা কাজে লাগানো উচিত। আমরা কিছু কিছু জায়গা বিদেশি পর্যটকদের জন্য সুনির্দিষ্ট করে দিতে পারি। সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময়ে পর্যটকদের দুর্ঘটনা রোধে আরো সজাগ হওয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কে কোথায় নামতে পারবে, তা স্পষ্ট হওয়া উচিত।
    পর্যটন শিল্পকে আরও বিকাশমান করার উদ্যোগ নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ভিত্তি করে পর্যটন খাতের বিকাশের মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা সম্ভব। সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করছে। সমুদ্র সৈকতে ডেঞ্জার জোনে ডেঞ্জার পিরিয়ডে না নামতে পর্যটকদের অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে বলেন তিনি। ডেঞ্জার জোনো যেন কেউ না নামতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কঠোর হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
    এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এর আগে কোনো সরকার প্রধান এ মন্ত্রণালয়ে আসেনি। এদিকে এ মন্ত্রণালয়ে নিজের প্রথম পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসাবে আমার কিছু দায়িত্ব থাকে। আর সবাই থাকলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তার সরকার বিমানবন্দরগুলোর মান উন্নীতকরণ, নিরাপদ বিমান অবতরণ এবং আন্তর্জাতিকমানের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিমানের কোন কোন রুট লাভজনক হতে পারে, তা খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে বেশি সংখ্যায় প্রবাসী বাঙালিরা থাকে সেখানেও বিমানের কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।